প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোক মোকাবিলা করার উপায়

0
280
Spread the love

চলছে প্রচণ্ড গরম ও তাপদাহ। এই সময়ে প্রয়োজনে অনেকের গরম মোকাবিলা করতে হচ্ছে। প্রচণ্ড এই গরমে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এ সম্পর্কে জানা থাকলে আমরা হিট স্ট্রোক থেকে সহজেই পরিত্রাণ পেতে পারি। সাধারণত প্রচণ্ড গরমে খেলাধুলার সময়, কৃষকরা বা শ্রমিকরা মাঠে কাজ করার সময় আবার কোনো ব্যক্তি প্রচণ্ড গরমে অতিরিক্ত পরিশ্রম বা বদ্ধঘরে কাজ করার সময় হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে থাকে। একটু সচেতন হলে ও প্রাথমিক কিছু করণীয় বা নিয়ম পালন করলে হিট স্ট্রোক থেকে আমরা সহজেই পরিত্রাণ পেতে পারি। কিন্তু হিট স্ট্রোকে অবস্থা গুরুতর হলে বা শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে প্রাথমিক সেবার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

হিট স্ট্রোক 

প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে সেটাই হিট স্ট্রোক। স্বাভাবিক অবস্থায় রক্ত দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। কোনো কারণে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ত্বকের রক্তনালি প্রসারিত হয় এবং অতিরিক্ত তাপ পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়।

আবার ঘামের মাধ্যমেও একটু শীতলতায় শরীরের তাপ কমে যায়। কিন্তু প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্র পরিবেশে বেশি সময় অবস্থান বা পরিশ্রম করলে তাপ নিয়ন্ত্রণ আর সম্ভব হয় না। এতে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বিপদসীমা ছাড়িয়ে যায় এবং হিট স্ট্রোক দেখা  দেয়। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে এবং শুরুতে সতর্ক না হলে সমস্যা আরও খারাপ হতে পারে। 

কারণসমূহ

গরমে শরীর ক্লান্ত লাগার অন্যতম কারণ হলো হিট স্ট্রোক। দরজা-জানালা দ্বারা বদ্ধঘর বা বদ্ধঘরের মধ্যে বসে সারাদিন কাজ করলে হিট স্ট্রেস হওয়ার সম্ভাবনা  বেশি থাকে। অতিরিক্ত ঘামে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে হিট স্ট্রোক হয় আবার অতিরিক্ত জনসমাগমেও এই হিট  স্ট্রোক হতে পারে।

যেভাবে হিট স্ট্রোক হয় 

তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে বিভিন্ন সংবেদনশীলতা দেখা দেয়। শুরুতে হিট স্ট্রোকের পূর্বে কম মারাত্মক হিট ক্র্যাম্পে অথবা হিট এক্সহসশন হতে পারে। হিট ক্র্যাম্পে শরীরের মাংসপেশিতে ব্যথা হয়, শরীর দুর্বল লাগে এবং প্রচণ্ড পিপাসা পায়। এর পরের ধাপে হিট এক্সহসশনে দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, বমিভাব, অসংলগ্ন আচরণ ইত্যাদি দেখা  দেয়। মানে আপনার হিট স্ট্রোক হয়ে গেছে।

লক্ষণসমূহ:

হঠাৎ প্রচণ্ড গরম অনুভূত হবে, মাথা ব্যথা বা মাথা ঘুরতে পারে, শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে, শারীরিক দুর্বলতা বা ঝিমুনি, বমি বা বমি বমি ভাব, বুক ধড়ফড় করা, কথাবার্তা বা চলাফেরায় অসংলগ্নতা, অনেক সময় গায়ে র‌্যাশ  বের হতে পারে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে  যেতে পারে। কিছু রোগীর খিঁচুনি হতে পারে এবং রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

হিট স্ট্রোক হলে করণীয়

আক্রান্ত রোগীকে দ্রুত শীতল জায়গায় নিয়ে যান। পরনের কাপড় আরামদায়ক বা ঢিলে করে দেন।  সারা শরীর পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে কিংবা গোসলের সুবিধা থাকলে গোসল করিয়ে দিন।  আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্যালাইন, গ্লুকোজ, ডাবের পানি, ফলের রস এগুলো বার বার খাওয়ান।  শ্বাসকষ্ট হলে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে এবং দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।  বাইরে বের হলে ছাতা বা ক্যাপ সঙ্গে রাখুন।  প্রচণ্ড গরম বা রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা জায়গায় থাকুন।  বেশি করে পানি, স্যালাইন, গ্লুকোজ, ডাবের পানি ইত্যাদি তরল খাবার খেতে হবে। এই তরল খাবার শরীরে ডি-হাইড্রেট না হতে সহায়তা করে।

 

লেখক:

ডা. মো. বখতিয়ার

জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষক  এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, খাজা বদরুদজোদা মডার্ন হাসপাতাল, সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে