বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস ২০২০

0
938
Spread the love
“সময় নষ্ট আর নয়, এখন হবে ব্যথা জয়”
বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস ২০২০
বাতের ব্যাথায় ১৯ শতাংশ মানুষ স্বাভাবিক কাজ করতে ব্যর্থ হয়। ২০১০ সালের এক গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে তাদের গড়ে প্রায় ১৮ দিনেরও বেশি কাজে অনুপস্থিত থাকতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস’। প্রতি বছর এই দিনটি বাত ব্যাথা বা আর্থ্রাইটিস বিষয়ে সচেতনতার জন্য পালিত হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘বাত ব্যাথা নিয়ন্ত্রণের এখনই সময়’।

এই বিষয়ে সচেতনতা কেন এত জরুরি? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আবু শাহীন এই বিষয়ে মানবজমিনকে জানান, পৃথিবীতে বাত ব্যথা বা আর্থ্রাইটিস মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যার একটি অন্যতম কারণ। এই রোগে মানুষ শারীরিক অক্ষমতার জন্য কাজ করতে পারে না। রোজগার হতে বঞ্চিত হয় বিধায় অনেক মানুষ গরিব হয়ে যায়। রিউমোটোলজি বিভাগ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে মেডিসিনের একটি আধুনিক শাখা। বাংলাদেশে শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগ এ বিষয়ে চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই বিভাগ যথাক্রমে ২০০১ ও ২০১০ সালে বাংলাদেশে বাত ব্যথা রোগের প্রকোপ নির্ণয়ের জন্য দুইটি গবেষণা করে।

গবেষণায় দেখা যায়, শতকরা ২৬ দশমিক ৩ ভাগ (২০০১ সাল) ও ২৬ দশমিক ৫ (২০১০ সাল) ভাগ মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় বাত ব্যথায় ভুগে থাকেন। পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি ভুগে থাকেন। ২০০১ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষের হার ২১ দশমিক ১ শতাংশ ও নারীদের ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ বাত ব্যথায় ভুগেন। আশঙ্কার বিষয় যে, ১০ বছরের ব্যবধানে ২০১০ সালের গবেষণায় দেখা গেছে,  নারীদের হার প্রায় ৩ শতাংশ বেড়ে ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং পুরুষদের হার ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। একই এলাকায় পরিচালিত এই গবেষণা দু’টি হতে দেখা যায়, বাত ব্যথার কষ্টগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রকোপ কোমর ব্যথা বাত ২১ দশমিক ২ শতাংশ ও ২০ দশমিক ১ শতাংশ (২০১০ ও ২০০১ সাল)।  তারপর হাঁটু ব্যথা বাত ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ ও ১৪ শতাংশ (২০১০ ও ২০০১ সাল)। কাঁধের জোড়ার বাত ৭ দশমিক ৪ শতাংশ (২০১০ সাল) ও ১১ দশমিক ৫ শতাংশ (২০০১ সাল), কুঁচকি বা হিপ-এর বাত ৭ দশমিক ১ শতাংশ (২০১০ সাল) ও ১৩ শতাংশ (২০০১ সাল), গোড়ালির বাত ৬ শতাংশ (২০১০ সাল) ও ৭ দশমিক ৭ শতাংশ (২০০১ সাল)।

দুুঃখের বিষয়, গবেষণার বছরে কাজ করতে পারে নাই তার প্রকোপ প্রায় ১৯ শতাংশ (২০১০ সাল) ও ২২ শতাংশ (২০০১ সাল)। গবেষণার ২০০১ সালে মানুষ গড়ে প্রায় ৪৯ দশমিক ৩ (প্লাস মাইনাস ৪৭ দশমিক ৫) দিন কাজে যেতে পারেনি, যা ২০১০ সালের গবেষণায় দেখা গেছে ১৮ (প্লাস মাইনাস ১৫ দশমিক ২) দিন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাত ব্যথা রোগে নারীরা অনেক বেশি আক্রান্ত হন। সময়ের ব্যবধানে নারীদের মাঝে এই প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে। তাই এখনই সময় সবার সচেতন হওয়ার।

বিএসএমএমইউ’র রিউমাটোলজি বিভাগ শিক্ষা সেবা ও গবেষণা দেশ ও  বিদেশে সুপরিচিত। এ যাবৎ ৫০-এর অধিক ডাক্তার এই বিভাগ থেকে রিউমাটোলজিতে এমডি ডিগ্রি লাভ করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে কোনো পদ না থাকায় এই বিশেষজ্ঞদের চিকিৎসা সেবার বিস্তার করানো যাচ্ছে না। এদেশের অনেক মানুষ বাত ব্যথা রোগের জন্য পার্শ্ববর্তী অনেক দেশে গিয়ে অনেক টাকা ব্যয় করেন। কোনো কোনো সময় প্রতারিত হন।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সরকারি-বেসরকারি নানা পর্যায়ে আজ বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস পালন করা হচ্ছে। প্রতি বছর এই দিনটি বাত ব্যথা বা আর্থ্রাইটিস বিষয়ে সচেতনতার জন্য পালিত হয়।

আর্থ্রাইটিস পরিসংখ্যানঃ

৮০% রোগীর চলাচলে সমস্যা, ২৫% রোগীর নিত্যদিনের কাজের সমস্যা, প্রায় ৩৩% অষ্টিওআর্থ্রাইটিসের রোগী ৪৫ বছরের বেশি।

লক্ষণ ও উপসর্গঃ

  •  অস্থিপেশির দুর্বলতা
  •  অস্থি সন্ধিস্থলে ব্যথা
  •  অস্থি সন্ধিস্থল ফুলে যাওয়া
  •  গতিশীলতা হ্রাস পাওয়া

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে