করোনার টিকার তৃতীয় ট্রায়ালে একমত ঢাকা-দিল্লি

0
908

ভারতে পরীক্ষা শেষে বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দুই দেশ নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মঙ্গলবার দুই দেশের যৌথ পরামর্শক কমিশনের বৈঠকে এই প্রস্তাব দিলে বাংলাদেশ তাতে রাজি হয়।
বাংলাদেশকে দেওয়া ভারতের ঋণচুক্তির (এলওসি) প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন দ্রুততর করতে দুই প্রতিবেশী দেশ একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এলওসির প্রকল্পগুলো যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে ওই কমিটি। বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দুই নিকট প্রতিবেশী দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা প্রথমবারের মতো ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এলওসি আজকের বৈঠকে বড় ইস্যু ছিল। ক্রেডিটটার বাস্তবায়ন খুব ধীরগতিতে হচ্ছে। তাই বৈঠকে এটা আমরা আলোচনায় গুরুত্বের সঙ্গে তুলেছি। এই বিষয়ে একটি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে, যাতে এই ঋণের অর্থ ছাড়ে গতি আনা যায়।’

ওই বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘কোভিড-১৯–এর টিকা তৈরিতে সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন পর্যায়ের পরীক্ষা চালুর পরপরই বাংলাদেশে কোভিড-১৯ টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করতে প্রস্তুত ভারত। আমরা টিকা পরীক্ষার পাশাপাশি বিতরণ ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার প্রত্যাশা করছি। এই সব প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’

ভারতের একটি কূটনৈতিক সূত্র মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদককে বলেন, কোভিড-১৯–এর টিকার বিষয়ে দিল্লির দেওয়া প্রস্তাবে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো দুই নিকট প্রতিবেশীরও আকাশ ও স্থলপথে লোকজনের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। ভারত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে আকাশপথে যাত্রী পরিবহনের জন্য এয়ার বাবল নামে কর্মসূচি শুরু করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে এ ধরনের এয়ার বাবলের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এয়ার বাবল চালু করতে আমরা একমতে পৌঁছেছি। এই বিষয়ে প্রক্রিয়াসহ মোডালিটিসহ আনুষঙ্গিক বিষয় চূড়ান্ত করতে কাজ চলছে। পাশাপাশি আমরা বলেছি যে রোড ওপেন করে দেন, তাহলে আমাদের সুবিধা হয়। কেননা, আমাদের বেশির ভাগ মানুষ সড়কপথেই যাতায়াত করে। ভারত এ বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে।’

ভারতীয় কূটনৈতিক সূত্রটি বলছে, কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় দুই দেশ এয়ার বাবল চালু করবে, এ নিয়ে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। তবে কখন থেকে তা চালু হবে, এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জানা গেছে, দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভার্চ্যুয়াল শীর্ষ সম্মেলন নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

ওই বৈঠকের আগে ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করবে ভারত। এ ছাড়া দুই দেশ যৌথভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী ও দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর যৌথভাবে উদ্‌যাপনের বিষয়ে আলোচনা করেছে।

তিস্তাসহ পানিবণ্টনের বিষয়ে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘তিস্তা বিষয়ে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ে অনেক আগেই ঐকমত্য হয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই আমরা এটা বাস্তবায়নের জন্য জোর দিয়েছি। আশা করছি দ্রুত হবে।’ তিনি জানান, দ্রুত যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক আয়োজনের ব্যাপারে দুই দেশ একমত হয়েছে।

সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি হত্যা বন্ধ প্রসঙ্গে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা দুই পক্ষ একমত হয়েছি যে কেউ যাতে না মারা যায়। যেসব অঞ্চলে মারা যায়, সেখানে যৌথভাবে মনিটরিং করব। এটা আমাদের জন্য লজ্জার, ভারতের জন্যও লজ্জার।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যে দৃঢ় সম্পর্ক, সেটি একজন মারা গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন পেঁয়াজ একটি ছোট জিনিস। কিন্তু যখন দুর্ঘটনা হয়, তখন এই সম্পর্কে আঘাত হানে। আমরা ভারত থেকে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আনি। যেমন পেঁয়াজ এবং সেটি হঠাৎ করে বন্ধ করে দিলে এর প্রভাব বাংলাদেশের বাজারের ওপর পড়ে।’

সূত্রঃ প্রথমআলো

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে