ভারতের মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধিরুভাই আম্বানি হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসাসেবা সহজ করা হয়েছে। এ হাসপাতালে চিকিৎসা পেতে রাজধানীর বনানীতে চালু করা হয়েছে একটি তথ্যকেন্দ্র। বাংলাদেশি রোগীরা এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চাইলে তথ্যকেন্দ্রে যাবতীয় সহযোগিতা পাবেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে প্রধান অতিথি হিসেবে এ তথ্যকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনেক উন্নতি হয়েছে। উন্নতমানের হাসপাতাল হয়েছে, চিকিৎসকদের দক্ষতা রয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু চিকিৎসায় আমরা সেই মানে পৌঁছাতে পারিনি। সেজন্য অনেক রোগী বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান। ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য অনেক রোগী যান। অনেক অভ্যাসবশতও বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের অত্যাধুনিক কোকিলাবেন ধিরুভাই আম্বানি হাসপাতালে বাংলাদেশি অনেক রোগী চিকিৎসার জন্য যান। আমার স্বামী স্ট্রোক করার পর একটা সময় বাংলাদেশে চিকিৎসার শেষ সীমায় পৌঁছে যায়। তখন এখানে আর কিছুই করার ছিল না। এরপর দিল্লি থেকে চিকিৎসকদের একটা টিম এসে তার ব্রেনে অস্ত্রোপচার করেন। এরপর তার ফিজিওথেরাপির জন্য কোকিলাবেন ধিরুভাই আম্বানি হাসপাতালে পাঁচ মাস চিকিৎসা করিয়েছি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি এ হাসপাতালের সেবার মান ও ব্যবস্থাপনা অসাধারণ।’
জানা গেছে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে কয়েক লাখ মানুষ চিকিৎসা নিতে যান। ক্যান্সার, বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট, লিভারসহ বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসার জন্য মধ্যবিত্তদের একটি বড় অংশ ভারতে যান। সেখানে গিয়ে চিকিৎসা নিতে কীভাবে যেতে হবে, কোন হাসপাতালে কী ধরনের চিকিৎসা ভালো হয়- এসব তথ্য পেতে অনেক সময় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। রোগীদের তথ্যপ্রাপ্যতা সহজ করতে ভারতের মুম্বাইয়ের সুনামধন্য কোকিলাবেন ধিরুভাই আম্বানি হাসপাতাল বাংলাদেশে তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। সে অনুযায়ী রাজধানীর বনানীর ১১ নম্বর সড়কে এ তথ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, ভারতের মুম্বাইয়ে কোকিলাবেন ধিরুভাই আম্বানি হাসপাতাল ১৪ বছর ধরে সেবা দিয়ে আসছে। ৭৫০ শয্যার অত্যাধুনিক এ হাসপাতালে রয়েছে সার্বিক চিকিৎসাসেবা। সুপার স্পেশালিটি বিভাগ, ক্যান্সার চিকিৎসা, ওপেন হার্ট সার্জারি, অর্থপেডিক, নাক-কান-গলার বিভিন্ন রোগসহ জটিল অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা রয়েছে এ হাসপাতালে। ১০ লাখের বেশি সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে এ হাসপাতালে। ভারতের শীর্ষ পাঁচ হাসপাতালের অন্যতম এটি বলে জানান চিকিৎসকরা। তারা আরও জানান, বাংলাদেশে তথ্যকেন্দ্র চালু হওয়ায় মুম্বাইয়ের এ হাসপাতালে গিয়ে সহজে সেবা নিতে পারবেন রোগীরা। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে ফলোআপ সেবাও নিতে পারবেন এখান থেকে। বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য রয়েছে পৃথক ডেস্ক। হাসপাতালে চিকিৎসার পাশাপাশি থাকছে বিনামূল্যে আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা। এ ছাড়া আবাসনের ব্যবস্থাও করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. সঞ্জয় পান্ডে জানান, সামাজিক ট্যাবুর কারণে নারীরা গাইনি ও ইউরোলজির সমস্যা প্রকাশ করতে লজ্জা পায়। ফলে তাদের এ সমস্যাগুলো প্রকট আকার ধারণ করে। এ হাসপাতালে নারীদের ইউরোলজি চিকিৎসায় সফলতার গল্প রয়েছে বলে জানান তিনি। শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. সুরেশ রাও বলেন, ‘বর্তমানে শিশুদের হৃদরোগ সমস্যা বাড়ছে। আমি ৩০ বছর ধরে শিশুদের জটিল হার্ট সার্জারি করছি। এ হাসপাতালে শিশুদের হার্ট সার্জারির অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে।’ হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্তোষ শেঠী বলেন, ‘রোগীদের সামাজিক সুরক্ষার দিকে নজর দিয়ে এ হাসপাতাল পরিচালনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে আমাদের হাসপাতালে অনেক রোগী আসে। তাদের তথ্য পেতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই রোগীদের কথা মাথায় রেখে ঢাকার বনানীতে এ তথ্যকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিশ্বমানের হাসপাতাল করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’