বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ২৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এখনও বিভিন্ন দেশে প্রতিনিয়ত মানুষ মারা যাচ্ছে করোনায়। এদিকে করোনা মোকাবেলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি চিকিৎসাযন্ত্র হলো পালস অক্সিমিটার। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বোঝার জন্য চিমটার মতো যন্ত্রটি আঙ্গুলে লাগিয়ে রাখা হয়।
কিন্তু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এই যন্ত্রের দেখানো ফলাফল অনেক ক্ষেত্রে ত্বকের রঙের দ্বারা প্রভাবিত হয়। গত ডিসম্বেরে নিউইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে প্রথম বিষয়টি উল্লেখ করা হলেও তখন সেভাবে আমলে নেয়া হয়নি।
১০ হাজারের বেশি করোনা রোগীর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের অধ্যাপক এসজোডিং এবং তার সহকর্মীরা। তারা প্রত্যেক রোগীর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপের দুই পদ্ধতি থেকে প্রাপ্ত ফলাফল তুলনা করেছেন। পালস অক্সিমিটার এবং আর্টারিয়াল ব্লাড গ্যাস-এই দুই পদ্ধতির মধ্যে দ্বিতীয়টি সব সময়ই নিখুঁত ফলাফল দেয়।
প্রাপ্ত ফলাফল তুলনা করে গবেষকরা দেখেছেন, শ্বেতাঙ্গ রোগীর ক্ষেত্রে পালস অক্সিমিটার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর ফলাফল দেয়। আর কৃষাঙ্গদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ১১ দশমিক ৭ শতাংশ।
আশঙ্কার কথা হচ্ছে, সহজ এবং ব্যথাহীন হওয়ার কারণে পালস অক্সিমিটারের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। বিপরীতে আর্টারিয়াল ব্লাড গ্যাস পদ্ধতিতে রোগী খুব ব্যথা পান এবং শরীর থেকে সরাসরি রক্তের নমুনা নিতে হয় বলে সাধারণত পালস অক্সিমিটার পদ্ধতি ব্যবহারকেই সবাই অগ্রাধিকার দেন।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) পালস অক্সিমিটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক করে দিয়েছে। তারা বলেছে, এই ডিভাইস ত্রুটিপূর্ণ ফলাফল দিতে পারে।
গত সপ্তাহের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) করোনাভাইরাস ক্লিনিক্যাল গাইডেন্সও হালনাগাদ করেছে। সেখানে অক্সিমিটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও নার্সদের সতর্ক করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে যে ত্বকের রঞ্জক (পিগমেন্ট) পালস অক্সিমিটারের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে।
যেখানে সিডিসির তথ্য অনুযায়ীই, যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিন, এশীয়, নেটিভ আমেরিকান ও হিস্প্যানিকদের মধ্যে করোনার মারাত্মক সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে।