ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা এক মরণব্যাধি

0
730

যক্ষ্মার প্রাদুর্ভাব বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম (প্রথম ভারত)। চিকিৎসা সাফল্য বিবেচনায় যক্ষ্মায় আক্রান্তের ৯৬ শতাংশের উপর নিয়মিত, পরিমিত ও পূর্ণমাত্রায় ওষুধ সেবনে সুস্থ হয়ে যায় (বার্ষিক টিবি রিপোর্ট ২০২০)। সারা দেশের শতভাগ রোগীই ডটস্ (DOTs) সেবার মাধ্যমে ওষুধ সেবন করেন।

চিকিৎসা সাফল্য ২০২২ সালের ইউএন সূচকের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলেও সার্বিক সাফল্যে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে। সাধারণ যক্ষ্মার ১৯ শতাংশ আর ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রোগী এখনো শনাক্ত করা যায়নি (বার্ষিক টিবি রিপোর্ট ২০২০), যা লক্ষ্যমাত্রা পূরণের প্রধান অন্তরায়।

সাধারণ যক্ষ্মার চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রধান দুটি ওষুধ রিফামপিসিন (Rifampicin-Rif) ও আইসোনিয়াজিডের (Isoniazid-INH) প্রতি যে যক্ষ্মার জীবাণু বা সংক্রমণ অকার্যকর বা প্রতিরোধী, তাকেই ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বলা হয়। রোগীর শারীরিক লক্ষণগুলো অন্যান্য সাধারণ যক্ষ্মার মতো থাকলেও ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার রোগী সাধারণত অধিক অসুস্থ আর শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে আসতে পারেন। সাধারণ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ফোর এফডিসি (4FDC) ওষুধের রিফামপিসিন ও আইসোনিয়াজিডের নিষ্ক্রিয়তার প্রমাণ জিন-এক্সপার্ট নামক পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে সঙ্গে কালচার (AFB Culture), লাইনপ্রব এসের (Line Probe Assay-LPA) ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা নিশ্চিত করা হয়। অধিকতর জটিল, দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা পদ্ধতি (সর্বনিম্ন ৯ থেকে ২৪ মাস বা ততধিক) আর তুলনামূলকভাবে চিকিৎসায় সাফল্যের হার কম হওয়ায় ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা (Multi Drug Resistant TB-MDR TB) জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির জন্য আরও বড় চ্যালেঞ্জ। অধিকতর আধুনিক রোগ নির্ণয় ব্যবস্থা, রোগ ও ওষুধের পূর্ণ ইতিহাস জানা ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা শনাক্তে সহায়ক। নিচে বর্ণিত রোগ সম্পর্কিত ইতিহাসের কারণগুলো থাকলে একজন রোগীকে প্রতিরোধী যক্ষ্মায় ভুগছেন বলে সন্দেহ করা যায়। কারণগুলো হচ্ছে-

১. আগে এক মাস বা তার অধিক সময়ব্যাপী যক্ষ্মার চিকিৎসা নিয়ে থাকলেও তা সম্পূর্ণ করা হয়নি বা আগের ইতিহাসে চিকিৎসা চলাকালীন যে কোনো সময়ে চিকিৎসা বন্ধ করে থাকলে। ২. আগে পূর্ণমাত্রায় যক্ষ্মার চিকিৎসা নেওয়া হলেও পুনরায় যক্ষ্মার উপসর্গ দেখা দিলে। ৩. সাধারণ যক্ষ্মা চিকিৎসায় রোগী ও রোগের কোনো উন্নতি না হলে। ৪. আগেই ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীর সংস্পর্শে থাকলে বা পরিবারের কোনো সদস্য ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় ভুগে থাকলে। ৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এমন রোগে ভুগে থাকলে যেমন এইচআইভি/এইডস্। ৬. জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আলোকে ফুসফুসবহির্ভূত যক্ষ্মার চিকিৎসা সম্পন্ন করেও রোগী সুস্থ হননি-এমন ইতিহাস থাকলে রোগীকে অবশ্যই তার কফের নমুনার জিন-এক্সপার্ট পরীক্ষা করাতে হবে। জাতীয় যক্ষ্মা রেফারেন্স ল্যাবরেটরি, বক্ষ্মব্যাধি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো, সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থার বিশেষায়িত পরীক্ষাগারে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে জিন-এক্সপার্ট পরীক্ষা করানো যায়।

রোগীর সুস্থতা নির্ভর করে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর। আর সঠিক রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করে সঠিক চিকিৎসার। লক্ষণযুক্ত বা ইতিহাস রয়েছে এমন রোগীকে সঠিক পরীক্ষার মাধ্যমেই কেবল রোগ নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা সম্ভব। সবার সংক্রিয় অংশগ্রহণ, বেসরকারি চিকিৎসাসেবা দাতাদের রোগী শনাক্তে প্রয়োজনীয় সাহায্য ছাড়াও দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি পূরণের মাধ্যমে যক্ষ্মা যুদ্ধে আমরা জয়ী হতে পারব বলে বিশ্বাস।

ডা. মাহমুদুল হাসান খান : সিনিয়র ম্যানেজার, ইউএসএআইডিস অ্যালায়েন্স ফর কমব্যাটিং টিবি প্রোগ্রাম ইন বাংলাদেশ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে