করোনা মহামারিতে শিশুর মানসিক বিকাশে বাবা-মার করণীয়

0
681

অপরাধ না করেই এখন বন্দীত্বের সাজা ভোগ করছে পুরো বিশ্বের মানুষ। জেলে বন্দী না থাকলেও করোনার কারণে ঘরে বন্দী সবাই। অদৃশ্য করোনাভাইরাস গ্রাস করে ফেলেছে পুরো পৃথিবীকে। বড়দের সঙ্গে সঙ্গে এর ভয়াবহতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশুরাও।

কারণ কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বিশ্বের সব দেশেই শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে অনলাইনে কিছু ক্লাস নেয়া হলেও বন্দীদশা কাটছে না শিশুদের। বাড়িতে বসে টিভি দেখে বা মোবাইল-কম্পিউটার, ল্যাপটপে গেম খেলেও অবসর কিংবা অবসাদ কাটছে না তাদের। পক্ষান্তরে বিভিন্ন মানসিক জটিলতায় ভুগতে শুরু করেছে শিশুরা।

বাবা-মা বা অভিভাবকরাও বুঝে উঠতে পারছেন না এই পরিস্থিতিতে তাদের কি করা উচিৎ তাদের। এমন দমবন্ধ করা অবস্থায় কিছুটা স্বস্তি দেয়ার অঙ্গীকার নিয়ে ফেসবুক পেইজে সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে ‘Parenting Toddler-Stress or Fun’ গ্রুপটি। ব্যক্তিগত এই গ্রুপটির সদস্য সংখ্যা এরই মধ্যে হাজার ছাড়িয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধানও মিলছে। পাচ্ছে বন্দীদশা কাটিয়ে উঠার উৎসাহব্যঞ্জক সব পন্থাও।

কারণ গ্রুপটি বাচ্চাদের যে কোন সৃজনশীল কাজকে উৎসাহ দিয়ে আসছে। এমনকি শিশুদের সৃজনশীলতা নিয়ে মাসিক একটি প্রতিযোগিতাও করছে গ্রুপটি। এতে মহামারির মধ্যে শিশুদের মানসিক বিকাশের একটি প্লাটফর্ম তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন পেইজটির এডমিন সামিনা সারওয়াত নাবিলা। নাবিলা তার ৫ বছরের মেয়ে সাফিরাহ ওয়ারিশাকে দিয়েই অনেকটা শখের বশে এই পেইজটি খুলেন। সেখানে শেয়ার করার চেষ্টা করেন তার শিশু কন্যা মহামারির মধ্যে ঘরে বসেই হাতের নাগালে পাওয়া সাধারণ  উপকরণ- যেমন, পেইন্ট, সেভিং ক্রিম, বালি, ফ্রোজেন পেইন্ট, কাঠের টুকরা, শুকনা পাতা এরকম নানান কিছু দিয়ে কিভাবে সৃজনশীল কাজ করছে।

এর মধ্য দিয়ে মেয়ের এই বোরিং সময়টা গঠনমূলকভাবে ব্যবহারের পাশাপাশি অন্য শিশুদের উৎসাহ দিতে ‘Parenting Toddler-Stress or Fun’ গ্রুপে সেসব অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন সামিনা সারওয়াত নাবিলা। সাড়াও পাচ্ছেন বেশ। গ্রুপের সদস্য সংখ্যাও বাড়ছে আশাতীতভাবে। সদস্যরা তারিফ করছেন নাবিলার এই সৃজনশীল উদ্যোগটির।

সদস্যদের সমস্যা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাচ্চারা তাদের ভালোলাগা বা মন্দলাগা শেয়ার করার মতো কাউকে পাচ্ছে না। শিশুদের ভালো লাগা বা মন্দালাগা আর শেয়ার করা হয়ে উঠে না বাবা-মার সঙ্গে। অনেক সময় গৃহিণী বা কর্মজীবী মা-রা তাদের সন্তানদের সময় দিলেও সেটা ঠিক বাচ্চাদের মনের মতো হচ্ছে না। অর্থ্যাৎ শিশু আপনাকে যেভাবে গ্রহণ করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত সেটা আপনি হয়তো বুঝতেই পারছেন না।

গৃহিণী মা হয়তো সারাদিনই বাচ্চার সঙ্গে আছেন কিন্তু সেটা কোয়ালিটি টাইম হচ্ছে না। অর্থ্যাৎ আপনি সারাদিন বাচ্চার সাথে বাসায় থাকলেও হয়তো দিনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করছেন, রান্না-বান্না, ঘর-গুছানো, বড়দের সঙ্গে গল্প করে, টিভি দেখে, ফোনে কথা বলে, ফেসবুকিং করে। আপনি শিশুদের সঙ্গে খেলছেন না, তাদের সঙ্গে কথা বলছেন না কিংবা তাদের আবদারগুলোকে অযৌক্তিক ভেবে অগ্রাহ্য করছেন।

এতে সে বার বার আপনার দৃষ্টি আর্কষণের চেষ্টা করতে আপনার কাছে যাবে, অযথা বিরক্ত করবে, নানান আবদার করবে, এতে অনেক সময় বাবা-মারা মেজাজ ঠিক রাখতে পারেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমনটা করা একবারেই ঠিক না। কারণ বাবা-মা-র বুঝতে হবে যে, এখন আর আগের মতো একান্তবর্তী পরিবার নেই। নেই শিশুদের অনেক ভাইবোন বা খেলার সাথী। নেই আগের মতো বাড়ি বা স্কুলের সামনে দিগন্ত জোড়া মাঠ। বর্তমানে শিশুদের সব কিছুই ঘর কেন্দ্রীক। তাদের সখ্যতার সবটুকুই বাবা-মাকে কেন্দ্র করে। তারপর আবার করোনার বন্দীদশা।

এই অবস্থায় শিশুদের কোয়ালিটি টাইম দিতে হবে। বুঝার চেষ্টা করতে হবে তারা কি চাচ্ছে। তাদের চাওয়া-পাওয়া খুব অদ্ভূত হলেও তা সুন্দর করে যুক্তি দিয়ে তাদের বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করতে হবে। আপনার মনে হতে পারে শিশুরা কিছু বোঝে না, এটা ঠিক না। আপনি তার প্রতি খুশি নাকি বিরক্ত তা কিন্তু শিশুরা খুব ভালো করে বুঝে।

তাই আপনি পেন্ডামিকের বিষয়টিও ওদের সঙ্গে শেয়ার করুন, বলুন বাইরে বের হওয়া নিরাপদ নয়। ঘরে বসেই সামিনা সারওয়াতের মতো শিশুদের সাথে সুন্দর, গঠনমূলক সময় কাটানোর করার জন্য বিকল্প পথ বের করুন। দেখবেন এতে শিশুরা ঘরের মধ্যেই খুব সাধারণ জিনিস দিয়ে সৃজনশীল কাজে মত্ত থাকবে। আর শিশুরা যেমন কাজই করুক তাদের প্রশংসা ও অনুপ্রেরণা দিন। দেখবেন সৃষ্টির আনন্দে তার চোখে মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠবে। সেইসঙ্গে বাড়বে আত্মবিশ্বাস।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে