উচ্চ রক্তচাপ কমার ২ মিনিটের সমাধান

0
879
Spread the love

সারা পৃথিবীতে প্রায় একশ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা দিন দিন আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্নিষ্টরা। তবে আশার কথা হচ্ছে, ২ মিনিটে ওষুধ ছাড়াই উচ্চ রক্তচাপ কমানো সম্ভব, যা জাপানের এনএইচকে টিভিতে প্রচার হয়েছে সম্প্রতি। নতুন গবেষণায় এ রকম ফলাফল পওয়া গেছে। এটি মোটেই কঠিন কোনো কাজ নয়। শুধু একটু হাতের কসরত। কীভাবে এটা করতে হবে তা একটু পরই বলছি। এর আগে বলে নিই কীভাবে এই প্রক্রিয়া কাজ করে।

আমরা সবাই জানি, আলফ্রেড নোবেল ডিনামাইট আবিস্কার করেছিলেন। ডিনামাইটের অনেক উপকার এবং অপকার দুটিই আমরা জানি। কিন্তু অনেকেই জানি না যে, ডিনামাইট কারখানায় যারা কাজ করত তাদের মধ্যে কিছু শ্রমিক হৃৎপিণ্ডে ব্যথা অনুভব করত। তবে, কারখানায় ঢুকলেই আবার সে ব্যথা দূর হয়ে যেত। কারণটা অনেক পরে জানা গিয়েছিল, ডিনামাইট তৈরি করতে যে নাইট্রোগ্লিসারিন লাগে সেটা হৃৎপিণ্ডের ব্যথা কমায় এবং নাইট্রিক অক্সাইড নামে একটা গ্যাস তৈরি করে। যে জন্য কারখানার মধ্যে যখন শ্রমিকরা থাকত তখন নাইট্রিক অক্সাইড গ্যাস পর্যাপ্ত থাকায় বুকের ব্যথা অনুভব করত না। কিন্তু কেন?

নাইট্রিক অক্সাইড গ্যাস রক্তনালি প্রসারিত করে। ফলে প্রচুর রক্তপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় যেসব শ্রমিকের হৃৎপিণ্ডের সমস্যা ছিল তাদের সেই সমস্যা সাময়িকভাবে দূর হয়েছিল। এই নাইট্রিক অক্সাইড গ্যাস বর্তমান করোনাকালে অনেকের জীবন বাঁচাচ্ছে। কারণ, শ্বাসনালি প্রসারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই গ্যাস। প্রাণী গবেষণায় দেখা গেছে, এই গ্যাস মস্তিস্কে রক্তপ্রবাহ বাড়াতে পারে, যা অ্যালজমেহার রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। এখন গবেষণা চলছে আল্ট্রা সাউন্ড ব্যবহার করে মানুষের মস্তিস্কে নাইট্রিক অক্সাইড বাড়ানো যায় কিনা।

এখন আসা যাক কোন প্রক্রিয়ায় হাতের কসরত করে নাইট্রিক অক্সাইড বাড়ানো যায়। হাত হৃৎপিণ্ড থেকে নিচের লেভেলে রাখতে হবে। সেটা বসেও হতে পারে বা দাঁড়িয়ে। তারপর এক হাত এক হাত করে প্রক্রিয়াটি করতে হবে। দুই হাত একসঙ্গে করলে রক্তচাপ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিছুই না, শুধু হাত একটু শক্ত করে মুষ্ঠি করতে হবে আবার ছেড়ে দিতে হবে। এক সেকেন্ডে একবার করে মিনিটে ৬০ বার। এক হাতের কসরত শেষ হলে সেই হাতকে বিশ্রাম দিয়ে, অন্য হাতে একইভাবে ৬০ বার করতে হবে। এভাবে দিনে সুবিধামতো সময়ে এক বা দু’বার করলেই চলবে।

এভাবে হাতের কসরতের মাধ্যমে রক্তপ্রবাহ বাড়ে। এই বাড়তি রক্তপ্রবাহ রক্তনালিতে নাইট্রিক অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তনালি প্রসারিত হয়ে রক্তের চাপ কমে যায়।

আরও কিছু প্রক্রিয়া আছে রক্তে নাইট্রিক অক্সাইড বাড়ানোর। যেমন- তরমুজ খাওয়া। তরমুজ রক্তে সাইট্রুলিন নামে একটা অ্যামিনো অ্যাসিড বাড়িয়ে দেয়, যেটা পরে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে। এ ছাড়া মাছ, সবজি, চকলেট, বাদাম খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম ও গরম পানিতে বসে গোসল করার মাধ্যমেও রক্তে নাইট্রিক অক্সাইড বাড়ানো যায়।

নাইট্রিক অক্সাইডের আরও কিছু মজার গল্প আছে। অন্য একদিন না হয় সেগুলো করা যাবে। আজ উচ্চ রক্তচাপ নিয়েই আলোচনা সীমাবদ্ধ থাক। আসলে নাইট্রিক অক্সাইড অনেক বড় একটি বিষয়। ১৯৯৮ সালে এই গ্যাসের ওপর গবেষণা করে ফিজিওলজিতে নোবেল প্রাইজ অর্জন করেছিলেন দু’জন বিজ্ঞানী।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে