শীতকালে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে, এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগেই সতর্ক করে দিয়েছে। লক্ষ করা যাচ্ছে, করোনা শনাক্তের পরীক্ষায় ইতোমধ্যে জনসাধারণের মধ্যে এক ধরনের অনীহা চলে এসেছে। এটি দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সফলভাবে মোকাবেলায় আমাদের সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দীর্ঘতর হতে পারে। বর্তমানে এ রোগের টিকা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
কার্যকর টিকা আবিষ্কারের সঙ্গে বাণিজ্যের বিষয়টিও আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে। যেসব কোম্পানি ইতোমধ্যে কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরির শেষ ধাপে রয়েছে, বাজারে তাদের শেয়ারের মূল্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। ভ্যাকসিন কেনার কারণে বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয় বাড়বে। এরপর ঘুরেফিরে মানুষের করের বোঝাও বাড়তে পারে। এক সময় পোলিওর প্রাদুর্ভাবে নাকাল দশা থেকে মানুষ মুক্তি পেয়েছিল এর টিকা আবিষ্কারের মাধ্যমে। তখন পোলিও টিকাপ্রাপ্তি অত্যন্ত সহজ ছিল, কারণ টিকা আবিষ্কারের পর এর মেধাস্বত্ব মানব কল্যাণে উৎসর্গ করা হয়েছিল।
দেশে মহামারী দীর্ঘস্থায়ী হলে স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন খাতে এর প্রভাব পড়বে। ইতোমধ্যে করোনার কারণে দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়েছে। তারা সহসা সন্তোষজনক কোনো কাজ পাবে কিনা, তা বলা যাচ্ছে না। করোনা-পরবর্তী শ্রমবাজারে নতুন ধারা সৃষ্টি হতে পারে। সেখানে প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষতা ছাড়া কর্মীদের কাজ পেতে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান ধারায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মীদের কী হবে।
আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ সীমিত। প্রাকৃতিক সম্পদের একটা সুবিধা হল সময়ের সঙ্গে এর দ্রুত মূল্যপতন হয় না। প্রাকৃতিক সম্পদ দুর্যোগকালে নিরাপত্তার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের ক্ষেত্রে বড় সম্পদ হচ্ছে মানবসম্পদ। এ সম্পদকে প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ সম্পদে পরিণত করতে না পারলে যে কোনো খারাপ পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবেলা করা কঠিন হতে পারে। স্প্যানিশ ফ্লু মোকাবেলা করতে গিয়ে মানুষের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা থেকে শিক্ষা নিলে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সহজ হতে পারে। আমাদের দেশে শীতকালে ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এসব রোগের উপসর্গের সঙ্গে করোনার উপসর্গের মিল রয়েছে।
ফলে কোনটা ঠাণ্ডাজনিত রোগ আর কোনটা করোনার উপসর্গ তা অনেকেই বুঝতে পারে না। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা বিবেচনায় রেখে সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সরকার ইতিমধ্যে অনেক পদক্ষেপ নিলেও জনসাধারণের মধ্যে এখনও সচেতনতার মনোভাব তেমন একটা লক্ষ করা যাচ্ছে না। আমরা জেনেছি, ভ্যাকসিন আমদানির লক্ষ্যে ইতিমধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, চুক্তি অনুযায়ী সময়মতো টিকা চলে আসবে। টিকার কার্যকারিতা ও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, টিকা সহজলভ্য হলেও করোনার মন্দ প্রভাব থেকে বিশ্ববাসীর সহসা মুক্তি মিলছে না।
করোনার প্রথম ঢেউয়ের প্রভাব কাটিয়ে পোশাক খাত যখন ক্রয়াদেশ পেতে শুরু করেছে, তখন দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় সম্প্রতি ক্রয়াদেশ কমেছে। এটি চিন্তার বিষয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ করোনার টিকা গ্রহণের অনুমোদন দিচ্ছে; কোনো কোনো দেশে টিকা প্রদান শুরু হয়েছে। বিশ্ববাসী আশা করছে, ভ্যাকসিনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক কারণেও এক সময় করোনাভাইরাসের শক্তি কমবে। এমন আশা করে থেমে থাকলে চলবে না। করোনার মতো অন্য যে কোনো ভাইরাস মোকাবেলা করে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করতে বিশ্ববাসীকে গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে।
খান মাহবুব : প্রাবন্ধিক; খণ্ডকালীন শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়