সাইনোসাইটিসের মাথাব্যথা বুঝবেন কীভাবে?

0
347
Spread the love

সবাই কম বেশি মাথাব্যথার সমস্যায় ভোগেন।  দু:শ্চিন্তা থেকে মাঝেমধ্যে মাথা ধরে আসে।  আবার রক্তচাপে হেরফের ঘটলেও মাথা-ঘাড়ে তীব্র যন্ত্রণা হয়।  মাথাব্যথা স্থায়ী হয়ে গেলে বিপদ।

সাইনোসাইটিসের মাথাব্যথায় অনেকে ভুগে থাকেন।  এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ইমপালস হাসপাতালের নাক, কান গলা রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. জাহীর আল-আমিন।

মাথাব্যথার ৩০০-এর বেশি কারণ থাকলেও সাধারণ কারণগুলোকে প্রধানত তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়-

* মস্তিষ্কের স্নায়ু ও শিরা সংক্রান্ত (নিউরোভাসকুলার) মাথাব্যথা : এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটা দেখা যায় তা হল মাইগ্রেন এবং দুশ্চিন্তাজনিত মাথাব্যথা।

* চোখ সংক্রান্ত মাথাব্যথা।

* সাইনাসজনিত মাথাব্যথা।

যে কোনো ক্রনিক বা দীর্ঘদিনের সমস্যা- দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ ও শারীরিক দুর্বলতার কারণে হয়ে থাকে।  এ কথা ক্রনিক মাথাব্যথার বেলায়ও প্রযোজ্য।  অন্যান্য শারীরিক দুর্বলতা ও দুশ্চিন্তায় এর বৃদ্ধি বা প্রকাশের কারণ হতে পারে।  ক্রনিক মাথাব্যথার সঙ্গে সাইনাস ও নাকের লক্ষণ যেমন- নাক বন্ধ, সর্দি, জ্বরজ্বর ভাব জড়িত, সেসব মাথাব্যথা মূলত সাইনাসজনিত কারণেই হয়ে থাকে।

নাক ও চোখের চারপাশে হাড়ের ভেতরে কিছু বায়ুকোষ বা কুঠুরিকে সাইনাস বলা হয়।  নাকের ও সাইনাসগুলোর আবরণী একই এবং সাইনাসগুলো নাকের আবরণীর সম্প্রসারিত অংশ দিয়ে আবৃত।  এজন্য নাকে কোনো প্রদাহ হলে একই সমস্যায় সাধারণত সাইনাসও আক্রান্ত হয় এবং নাক ও সাইনাসের সমস্যাগুলো মূলত পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নাক ও সাইনাসজনিত রোগ অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা যার বার্ষিক হার শতকরা প্রায় ১৪ ভাগ। যেখানে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে এটিই অন্যতম প্রধান ক্রনিক রোগ।

যেহেতু নাক ও সাইনাসের আবরণী শ্বাসনালি এবং ফুসফুসের আবরণীর সঙ্গে সম্পর্কিত এবং গঠনগত দিক থেকে উভয়ে একই ধরনের সেহেতু প্রদাহজনিত কোনো সমস্যা দু’দিক থেকেই শুরু হতে পারে অথবা যে কোনো এক দিকে প্রদাহ শুরু হলে অন্যদিকেও তা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে অথবা এক অংশের সমস্যা অন্য অংশের সমস্যাকে প্রভাবিত করতে পারে।

উপসর্গ 

মাথাব্যথা, মাথা ভার ভার লাগা ও মাথা বদ্ধভাব, নাক বন্ধ, নাক ভারি হয়ে থাকা, নাক দিয়ে অবিরাম বা ঘনঘন পানি পড়া, নাকে গন্ধ না পাওয়া, মাঝে মাঝে বেশ জ্বর ওঠা বা সবসময় হালকা-হালকা জ্বর ভাব থাকা, সবসময় শারীরিক দুর্বলতা, নাক ডাকা ও ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট বা দম বন্ধ হয়ে আসা বা স্লিপ এপনিয়া সিনড্রোম এগুলো সাধারণ উপসর্গগুলোর মধ্যে অন্যতম।

কারণ 

ভাইরাসজনিত সংক্রমণই প্রধান কারণ।  এছাড়া অ্যালার্জি এবং নাকের কাঠামোগত কারণে নাক বন্ধ হয়ে থাকে।  যেমন- নাকের হাড় বাঁকা (ডিএনএস), নাকের পলিপ, নাকের টিউমার ইত্যাদি। অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে ক্রনিক ইনফেকশন টিবি, সিফিলিস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

সাধারণ প্রতিরোধ

* ধুলা, ধোঁয়া, ঠাণ্ডা থেকে দূরে থাকা যা ক্রনিক সাইনোসাইটিসের প্রাথমিক কারণ।

* বাড়িতে কার্পেট ব্যবহার না করা।

* ফোম দিয়ে তৈরি আসবাবপত্র ব্যবহার না করা।

* কুসুম গরম লবণ পানি দিয়ে দিনে কয়েকবার নাক পরিষ্কার করা (এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চিমটি লবণ), অথবা গরম ভাপ নেওয়া।

* নাকের ভেতর কোনো কেমিক্যাল যেমন- বেনজিন, মেন্থলজাতীয় পদার্থ ব্যবহার না করা।

ইএনটি পরীক্ষা : সার্বিকভাবে নাক, কান এবং গলার পরীক্ষা করানো এ ব্যাপারে অত্যাবশ্যক।

ল্যাবরেটরি পরীক্ষা (ইনভেস্টিগেশন)

* সাইনাসের এক্স-রে : পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে আজকাল এ পরীক্ষা সাধারণত করা হয় না।

* সাইনাসের সিটিস্ক্যান (যাতে বিশেষ কিছু আঙ্গিকের ছবির প্রয়োজন হয়) : আধুনিক বিশ্বে ক্রনিক সাইনাস সমস্যায় অত্যাবশ্যকীয় একটি পরীক্ষা।

* অন্যান্য ল্যাবরেটরি পরীক্ষা সাধারণ প্রয়োজন অনুযায়ী করা হয়ে থাকে।

জটিলতা

* নাক থেকে ইনফেকশন অতি সহজে সাইনাস ও আশপাশের অন্যান্য জায়গা যেমন- চোখ, চোখের স্নায়ু, ব্রেইন, দাঁত, মুখমণ্ডল, খাদ্যনালির উপরিভাগ, শ্বাসনালি এসব জায়গায় ছড়াতে পারে এবং সেসব জায়গায় মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।

* চোখের জটিলতা : চোখের আবরণীর প্রদাহ, চোখের প্রদাহ, চোখের পর্দার প্রদাহ ইত্যাদি।

* মস্তিষ্কের জটিলতা (করোটির ভেতরের জটিলতা) : মেনিনজাইটিস (ব্রেইনের চারপাশের আবরণীর প্রদাহ), এনকেফালাইটিস, ব্রেইন অ্যাবসেস ইত্যাদি।

* মুখমণ্ডলের হাড় ও অস্থিমজ্জার প্রদাহ অসটিওমায়োলাইটিস।

* অন্যান্য জটিলতা যেমন- ফেসিয়াল সেলুলাইটিস (মুখমণ্ডলের প্রদাহ), মুখ ফুলে যাওয়া, দাঁতব্যথা।

* মুখ ও সাইনাসের মধ্যে অস্বাভাবিক রাস্তা তৈরি হওয়া ওরো-এন্টালফিস্টুলা, খাদ্যনালির প্রদাহ, শ্বাসনালির প্রদাহ ইত্যাদি।

চিকিৎসা

* টপিক্যাল নেসাল স্টেরয়েড-নাকের ঝিল্লির প্রদাহের স্থিতিশীলতার জন্য অত্যাবশ্যক।

* নাকের ডিকনজেস্টেন্ট (নাকের সস্তা ড্রপ) খুব স্বল্প সময়ের জন্য ব্যবহার করা উচিত।  দীর্ঘ সময় ব্যবহার করলে নাকের সমস্যার জটিলতা সৃষ্টি হয়।  এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

* নাসারন্ধ্র পরিষ্কার খাবার ওষুধ সিউডোএপিড্রিন দীর্ঘ সময় ব্যবহার করা যেতে পারে।

* নিদ্রাকারক নয় এমন এন্টিহিস্টামিন উপসর্গ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

* এন্টিবায়োটিক- এরোবিক এবং এনেরোবিক উভয় ব্যাকটিরিয়ার ওপর কাজ করে এমন এন্টিবায়োটিকের স্বল্পমেয়াদি কোর্স মাঝে মাঝে প্রয়োজন হতে পারে।

অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত।

সার্জিক্যাল চিকিৎসা

ওষুধ দিয়ে সম্পূর্ণ নিরাময় না হলে অথবা আশানুরূপ নিরাময় না হলে কিংবা ঘনঘন ওষুধের প্রয়োজন হলে বা এ এলাকায় কাঠামোগত কোনো ত্রুটি থাকলে অপারেশনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন ধরনের সার্জিক্যাল চিকিৎসার মধ্যে নাকের কটারি, এসএমডি, টার্বিনেস্টেমি বা সেপ্টোপ্লাস্টি অন্তর্ভুক্ত। এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি অতীতের সব চিকিৎসা পদ্ধতির ঊর্ধ্বে স্থান নিয়ে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। উন্নত বিশ্বে বর্তমানে ক্রনিক সাইনাসের সমস্যায় এটি একমাত্র নির্ভরযোগ্য সার্জিক্যাল চিকিৎসা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে