প্রাইভেট হাসপাতালে সেবার নামে বাণিজ্য

0
807
Spread the love

বগুড়া দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে প্রায় দুই ডজন বেসরকারি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব বেসরকারি প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বেশির ভাগেরই নেই রেজিস্ট্রেশন। অনুমোদনহীন এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করোনাভাইরাসের মধ্যেও চলছে সেবার নামে বাণিজ্য। দুপচাঁচিয়া উপজেলায় সরকারিভাবে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও এ উপজেলায় প্রায় দুই ডজন বেসরকারি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। এসব ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে, ক্লিনিকের সামনে অভিজ্ঞ ও ডিগ্রিপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সাইন বোর্ড লটকানো রয়েছে। একই ডাক্তারের নাম একাধিক ক্লিনিক ও হাসপাতালের সাইন বোর্ডে শোভা পাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে গিয়ে কোনো এমবিবিএস ডাক্তার এমনকি সহকারী কোনো ডাক্তারের দেখা মেলেনি। হাসপাতালে কর্মরত নার্স ও ব্রাদারদের সঙ্গে কথা বলে ডাক্তারদের অবস্থান জানতে চাইলে কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। অথচ সরকারি নিয়মানুসারে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে একজন এমবিবিএস ডাক্তার থাকা বাধ্যতামূলক। প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা ডিজি অফিসে এসব বেসরকারি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনুমোদনের জন্য আবেদনের সময় ডাক্তার রয়েছে বলে আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয় এবং জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে তদন্ত কমিটি সরেজমিন এসব ক্লিনিক ও হাসপাতালে গেলে এমবিবিএস ডাক্তার রয়েছে বলেও জানায়। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাঠামো, উন্নত যন্ত্রপাতী ও প্রশিক্ষিত নার্স-ব্রাদারের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়। পরিচয় গোপন করে ক্লিনিকের দু-একজন ম্যানেজার জানান, উপজেলার প্রায় অধিকাংশ হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কোনো এমবিবিএস ডাক্তার নেই।

ডাক্তারের প্রয়োজন হলে তাদের মোবাইলে কল করলে তারা সরকারি কাজ ফেলে প্রাইভেটকার অথবা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বরাদ্দকৃত সরকারি গাড়ি নিয়ে ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোয় ছুটে আসেন। নির্ধারিত রোগীর চিকিৎসা কিংবা অপারেশন সেরে মোটা অংকের টাকা নিয়ে আবার কারযোগেই জেলা শহর কিংবা কোনো উপজেলায় তার কর্মস্থলে ফিরে যান। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্মরত নার্স-ব্রাদারদের অধিকাংশের কোনো প্রশিক্ষণও নেই। অথচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিভিন্ন মুমূর্ষু রোগীসহ অপারেশনের রোগীগুলো এমবিবিএস ডাক্তারের অনুপস্থিতেই তারাই একমাত্র ভরসা। আবার উপজেলায় এসব প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনেকেরই নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। বছরের পর বছর ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। এসব প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সাইন বোর্ড টানিয়ে চিকিৎসাসেবা ও রোগ নির্ণয়ের নামে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। উপজেলার অত্যাধুনিক দ্বিতল বাসা ভাড়া নিয়ে এসব ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক মালিকরা করোনাভাইরাসকে উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষের সরলতা নিয়ে চিকিৎসাসেবার নামে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছেন বাণিজ্য। স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সরকার নড়েচড়ে বসেছে। বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করছে। বর্তমান সরকার উচ্চপর্যায় থেকে নিম্নপর্যায়ে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির মূল উৎপাটন করে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অপরদিকে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযানেও নেমেছে। ঠিক এমনি মুহূর্তে উপজেলায় চিকিৎসার নামে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা এসব বেসরকারি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেবার নামে বাণিজ্য চললেও, তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান চালাতে এখনো দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আবদুল কুদ্দুস ম ল জানান, উপজেলায় মোট ২৫টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এসব ক্লিনিক ও হাসপাতালকে হালনাগাদ তথ্যাদিসহ অনুমোদন গ্রহণের জন্য ইতিপূর্বে পত্র দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে থেকে ১১টি বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ অনলাইনে তাদের আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও অন্যরা অদ্যাবধি অনুমোদনের জন্য আবেদন করেননি। এসব অনুমোদিত ক্লিনিক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে অচিরেই অভিযান পরিচালনাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে