আজ বিশ্ব ক্যান্সার দিবস

0
887

বিশ্ব জুড়ে প্রতি বছর 4 ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস হিসাবে পালিত হয়। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এই দিবসটি উদযাপন করা হয়। বিশ্ব জুড়ে ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা ও শিক্ষা প্রসারিত করা এই দিবসের মুখ্য উদ্দেশ্য।

নতুন সহস্রাব্দে ক্যান্সার প্রতিরোধের অঙ্গীকার হিসেবে 2000 সালে 4 ফেব্রুয়ারি বিশ্ব সম্মেলনে প্যারিস চার্টার দ্বারা প্রথম বিশ্ব ক্যান্সার দিবস প্রতিষ্ঠিত ও শুরু হয়।

কিছু তথ্য-

  • বিশ্ব জুড়ে প্রতি বছর ৯.৬ লক্ষ মানুষ ক্যান্সারের কারণে মারা যায় এবং এর সঠিক প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে ২০৩০ সালের মধ্যে সংখ্যাটি দ্বিগুণে  পরিণত হবে।
  • পৃথিবীতে যত সংখ্যক মানুষের ক্যান্সার হয়, তাঁর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ প্রতিরোধ করা সক্ষম।
  • সারা বিশ্ব জুড়ে মৃত্যুর কারণ হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ক্যান্সার।
  • ৭১ শতাংশ ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুতে দায়ী থাকে তামাক, এমনকি ২২ শতাংশ অন্য ক্যান্সারেও আক্রান্তের সঙ্গেও যুক্ত থাকে তামাক।
  • পুরুষেরা সবচেয়ে বেশি ফুসফুস, প্রস্টেট, কোলরেকটাল, পাকস্থলী, যকৃৎ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত স্তন, কোলরেকটাল, ফুসফুস, সারভিকাল এবং থাইরয়েড ক্যান্সার।
  • ভারতে সবচেয়ে বেশী যেসব ক্যান্সারগুলি হয়, সেগুলি হল স্তন, সারভিকাল, মুখগহ্বরের, ফুসফুস এবং কোলরেকটাল ক্যান্সার।

মূল বিষয়বস্তু ২০১৯-২০২১

৩ বছরের জন্য ‘আই অ্যাম অ্যান্ড অ্যাই উইল’ (আমি আছি এবং আমি থাকব) প্রচারাভিযান শুরু হয় 2019 সালে। ‘আমি আছি এবং আমি থাকব’  এই অভিযানের মূল লক্ষ্যই হল সরকারি স্তরে সচেতনতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ক্যান্সার সম্পর্কে ধারনা গড়ে তোলা।

 # আই অ্যাম অ্যান্ড অ্যাই উইল ( আমি আছি এবং আমি থাকব)

আমরা যে হই না কেন, প্রত্যেককেই ক্যান্সার রোধে উদ্যোগী হতে হবে, শুধুমাত্র নিজের জন্য নয়, আমরা যাঁদের ভালবাসি, তাঁদের জন্য, সকল বিশ্ববাসীর জন্য। এটা নিজের কাছে নিজেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময়।

তিন বছরের প্রচার অভিযান-

যখন কোনও প্রচারাভিযান বেশ কয়েক বছর ধরে চলে তখন জনসাধারণের সঙ্গে  মুখোমুখি আলোচনার বা প্রতিক্রিয়া জানার সুযোগ বাড়ে। যা বিশ্বব্যাপী সচেতনতার সুযোগ করে দেয়। আপনিও এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হন। কারণ একসঙ্গে আমরা পরিবর্তন আনতে পারি।

ক্যান্সার কি?

ক্যান্সার হল এক সমষ্টিগত রোগের একটি সাধারণ নাম, যেখানে শরীরের কিছু কোষ বিভিন্ন কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। অপরিশোধিত ক্যান্সার পার্শ্ববর্তী স্বাভাবিক কলার মধ্যে কিংবা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এরফলে সাংঘাতিক অসুস্থতা, প্রতিবন্ধকতা, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

কারণ:

বহু কারণে ক্যান্সার হতে পারে(-শুধুমাত্র একটি কারণেই কোনও মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন না)

  • শারীরিক কার্সিনোজেনস(ক্যান্সার উৎপাদক), যেমন অতিবেগুনি এবং আয়নাইজিং বিকিরণ
  • রাসায়নিক কার্সিনোজেনস(ক্যান্সার উৎপাদক), যেমন অ্যাসবেস্টস, তামাক, এফ্লাটক্সিন (খাদ্য দূষণকারী), এবং আর্সেনিক(একটি পানীয় জল দূষক)
  • জৈবিক কার্সিনোজেনস(ক্যান্সার উৎপাদক), যেমন নির্দিষ্ট ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী যেমন হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস এবং হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস(এইচপিভি) থেকে সংক্রমণ
  • ক্যান্সারের জন্য এজিং বা পক্কতা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ
  • তামাক ব্যবহার, অ্যালকোহল ব্যবহার, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য, এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ক্যান্সারের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।

সতর্ক সংকেত:

  • স্তনের আকার ও আয়তনের পরিবর্তন
  • মূত্র বা মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন
  • সারছে না এমন ক্ষত
  • অস্বাভাবিক রক্তপাত বা শরীরের কোনও খোলা স্থান থেকে রক্ত-ক্ষরণ
  • ক্রমাগত ওজন হ্রাস ও ক্ষুধা-মান্দ্য
  • গিলতে অসুবিধে
  • আঁচিলের সুস্পষ্ট পরিবর্তন
  • বিরক্তিকর কাশি অথবা একটানা কর্কশ কন্ঠ

ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে আপনার কী করা উচিত:

  • বিভিন্ন ধরণের শাক-সব্জি ও ফল, শিম জাতীয় সব্জি,  বাদাম এবং গোটা-শস্য খান।
  • নিয়মিত শরীর-চর্চা করুন।
  • অতিরিক্ত ওজন এড়িয়ে চলুন।
  • নিরাপদ যৌন জীবনযাপন।
  • সিগারেট, বিড়ি, ধুমহীন তামাক সেবন এড়িয়ে চলুন।
  • মদ্যপান কমিয়ে দিন।
  • HPV  ও হেপাটাইটিস-বি প্রতিরোধের টিকা নিন।
  • পরিচিত পরিবেশজনিত কার্সিনজেনস এড়িয়ে চলুন।
  • লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
  • নিয়মিত ক্যান্সারের ও অন্যান্য শারীরিক পরীক্ষা করান।

ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য ২০১০ সালে জাতীয় কর্মসূচী, ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এবং স্ট্রোক (এনপিসিডিএসএস)চালু হয়। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের(এনএইচএম)অন্তর্গত করে মধুমেহ(ডায়াবিটিস), উচ্চ রক্তচাপ ও সাধারণ ক্যান্সারের মত অসংক্রমক রোগের জনসংখ্যা ভিত্তিক স্ক্রিনিং শুরু করা হচ্ছে।

বার্তা-

  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে প্রত্যেকেই নিজেদের পছন্দসই ক্যান্সারবিরোধী জীবন যাপন করতে পারেন।
  • শুরুতেই ক্যান্সার নির্ধারণ করা গেলে জীবন বেঁচে যেতে পারে।
  • ক্যান্সারের সাথে বসবাসকারী মানুষ এবং তাদের তত্ত্বাবধায়করা ক্যান্সার মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারেন।
  • সঠিক সহায়তা পেলে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষরা আবার কর্ম-জগতে ফিরে আসতে পারেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে