স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বতন্ত্র শাখা, যা বিশ্বব্যাপী একটি সমাদৃত স্বাস্থ্য ও পুনর্বাসন পেশা। যেসব ব্যক্তির জন্ম-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে শারীরিক গঠনগত, রোগজনিত অথবা আঘাতজনিত কারণে মনের ভাব প্রকাশ অর্থাৎ কথা বলা/শোনা/উচ্চারণ করা, ভাষা ব্যবহার এবং খাবার চিবানো ও খাদ্য গলঃধকরণের যাবতীয় সৃষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হয়, তারা স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি চিকিৎসাসেবা বা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন।
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০০৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অধীন সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজডের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউটে (বিএইচপিআই)’ এক বছর বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপসহ ৫ বছরমেয়াদি ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি কোর্সটি চালু হয়। এই কোর্সটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য একজন শিক্ষার্থীর মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে বাধ্যতামূলক জীববিজ্ঞানসহ নূ্যনতম জিপিএ ৭ নিয়ে পাস করতে হবে এবং ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে উত্তীর্ণ হতে হবে। ৫ বছরের কোর্সে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অ্যানাটমি ও ফিজিওলজির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পাশাপাশি আরও অনেক বিশেষায়িত বিষয়ে পাঠদান করানো হয়। এই পুরো কারিকুলামটি ৩৮টি মডিউলে বিভক্ত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে বাক, শ্রবণ, ভাষা ও খাবার গলাধঃকরণজনিত সমস্যার প্রকৃতি নির্ণয়, পরিমাপ, নির্ধারণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি এবং ব্যবস্থাপনা শেখানো হয়। এর পাশাপাশি প্রতি বছর ৩-৪ মাস প্রায়োগিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়, যা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ক্লিনিক্যাল স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে করানো হয়। অর্থাৎ একজন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট হওয়ার জন্য আপনার এই ৩৮টি বিষয়ে পৃথকভাবে পাস, ক্লিনিক্যাল পেল্গসমেন্ট পাস এবং সে সঙ্গে এক বছরের ইন্টার্নশিপের চারটি দক্ষতা অর্জন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। অতএব মেডিকেল সম্পর্কিত বিষয়গুলোর পাশাপাশি একজন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি শিক্ষার্থী অনেক বিশেষায়িত বিষয়ে তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক উভয় বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে থাকেন। একটি প্রফেশনের ও প্রফেশনালদের উন্নতির জন্য গবেষণা অন্যতম ভূমিকা পালন করে থাকে, সেখানে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপির শিক্ষার্থীরা গবেষণা করার সুযোগ পাচ্ছেন এবং নতুন নতুন গবেষণার মাধ্যমে প্রফেশনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭ ভাগেরও অধিক মানুষ বিভিন্ন প্রতিবন্ধিতার শিকার।
এই প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের কথা-ভাষা-যোগাযোগে বিলম্ব/বৈকল্য এবং খাবার চিবানো ও খাবার/পানি গলাধঃকরণের সমস্যা আছে। তাই এই পরিসংখ্যান থেকে ধারণা করা যায়, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টের চাহিদা আসলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক ব্যাপক। পাসকৃত স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টরা সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও, বিশেষায়িত স্টু্কল, বিভিন্ন হাসপাতালে সুনামের সঙ্গে স্বাধীনভাবে প্র্যাকটিস করে যাচ্ছেন। স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি পেশাজীবী হতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন:স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি বিভাগ, বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউট,সিআরপি, চাপাইন, সাভার, ঢাকা।
ওয়েবসাইট ::http://www.bhpi.edu.bd