কিছু প্যারাসাইট বা পরজীবী এমন রোগ তৈরি করে যা হার্টের ক্ষতি করতে পারে ও স্বাভাবিক কার্ডিয়াক ফাংশনে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটাতে পারে। প্যারাসাইটিক ইনফেকশন বা পরজীবীয় সংক্রমণ মানুষের মধ্যে মায়োকার্ডাইটিস সৃষ্টি করতে পারে।
সম্প্রতি অস্কারজয়ী মুভি ‘প্যারাসাইট’ দর্শকশ্রোতাদের হার্ট বা হৃদয় জয় করে নিয়েছে। এ মুভিটি সিনেমাপ্রেমীদের মনে দারুণ আলোড়ন তুলতে পেরেছে। এতো গেল রুপালি পর্দার কথা। কিন্তু বাস্তব-জগতের প্যারাসাইট হার্টের জন্য শুভকর নাও হতে পারে। কিছু প্যারাসাইট বা পরজীবী এমন রোগ তৈরি করে যা হার্টের ক্ষতি করতে পারে ও স্বাভাবিক কার্ডিয়াক ফাংশনে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
প্যারাসাইটিক ইনফেকশন বা পরজীবীয় সংক্রমণ মানুষের মধ্যে মায়োকার্ডাইটিস সৃষ্টি করতে পারে। এ রোগটি হার্টের টিসু্যকে প্রদাহিত করে। প্যারাসাইটের আক্রমণ থেকে পেরিকার্ডাইটিস ও কার্ডিওমায়োপ্যাথিও হতে পারে। পেরিকার্ডাইটিস হচ্ছে হার্টের চারদিকের ঝিলিস্নর প্রদাহ। অন্যদিকে কার্ডিওমায়োপ্যাথি হলো এমন একটা ডিসঅর্ডার যা হার্টের পাম্পিংয়ে বাধা দেয়- এ প্রতিবন্ধকতা থেকে হার্ট ফেইলিউর পর্যন্ত হতে পারে, ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি রিভিউজে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে।
এখানে পাঁচটি প্যারাসাইট সম্পর্কে আলোচনা করা হলো, যারা হার্টের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
টক্সোপস্নাসমা গন্ডিঃ
অতিক্ষুদ্র পরজীবী টক্সোপস্নাসমা গন্ডি থেকে টক্সোপস্নাসমোসিস নামক রোগের উৎপত্তি হতে পারে। বিড়ালের সংস্পর্শে আসলে এ পরজীবী মানুষের শরীরে আসতে পারে। আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) প্রতিবেদনে আছে, প্রতিবছর সারাবিশ্বে প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষের শরীরে এ পরজীবী প্রবেশ করে, যদিও অধিকাংশেরই উপসর্গ ডেভেলপ হয় না। টক্সোপস্নাসমা গন্ডি পরজীবীটি মানুষের শরীরে সারাজীবন থেকে যেতে পারে। জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল মেডিসিন রিসার্চে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টক্সোপস্নাসমা গন্ডির ক্রনিক সংক্রমণ থেকে ক্রনিক হৃদরোগ হতে পারে।
অ্যান্টামিবা হিস্টোলাইটিকাঃ
সিডিসির মতে, এ পরজীবীটি হলো অ্যামিবায়াসিস অথবা অ্যামিবিক ডিসেন্টেরির (অ্যামিবিক আমাশয়) প্রধান কারণ। এ পরজীবী কোলনে প্রদাহ ঘটিয়ে আমাশয় সৃষ্টি করে, যা পেট ব্যথা ও ডায়রিয়া দ্বারা চিহ্নিত করা যায়। বিরলক্ষেত্রে এ প্যারাসাইটিক ইনফেকশন থেকে হার্টে জটিলতা তৈরি হতে পারে- যা অ্যামিবিক পেরিকার্ডাইটিস নামে পরিচিত। অ্যামিবিক পেরিকার্ডাইটিসে পেরিকার্ডিয়াম বা হার্টকে বেষ্টিত থলের মতো ঝিলিস্নতে ফোঁড়া হয়। প্রায় ক্ষেত্রে পেরিকার্ডাইটিস রোগীদের বুকে তীক্ষ্ন ব্যথা অথবা ছুরিকাঘাত প্রকৃতির ব্যথা অনুভূত হয়। উক্ত্যক্ত পেরিকার্ডিয়াম প্রাচীর পরস্পরে ঘর্ষিত হয়ে এ ব্যথার আবির্ভাব ঘটায়।
ট্রাইশিনেলা স্পাইরালিসঃ
ট্রাইশিনেলা স্পাইরালিস হচ্ছে এক প্রকার পরজীবীয় কেঁচোকৃমি- যা বিশ্বের মাংসাশী ও সর্বভুক প্রাণীদের টার্গেট করে। সংক্রমিত প্রাণীর মাংস ভালোভাবে রান্না না করে খেলে এতে সংক্রমিত হতে পারেন। সিডিসির মতে, সংক্রমিত প্রাণীর মাংস থেকে মানুষের শরীরে লার্ভা সিস্ট প্রবেশ করে ট্রাইকিনোসিস নামক রোগ হয়ে থাকে। পাকস্থলীর অ্যাসিড সিস্টটিকে গলিয়ে ফেলে ও লার্ভাগুলো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলো রক্তে প্রবাহিত হয়ে মাংসপেশি ও মস্তিষ্ক কলায় আবাস গড়তে পারে। স্টেট পার্লসের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ট্রাইশিনেলা স্পাইরালিস হৃদকলাতে প্রদাহ ও জীবননাশক অ্যারিদমিয়া বা অনিয়মিত হার্টবিটের কারণ হতে পারে।
ইকিনোকক্কাস গ্রানুলোসাসঃ
ইকিনোকক্কাস গ্রানুলোসাস হচ্ছে একধরনের পরজীবীয় ফিতাকৃমি। ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি রিভিউজে বিজ্ঞানীরা জানান, কুকুর অথবা অন্যান্য কুকুর সদৃশ প্রাণীর মল থেকে এ ফিতাকৃমির ডিম মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে সংক্রমণ হয়ে থাকে। ডিম ফেটে ছয় হুকের ভ্রূণ অন্ত্রের প্রাচীর অতিক্রম করে অর্গানে গিয়ে সিস্ট তৈরি করে। কার্ডিয়াক সিস্ট বিরল হলেও এ পরজীবীর কারণে অনিয়মিত হার্টবিট হতে পারে, হার্টের চারপার্শ্বস্থ থলেতে পানি জমতে পারে, উচ্চ রক্তচাপে চেতনা হারাতে পারে, হার্ট অ্যাটাক হতে পারে এবং এমনকি হঠাৎ করে হার্টের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ট্রাইপানোসোমা ক্রুজিঃ
ট্রাইপানোসোমা ক্রুজি নামক পরজীবী দ্বারা ট্রাইপানোসোমিয়াসিস অথবা চাগাস ডিজিজ হয়ে থাকে। সিডিসির মতে, মশা এবং অন্যান্য সৃষ্টিকারী কীটপতঙ্গের কামড়ে মানুষের শরীরে এ পরজীবীর অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। মায়ো ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাইপানোসোমা ক্রুজিতে আক্রান্ত ৩০% থেকে ৪০% লোকের ক্রনিক চাগাস ডিজিজ সম্পর্কিত হার্টের জটিলতা ডেভেলপ হয়, যেমন- অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, হার্ট অতিরিক্ত প্রসারিত হয়ে কার্যকরভাবে রক্ত পাম্প না হওয়া ও কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউর। ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি রিভিউজে গবেষকরা জানান, অনেক ক্ষেত্রে এ পরজীবীতে সংক্রমিত হওয়ার ১০ থেকে ৩০ বছর পর উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে।
সূত্রঃ যায়যায়দিন