আমাদের দেশের ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ক্যান্সার চিকিৎসা নিয়ে নানান রকমের ভয়ভীতি বিদ্যমান। এই ভয় থেকেই দেখা যায় যে, অনেক রোগী ক্যান্সারের চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করেন এবং চিকিৎসা না নিয়েই মৃত্যুবরণ করেন। তাই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ক্যান্সার চিকিৎসা নিয়ে যে ভয় সেটা দূর করাটা খুব জরুরি।
এ নিয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে-
১। ক্যান্সার কী, তার কী কী চিকিৎসা রয়েছে এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াগুলো কী। চিকিৎসা করলে পরে কী ধরনের ফলাফল আমরা আশা করছি এই জিনিসগুলো নিয়ে মানুষকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। রোগীদের মাঝে আস্থা ফিরে আসবে। রোগীরা চিকিৎসা নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হবে।
২। সারা দেশে কিছুসংখ্যক ক্যান্সার পরামর্শ কেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে- যেখান থেকে রোগীরা ক্যান্সার বিষয়ক সমস্ত তথ্য গ্রহণ করতে পারবে। পাশাপাশি যারা ক্যান্সার সারভাইভার রয়েছেন তারা যদি সেখানে একত্রিভূত হন, তাদের মুখ থেকে যখন ক্যান্সার রোগীরা তাদের সফলতার গল্প শুনবে তখন তারা আরও বেশি মনোবল পাবেন।
৩। চিকিৎসক বা সেবা দানকারী এবং রোগীদের মধ্যে ক্যান্সার বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা আরও বাড়াতে হবে । মানুষ যখন অনেক কিছু বুঝতে পারে না কিংবা জানতে পারে না, তখনই তার মধ্যে বেশি পরিমাণে শঙ্কা বিরাজ করে। কোনো একটা কঠিন বিষয়ও যদি মানুষ সহজ করে বুঝতে পারে, জানতে পারে তাহলে তার ভয়টা কিন্তু অনেকটাই কেটে যায়।
৪। ক্যান্সারের চিকিৎসা পরিকল্পনাতে পেলিয়েটিভ কেয়ারকে যদি একত্রিভূত করা যায় তাহলে কিন্তু ক্যান্সার রোগীদের জীবনের সামগ্রিক গুণগতমানের অনেক উন্নয়ন করা সম্ভব।
৫। ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে শারীরিক অবস্থার পাশাপাশি মানসিক অবস্থারও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ক্যান্সার শব্দটি শোনার সাথে সাথে অনেক রোগী মানসিকভাবে অনেকটাই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। তাই তাদের মানসিকভাবে সাপোর্ট দেওয়ার পাশাপাশি সামাজিকভাবেও যদি সাপোর্ট দেওয়া যায় তাহলে তাদের চিকিৎসা গ্রহণ করাটা অনেকটাই সহজ হয়ে ওঠে।
৬। একজন ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসার যে দীর্ঘ পথ সেখানে চিকিৎসকের পাশাপাশি পরিবারের গুরুত্বও কিন্তু অপরিসীম। তাই ক্যান্সার চিকিৎসা চলাকালীন পরিবার একজন ক্যান্সার রোগীর পাশে থাকবে, তাকে সাহস জোগাবে- এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারটি আমাদের সব সময় মাথায় রাখতে হবে।
৭। ক্যান্সারের চিকিৎসা একটি দীর্ঘ সময়ের এবং অনেক বড় ব্যয়ের একটি চিকিৎসা। বাংলাদেশের বেশিরভাগ ক্যান্সার রোগীর পরিবারের পক্ষেই এ চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়াটা বেশ দুষ্কর । আমাদের তথা সমাজকেই দায়িত্ব নিতে হবে, ভাবতে হবে কিভাবে এটা আরও সহজ থেকে সহজতর করা যায়।
উপরে উল্লিখিত উপায়গুলো বাস্তবায়ন করা গেলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা বাংলাদেশের ক্যান্সার রোগীদের যে ভয় এবং দুশ্চিন্তাগুলো রয়েছে সেগুলো সামান্যতম হলেও দূর করতে সক্ষম হবে এবং ক্যান্সার রোগীদের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হবে বলে আমার বিশ্বাস।
লেখক: ডা. আরমান রেজা চৌধুরী
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ
এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকা।