২০ শতাংশ হার্টের রিং বিনামূল্যে দেওয়া হবে

0
165
Spread the love

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ২০ শতাংশ হার্টের রিং (স্টেন্ট) বিনামূল্যে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, শুনেছি অধিকাংশ রোগীকে তাদের ভিটামাটি বিক্রি করে এসে রিং লাগাতে হয়, ভাল্ব প্রতিস্থাপন করতে হয়। আমরা রোগীদের সুবিধার্থে খুব শীঘ্রই এই হাসপাতালে ২০ শতাংশ স্টেন্ট বিনামূল্যে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। এমনকি এক পর্যায়ে এই হাসপাতালে সব স্টেন্টই বিনামূল্যে দেব।

মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা জেনেছি জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে বছরে ৯ হাজার স্টেন্ট লাগানো হয়। এখানে মাত্র ৬০০ স্টেন্ট সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়, যা পরিমাণে খুবই কম। সব স্টেন্ট হয়তো এখন ফ্রি দিতে পারব না, তবে চেষ্টা করব যেন বছরে অন্তত ২০ শতাংশ স্টেন্ট (২ হাজার) দেওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে দ্রুতই এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
তিনি বলেন, সারা দেশে বছরে ৩৫ হাজার স্টেন্ট ব্যবহার হয়। এর মধ্যে হৃদরোগ হাসপাতালে যেসব স্টেন্ট রোগীরা পায়, আমরা খুবই সুলভ মূল্যে সেগুলো দেওয়ার চেষ্টা করি। এসবের মধ্যে বর্তমানে ৬০০ স্টেন্ট ফ্রি দেওয়া হয়, এটা খুব বেশি নয়। সব হয়তো এখনি ফ্রি করতে পারব না। চেষ্টা করবো যেন অন্তত ২০ শতাংশ স্টেন্ট (২০০০) যেন দেওয়া যায়, যেগুলোর মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এটা বেশি টাকা নয়। এক সময়ে আমরা এই হাসপাতালে সব স্টেন্টই বিনামূল্যে দেওয়া শুরু করব।
জাহিদ মালেক বলেন, দেশে প্রায় ৭০ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয় অসংক্রামক রোগে। এর মধ্যে ২০ শতাংশই কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে। দেশে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে দেড় লাখ, প্রতি মাসে ১২ হাজার, দৈনিক ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়। আমরা করোনায় ১০-২০ জন মারা গেলেই সেটিকে বড় করে দেখি কিন্তু দৈনিক যে হৃদরোগে এত সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, সেটি আমরা খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি না।
সচেতনতায় গুরুত্বারোপ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা যদি নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করি, ওজন কম রাখি, স্ট্রেচ কম  নেই, জীবন ব্যবস্থাকে উন্নত করি, ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি, তাহলে হার্টে ব্লক ঠেকানো যাবে। হার্টে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলেই হার্টে ব্লক দেখা দেয়। এগুলো এখন সব মানুষই জানে। তবে মানার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছি।
হৃদরোগ হাসপাতালের সেবা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিদিন এই হাসপাতালে ২০০-২৫০ রোগী ভর্তি হয়। আউটডোরে ১২০০ জন রোগী দৈনিক সেবা নেয়। অথচ আগে হার্টের সার্জারির জন্য রোগীদের আশপাশের দেশে চলে যেতে হতো কিন্তু এখন হৃদরোগ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা হচ্ছে। বিদেশে একটা হার্টের সার্জারি করতে ১০-১৫ লাখ টাকা খরচ হয়, সিঙ্গাপুরে ২০-২৫ লাখ টাকা লেগে যায়। অথচ বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় লাখে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা চারটি সংক্রামক রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছি। এগুলো হলো- পোলিও, টিটেনাস, ফাইলেরিয়াসিস, কালাজ্বর। বিশ্বে প্রথম বাংলাদেশ কালাজ্বর মুক্ত হয়েছে। এজন্য করোনার মধ্যে আমাদের অনেক কাজ করতে হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তিন বছরের রিপোর্ট দেখেছে।
জাহিদ মালেক বলেন, শেরেবাংলা নগর এলাকাটি একটি মেডিক্যাল হাব। অনেকগুলো বড় ইনস্টিটিউট আছে। শিশু হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, হৃদরোগ হাসপাতাল হয়েছে। সবগুলো ইনস্টিটিউটকে একত্র করতে অভ্যন্তরীণ একটি রোড তৈরির যে প্রস্তাবনাটি এসেছে, এটি খুবই যৌক্তিক। আমি আমার অবস্থান থেকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলনসহ আরও অনেকে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে