রাজধানীসহ সারা দেশে ৮০টির মতো বেসরকারি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা দেওয়া হয়। আশ্চর্যই বলতে হবে, এর মধ্যে মাত্র ২৭টি হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে নিয়ম মেনে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, বাকিগুলো এখনো অনুমোদন নেয়নি। অনুমোদনহীন বেসরকারি হাসপাতালগুলো প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই পরিচালনা করছে আইসিইউ।
শুধু তা-ই নয়, রোগীদের কাছ থেকে কেবিন, শয্যা ও আইসিইউ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে দ্বিগুণ হারে। ক্যানুলা চার্জ, সার্ভিস চার্জ নামে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। সবচেয়ে বড় কথা, কোভিড চিকিৎসাসংক্রান্ত সব তথ্য-উপাত্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানোর নির্দেশনা থাকলেও বেশির ভাগ হাসপাতাল তা পাঠাচ্ছে না। উল্লেখ করা যেতে পারে, বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসাসেবার মান ও ব্যয়সংক্রান্ত বিষয় তদারকির জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি কমিটি গঠন করেছে।
এই কমিটি কর্তৃক একটি হাসপাতাল পরিদর্শনের পর যে চিত্র পাওয়া গেছে, তা থেকেই অনুমোদনহীন হাসপাতালগুলোর অবস্থা আঁচ করা যাবে। কমিটি উত্তরার রেডিক্যাল হাসপাতাল পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখতে পায়, এই হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট থাকলেও সেখানে রয়েছে মাত্র একটি ভেন্টিলেটর। আইসিইউ সেবার পূর্ণাঙ্গ সুবিধা ছাড়াই এটি পরিচালনা করা হচ্ছে।
ছোট দুটি কক্ষে পাঁচটি করে শয্যা স্থাপন করে আইসিইউ ইউনিট তৈরি করা হয়েছে, যা আইসিইউ সেবার জন্য মোটেই উপযোগী নয়। অন্যদিকে মাত্র ছয়টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের সমন্বয়ে ম্যানিফোল্ড অক্সিজেন সিস্টেম চালু করা হয়েছে, যা ১০ শয্যার আইসিইউ পরিচালনার জন্য অপ্রতুল। অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলো বিপজ্জনকভাবে হাসপাতালের সামনে উন্মুক্ত স্থানে ফেলে রাখা হয়েছে। পরিদর্শনকালে কমিটি হাসপাতালটিতে মাত্র একজন চিকিৎসকের উপস্থিতি দেখতে পেয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন না নিয়েই যারা করোনার চিকিৎসা দিচ্ছেন, তাদের নিয়ম না মানার প্রবণতা যে অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রতিফলিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। বাস্তবে রেডিক্যাল হাসপাতালে সেটাই দেখা গেছে। আমরা অনুমান করি, অনুমোদনহীন যে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করলে একই চিত্র দেখা যাবে।
করোনাকাল শুরু হওয়ার পর থেকে দেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। সংবাদমাধ্যমে সেগুলো প্রচারিতও হয়েছে। অনুমোদনহীন হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা প্রদান দুর্নীতি ও অনিয়মের তালিকায় নতুন সংযোজন বলা যায়। এসব হাসপাতালে করোনা রোগীদের যে সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না, তা বলাই বাহুল্য।
চিকিৎসাধীন কোনো রোগীর ক্ষেত্রে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটার আগেই এসব হাসপাতালের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আমরা মনে করি, যথাযথ পরিদর্শনসাপেক্ষে অনুমোদনহীন যেসব হাসপাতালে ত্রুটিপূর্ণ চিকিৎসাব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে, সেগুলোর প্রতিটিরই চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া উচিত।