অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে আজকাল তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাড়ছে নানা শারীরিক সমস্যা। বিশেষ করে থাইরয়েড ও স্থূলতার মতো রোগের প্রকোপ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। শরীরে বিপাকের গতি ও হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে আয়োডিন নামের এক ক্ষুদ্র কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খনিজের ভূমিকা অপরিসীম। চলুন, জেনে নিই কেন দরকার আয়োডিন।
থাইরয়েড গ্রন্থি আয়োডিনের সাহায্যে এমন হরমোন তৈরি করে, যা শরীরের শক্তি উৎপাদন, তাপমাত্রা, হৃদস্পন্দন ও বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। আয়োডিনের ঘাটতি হলে থাইরয়েড সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, যার ফলে দেখা দেয় হাইপোথাইরয়েডিজম, অতিরিক্ত ক্লান্তি, ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যা।
লবণ খাওয়া কমলে আয়োডিন ঘাটতি
শরীরে আয়োডিনের চাহিদা মেটানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো আয়োডিনযুক্ত লবণ খাওয়া। কিন্তু হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে নুন কমিয়ে দেন বা বাদ দেন। এর ফলেই দেখা দেয় আয়োডিনের ঘাটতি।
কিভাবে মেটাবেন আয়োডিনের অভাব
দুগ্ধজাত পণ্য
দুধ, দই ও চিজ আয়োডিনের অন্যতম ভালো উৎস। গোরুর খাদ্য ও দুগ্ধ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত আয়োডিনের কারণে এই খাদ্যগুলিতে প্রাকৃতিকভাবে আয়োডিন থাকে। স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে লো-ফ্যাট বা অর্গানিক দুধ বেছে নিতে পারেন।
মাছ ও সামুদ্রিক খাবার
সামুদ্রিক মাছ যেমন কড, টুনা, চিংড়ি, ইলিশ ও স্যামন মাছে রয়েছে প্রচুর আয়োডিন। পাশাপাশি এসব মাছে থাকা ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ডিম
একটি মাঝারি আকারের ডিম, বিশেষ করে কুসুম, আয়োডিনের ভালো উৎস। এতে থাকা প্রোটিন ও ভিটামিন ডি শরীরের শক্তি ও বিপাকক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক।
আয়োডিনযুক্ত লবণ
যদি খাদ্যতালিকায় প্রাকৃতিক আয়োডিনের উৎস কম থাকে, তবে সামান্য পরিমাণে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করতে পারেন। এক চিমটে লবণ দৈনিক চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট। তবে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে সাবধান, কারণ এতে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়।
সি-উইড বা সামুদ্রিক শৈবাল
সি-উইড আয়োডিনের সবচেয়ে সমৃদ্ধ উৎস। কেল্প, নরি বা ওয়াকামে জাতীয় শৈবালে প্রচুর আয়োডিন থাকে। সপ্তাহে এক–দুইবার অল্প পরিমাণে খেলেই দৈনিক প্রয়োজন মিটে যায়। তবে অতিরিক্ত সি-উইড খাওয়া বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে, তাই পরিমিতভাবে খাওয়াই ভালো।
আধুনিক জীবনযাত্রায় থাইরয়েড সমস্যা থেকে দূরে থাকতে হলে খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত আয়োডিন থাকা জরুরি। সামান্য পরিবর্তন আনলেই শরীরের ভারসাম্য ও প্রাণশক্তি বজায় রাখা সম্ভব।


