অক্সিজেন ও আইসিইউ সক্ষমতা

0
613

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত জটিল রোগীদের প্রাণ বাঁচাতে সময়মতো অক্সিজেন সরবরাহ কতটা জরুরি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্তদের, বিশেষত অস্ত্রোপচারের রোগীদেরও অক্সিজেন সাপোর্টের প্রয়োজন হয়।

বস্তুত অক্সিজেন হলো হাসপাতালের একটি অপরিহার্য উপাদান। এর নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের বিষয়টি তাই অত্যন্ত জরুরি। জানা গেছে, সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে আইসিইউ শয্যা আছে এক হাজার ৬৯টি। আর সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ অক্সিজেন প্ল্যান্ট আছে ৩০টিতে। শুধু মডিফাই কন্ট্রোল ব্যবস্থা সংবলিত অক্সিজেন প্ল্যান্ট আছে ৩১টি হাসপাতালে।

অনেক হাসপাতালে আইসিইউ থাকলেও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত নার্সের অভাবে সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হলেও চালু হয়নি। দেশে অক্সিজেনের উৎপাদন সক্ষমতা অনেক কম। এসব কারণে হঠাৎ করোনার রোগী বাড়লে অক্সিজেন ও আইসিইউর প্রাপ্যতা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হয়ে পড়বে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশে অক্সিজেন মজুত থাকলেও করোনার সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘাটতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আগে ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি করা হতো, বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কারণে সেদেশে এখন প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। আমাদের দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে তা সামাল দেওয়া কতটা কঠিন হবে, তা সহজেই অনুমেয়।

আমরা লক্ষ করেছি, লকডাউনজনিত বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে মানুষ ঈদের আগে ‘ঘরে’ ফেরার চেষ্টা করেছে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, তাদের অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে দলে দলে ছুটেছিল প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে। এভাবে ‘ঘরে’ ফেরার কারণে দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশঙ্কা করছেন অনেকে।

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে মানুষ রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে ফিরে এলে একই দৃশ্যের অবতারণা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা না-গেলে দেশে করোনা পরিস্থিতি যে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে, তা বলাই বাহুল্য। দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তা মোকাবিলা করার সক্ষমতা এখনো আমাদের হয়নি। করোনা রোগীর সংখ্যা ভারতের মতো অস্বাভাবিক হারে বাড়লে অক্সিজেন ও আইসিইউ শয্যার ঘাটতি দেখা দেবে।

পাশাপাশি সাধারণ শয্যার চাহিদা মেটানোও সম্ভব হবে না। তা ছাড়া গ্রামাঞ্চলে যদি এটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে সামগ্রিক চিকিৎসাব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। কাজেই এ ধরনের সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি সরকারি পর্যায়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

গ্রামে করোনার সংক্রমণ বাড়লে, বিশেষত ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে অক্সিজেন ও আইসিইউর প্রাপ্যতায় যে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হবে, তা বলাই বাহুল্য। কাজেই যারা ঈদের আগে ‘ঘরে’ ফিরেছেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী তাদের কিছুদিন বাড়িতে অবস্থান করাই নিরাপদ। আর যারা শহরে ফিরে এসেছেন, তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মস্থলে যাওয়া নিশ্চিত করা জরুরি। দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে, অক্সিজেনের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ না-থাকলে চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তাই যে উপায়েই হোক, অক্সিজেনের সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষকে তৎপর হতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে