করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাই শুধু বাড়ছে না, সংক্রমণের ধরনও দ্রুত পাল্টাচ্ছে। কিছুদিন আগেও দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে সংক্রমণ বেশি ছিল। এখন সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটিই ঢাকায় বেশি। সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে বরিশাল ও সিলেট অঞ্চলে। দেশে এখন সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ২৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সীরা। মৃত্যু এখনো ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যেই বেশি। কিন্তু গত দুই মাসে ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মৃত্যুহারও অনেক বেড়েছে। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের হার অনেক বেশি। নবজাতক থেকে শুরু করে চার বছর বয়সী শিশুরাও উদ্বেগজনক হারে আক্রান্ত হচ্ছে। তার পরও মানুষের মধ্যে সচেতনতা কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা খুবই কম। এসব কারণে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, করোনার অতিমারি অচিরেই লাগামহীন হয়ে পড়তে পারে।
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা এমন পরিস্থিতির কারণে মানুষও অনেকটা হাঁপিয়ে উঠেছে। আবার জীবন-জীবিকার কারণেও অনেকে বেপরোয়া আচরণ করছে। ফল খারাপই হচ্ছে। নবজাতক বা অতি ছোট শিশুরা ঘরের বাইরে একা যেতেই পারে না। বয়স্করা ঘরের বাইরে কমই যায়। অথচ পরিবারের বেপরোয়া অন্য সদস্যদের দ্বারা তারাও বেশি করে আক্রান্ত হচ্ছে। মারাও যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তার পরও মানুষের মধ্যে এই বেপরোয়া ভাব ক্রমেই বাড়বে। অর্থনৈতিক কারণেও মানুষ আরো বেপরোয়া হবে। এখন করোনা প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে, দ্রুত বেশির ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা। সেই চেষ্টাও করা হচ্ছে। টিকা সংগ্রহের জোর চেষ্টা চলছে। টিকা প্রদানেরও গতি বাড়ছে। গত দুই দিন দৈনিক দুই লাখের কাছাকাছি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এই সংখ্যা দৈনিক কমপক্ষে পাঁচ লাখে নিয়ে যেতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সামনে কোরবানির ঈদ। রাস্তায় ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে। ফেরিগুলোতে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। বড় যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যানবাহনেও যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা। একই অবস্থা দেখা যাবে ঈদের পর কর্মস্থলে ফেরার সময়ও। এরই মধ্যে সারা দেশে কোরবানির পশুর হাট জমে উঠেছে। রাজধানীতে সেসব হাটে বেশ কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রায় কিছুই মানা হচ্ছে না। রাজধানীর বাইরের অবস্থা আরো খারাপ। হাটগুলোতে সামাজিক দূরত্ব, হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো তো মানাই হয় না, মানুষ মাস্ক পর্যন্ত পরে না। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোকে এ ব্যাপারে আরো তৎপর হতে হবে। বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, রেলস্টেশন, মার্কেট, শপিং মল—সর্বত্র নজরদারি বাড়াতে হবে। সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনকে হাট-বাজারে মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেকোনো মূল্যে অতিমারির ভয়ংকর ছোবল আমাদের রুখতেই হবে।