আইসিইউ নিয়ে হ-য-ব-র-ল

0
721

বিভাগীয় শহর বরিশালে ২৪টি আইসিইউ শয্যা থাকলেও কোনো আইসিইউ বিশেষজ্ঞ ছাড়াই চলছে সেগুলো।

বিশেষজ্ঞের অভাবে সেগুলো দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে একজন অবেদনবিদকে। আর রোগীদের দেখভালের দায়িত্ব পালন করছেন মূলত স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েকজন নার্স। এই সংখ্যাটিও অপর্যাপ্ত।

কোনো যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেলে মেরামত বা সেগুলো প্রতিস্থাপনের মতো দক্ষতাসম্পন্ন কোনো লোক নেই জেলায়। এমনটি হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি করে করতে হয় সমাধান।

এর মধ্যে পাশের জেলা ভোলায় তিনটি আইসিইউ শয্যা ও তিনটি ভেন্টিলেটর মেশিন আর পটুয়াখালীতে পাঁচটি আইসিইউ শয্যা পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু সেখানেও কোনো আইসিইউ বিশেষজ্ঞ নেই। এমনকি শয্যাগুলো স্থাপনের মতো জ্ঞানসম্পন্ন লোকই নেই।

ভোলাকে বলা হয়েছে, শয্যাগুলো স্থাপনে যেন বরিশালের সহযোগিতা নেয়া হয়। পটুয়াখালীকেও একই পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

কিন্তু বরিশাল নিজেই যেখানে ধুঁকছে, সেখানে পাশের দুই জেলাকে কীভাবে সহযোগিতা করা হবে সেটা বুঝতে পারছেন না এখানকার চিকিৎসকরা।

বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে বড় চিকিৎসালয় শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাধারণ ও করোনা ওয়ার্ড মিলিয়ে আইসিইউ শয্যা আছে ১২টি করে মোট ২৪টি।

এর মধ্যে করোনা ওয়ার্ডের একটি আইসিইউ শয্যা বিকল হয়ে গেলেও সেটি মেরামত করা যাচ্ছে না। সেখানে নতুন ভেন্টিলেটর সংযোজন করে চালুর চেষ্টা চলছে।

আরও ১০টি আইসিইউ শয্যা পাঠানো হয়েছে। সেগুলো চালু করা যাচ্ছে না জনবল-সংকটের কারণে।

এ ছাড়া হাসপাতালটির আইসিইউ ইউনিটের জন্য হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে ২২টি, যার মধ্যে সচল রয়েছে ১৪টি। বাকি আটটি এখনও সংযোজন করাই সম্ভব হয়নি।

এই আইসিইউএর পরিপূর্ণ সুবিধা রোগীরা পাচ্ছে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ, ২৪টি শয্যার জন্য নার্সও নেই প্রয়োজনমতো। ১৭ জন নার্স শিফটিং ডিউটি করছেন। তবে দক্ষ চিকিৎসক নেই তাদের পরিচালনার জন্য।

শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটে দায়িত্বরত নাজমুল হুদা বলেন, ‘আমি অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক। এখানে দরকার আইসিইউ স্পেশালিস্ট। আমার একাই নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে ২৪টি বেড। যেটা অসম্ভব।

‘তা ছাড়া বেশির ভাগ রোগীর স্বজনরাই ডাক্তারকে সরাসরি চাচ্ছেন চিকিৎসাসেবায়, যা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। নার্সরাই মূলত সাপোর্টটা দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো টেকনিশিয়ান থেকে শুরু করে কিছুই নেই। কোনো যন্ত্র নষ্ট হলে চিঠি চালাচালি করে অনেক সময় অপেক্ষার পর ঠিক করতে হয়। সম্প্রতি একটি ভেন্টিলেটর নষ্ট হয়েছে, তা ঠিক করতেও চিঠি পাঠিয়ে অপেক্ষা করতে হয়।’

এর মধ্যে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য ১৯ এপ্রিল ভোলায় তিনটি করে আইসিইউ শয্যা ও ভেন্টিলেটর পাঠিয়ে সেগুলো চালু করতে বরিশালের সাহায্য নিতে বলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ভোলায় গিয়ে সহযোগিতা করার কোনো সুযোগ আছে কি না, জানতে বরিশাল আইসিইউর দেখভালের দায়িত্বে থাকা অবেদনবিদ নাজমুল হুদা বলেন, ‘এই হাসপাতালেই যেখানে এই সমস্যা সেখানে বিভাগ থেকে অন্য জেলায় সাপোর্ট দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কেননা, এখানেই জনবল সংকট প্রকট। এই হাসপাতালে আরও ১০টি আইসিইউ বেড এসেছে। সাতটি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা এবং কিছু ভেন্টিলেটর এসেছে। কয়েক দিনের মধ্যে তা-ও চালু হলে আমাদের ওপর চাপ আরও বাড়বে।’

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নিজেদেরই জনবল সংকট। সেখানে করোনা মহামারিতে আমরা অন্য জেলায় কীভাবে সাপোর্ট দেব? নতুন করে জনবল নিয়োগ না দিলে আমাদের এখানেই তো নতুন আইসিইউ ইউনিট চালানো সম্ভব নয়।’

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে পটুয়াখালীতেও পাঁচটি আইসিইউ শয্যা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেখানেও সেগুলো চালানোর লোক নেই।

লোক না থাকলে আইসিইউ শয্যা পাঠানোর কী যুক্তি, এমন প্রশ্নে চিকিৎসা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে জনবল চাহিদা আমাদের কাছে চাওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ভোলা হাসপাতাল এবং পটুয়াখালী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জনবল চাহিদা নিয়ে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। জনবল নিয়োগ হলে এই সমস্যার সমাধান হবে।’

জনবল পাওয়া না গেলে আইসিইউ শয্যাগুলো চালু করা সম্ভব হবে না বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে