প্রথমবারের মতো দেশের দুই চিকিৎসক বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করলেন। তার হলেন—ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সাকলায়েন রাসেল ও জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট হাসপাতালের কার্ডিওভাসকুলার সার্জন ডা. জেনজিবুল তারেক।
গতকাল সোমবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা পৌনে ১১টায় দেশের সর্ব দক্ষিণ সীমান্ত টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া সমুদ্র সৈকত থেকে সাঁতার শুরু করে তারা।
মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এবার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেয় ৭৯ সাঁতারু। তবে সাগর উত্তাল থাকায় ২৫ সাঁতারু মাঝপথে থাকা উদ্ধারকারীরা ট্রলারে উঠে যান।
ডা. সাকলায়েন রাসেল বলেন, প্রথম চিকিৎসক হিসেবে আমরা দুজন বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিলাম। আমার লেগেছে ছয় ঘণ্টা ৪১ মিনিট আর ডা. জেনজিবুল তারেকের লেগেছে ছয় ঘণ্টা ৫০ মিনিট।
ডা. সাকলায়েন আরও বলেন, এর আগে ২০১৮ সালে এমন খারাপ আবহাওয়া দেখেছি। এবার তারচেয়েও খারাপ ছিল। এত বড় ঢেউ ছিল যে, অনেক সাঁতারুই অসুস্থ হয়ে গেছেন। তাদের মাঝপথে ট্রলারে উঠিয়ে নেওয়া হয়। চারদিক অন্ধকারও হয়ে গিয়েছিল। আমাদেরকেও ট্রলারে উঠে পড়তে বলেছিলেন আয়োজকরা। কিন্তু আমরা থেমে যাইনি।
আমরা যেহেতু চিকিৎসক, তাই সাঁতারের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে চেয়েছি। দ্বিতীয়ত, সেন্টমার্টিনকে পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এর মতো জায়গাকে রক্ষা করতে হলে সরকার ও জনমানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে। এর পরিবেশগত ভারসাম্যের বিষয়েও সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানান ডা. সাকলায়েন।
‘সেন্টমার্টিন দেশের সবচেয়ে নয়নাভিরাম জায়গাগুলোর একটি। একে রক্ষা করতে না পারলে বিপুল জীববৈচিত্র্য হারাবো আমরা। সেই চিন্তা থেকেও এবারের বাংলা চ্যানেল সাঁতারে অংশ নিয়েছি আমরা।’ বললেন ডা. সাকলায়েন।
সাঁতারের জন্য নিজেকে কীভাবে তৈরি করেছেন প্রশ্নে ডা.সাকলায়েন বলেন, গত ছয় মাস ধরে এর প্রস্তুতি নিয়েছি। এর আগে দু’বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়া সাইফুল ইসলাম রাসেলের (যিনি এবারেও সাঁতারে অংশ নিয়ে সবচেয়ে কম সময়ে চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন) অধীনে প্রস্তুতি নিয়েছি।
আয়োজক লিপ্টন সরকার বলেন— আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে সাঁতারের আয়োজন করা হয়েছে। সাঁতারুরা ফ্রি হ্যান্ডে সাঁতার কেটেছেন। নিরাপত্তার জন্য প্রত্যেকের সঙ্গে একজন করে উদ্ধারকারী ছিল। গত বছর ৪৩ জন অংশ নিয়েছিল। আমরা এ বাংলা চ্যানেল সাঁতারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গেছি।
১৬তম বাংলা চ্যানেল সাঁতারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের ব্র্যান্ড ফরচুন। রেসকিউ পার্টনার হিসেবে ছিল বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। অংশীদার হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড, ইউনাইটেড সিকিউরিটিজ, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড, ষড়জ, ভিসা থিং ও স্টুডিও ঢাকা।
প্রসঙ্গত অ্যাডভেঞ্চার গুরুখ্যাত প্রয়াত কাজী হামিদুল হক সমুদ্র সাঁতারের উপযোগী বঙ্গোপসাগরের এই বাংলা চ্যানেল আবিষ্কার করেন। ২০০৬ সালে প্রথমবার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেন লিপটন সরকার, ফজলুল কবির ও সালমান সাঈদ।