স্ট্রোক কেন হয় ও করনীয়

0
4
Spread the love

বিশ্ব স্ট্রোক দিবস -২০২৪

বিশ্ব স্ট্রোক দিবস প্রতি বছর ২৯ অক্টোবর পালিত হয়, যার মূল লক্ষ্য হলো স্ট্রোক সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এর ঝুঁকি ও প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করা। ২০২৪ সালের প্রতিপাদ্য গ্রেটার দেন স্ট্রোক  ,  দিবসটির থিমে  সময়মতো চিকিৎসার গুরুত্ব এবং সচেতনতার মাধ্যমে স্ট্রোক প্রতিরোধের ওপর জোর দেওয়া হয়।
স্ট্রোক এমন একটি অবস্থা যেখানে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয়, যা দ্রুত চিকিৎসা না পেলে মারাত্মক হতে পারে। বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান, এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা স্ট্রোকের বড় কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে। প্রায় ২০ লাখ মানুষ এ রোগে ভুগছে, এবং ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।
এই দিবস পালনের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করে স্ট্রোকের আগাম সতর্কতা নেওয়া, দ্রুত চিকিৎসা প্রাপ্তি, এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার দিকে উৎসাহিত করা হয়।
তাই আসুন জেনে নিই স্ট্রোক কেন হয় ও হলে করনীয় সম্পর্কে
স্ট্রোক কী?
স্ট্রোক হচ্ছে মস্তিষ্কের একটি গুরুতর অবস্থা, যেখানে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এই বাধা যদি দ্রুত অপসারণ না করা যায়, তাহলে অক্সিজেন ও পুষ্টির অভাবে মস্তিষ্কের কোষগুলো মারা যায়, যার ফলে শরীরের বিভিন্ন কার্যকলাপে প্রভাব পড়ে। এটি সাধারণত দুই ধরনের হয়:
1.ইস্কেমিক স্ট্রোক: রক্তনালিতে ব্লকেজের কারণে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে ঘটে।
2.হেমোরেজিক স্ট্রোক: মস্তিষ্কে রক্তনালি ফেটে রক্তক্ষরণের কারণে হয়  ।
স্ট্রোক কেন হয়?
স্ট্রোকের প্রধান কারণগুলো হলো:
•উচ্চ রক্তচাপ: স্ট্রোকের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ কারণ।
•ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরল: রক্তনালিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করে ব্লকেজ তৈরি করে।
•ধূমপান ও মদ্যপান: রক্তনালির ক্ষতি এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।
•অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: শারীরিক অনুশীলনের অভাব, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ।
•বংশগত কারণ: পরিবারে স্ট্রোকের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বাড়ে  ।
স্ট্রোকের তাৎক্ষণিক চিকিৎসাঃ
স্ট্রোকের ক্ষেত্রে “সময়ই জীবন”, তাই উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
•FAST পদ্ধতি (Face, Arms, Speech, Time) ব্যবহার করে স্ট্রোক চিহ্নিত করতে হয়:
•মুখের এক পাশ ঝুলে পড়া।
•হাত তুলতে না পারা বা দুর্বলতা।
•কথা বলায় অস্পষ্টতা।
•এই উপসর্গগুলো দেখলে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিতে হবে।
•ইস্কেমিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে: ৪.৫ ঘণ্টার মধ্যে টিসিএ (tPA) নামে একটি ওষুধ দিলে ব্লক অপসারণে সহায়তা করে।
•হেমোরেজিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে: রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে শল্যচিকিৎসা বা ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে  ।
পুনর্বাসন চিকিৎসাঃ
স্ট্রোক থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য পুনর্বাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। এতে অন্তর্ভুক্ত:
•ফিজিওথেরাপি: শরীরের পেশি ও চলাচলের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
•স্পিচ থেরাপি: কথা বলা ও যোগাযোগের দক্ষতা উন্নত করে।
•অকুপেশনাল থেরাপি: দৈনন্দিন কাজের দক্ষতা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
•মানসিক সাপোর্ট: হতাশা বা উদ্বেগ মোকাবিলায় মানসিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
•স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও ডায়েট মেনে চলা: পরবর্তী স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় ।
প্রাথমিক চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম ঠিকমতো অনুসরণ করলে স্ট্রোকের পরে জীবনের মান উন্নত করা সম্ভব।
লেখকঃ
ডা. এম ইয়াছিন আলী 
চেয়ারম্যান ও চীফ কনসালটেন্ট 
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল 
ধানমন্ডি , ঢাকা ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে