গরমে শিশুর খাবার

0
351
Spread the love

গরমে বড়দের চেয়ে শিশুদের কষ্ট বাড়ে বেশি। এ সময় বুঝেশুনে শিশুকে খাবার খাওয়ানো উচিত। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শামীমা ইয়াসমীন।

গরমে কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। অনেক বেশি ডায়রিয়ার সংক্রমণ হয়। কম বয়সী শিশুদের নানা রোগ দেখা দেয়। এ জন্য গরমের এই সময় বড়দের পাশাপাশি শিশুদের বেলায়ও বাড়তি সতকর্তা অবলম্বন করা উচিত।

খুব গরমে সাধারণত শিশুরা কিছু খেতে চায় না। এ নিয়ে মা-বাবাও চিন্তিত হয়ে পড়েন। খাবারের মাধ্যমে গরমে বেশি অসুখবিসুখ ছড়ায়। তাই শিশুদের খাবারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সাবধান থাকতে হবে। খাবারে মশা-মাছি বসা, খাবার ঢেকে না রাখা, কোন খাবার এই সময় খাওয়া উপকারী—এসব দিকে বাড়তি খেয়াল রাখা জরুরি।

খাবারে অতিরিক্ত তেল-মসলা নয়

শিশুদের খাবার তৈরির সময় অতিরিক্ত তেল, ঘি, মসলা, মাখন, মেয়নেজ পরিহার করতে হবে। শিশুরা খেতে চায় না বলে অনেক মা খাবারকে অতি সুস্বাদু করতে গিয়ে অতিরিক্ত তেল ও মসলা ব্যবহার করেন। এটি করা উচিত নয়। কম মসলায় শিশুর খাবার রান্না করতে হবে। অতিরিক্ত মসলা ও তেল সমৃদ্ধ খাবার শিশুর পেটের পীড়ার কারণ হতে পারে।

বয়স বুঝে খাবার

শিশুর দ্রুত বৃদ্ধির আশায় সব সময় তার পেছনে খাবারের বাটি হাতে ছুটে বেড়াবেন না। একেক বয়সী শিশুদের পাকস্থলীর ধারণক্ষমতা একেক রকম। তাই অতিরিক্ত খাবার শিশুর উপকারের চেয়ে অপকার বয়ে আনতে পারে। এ জন্য শিশুর বয়স বুঝে তাকে খাবার খাওয়াতে হবে। জন্মের পর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুকাল ধরা হয়।

এই সময় বয়সের অনুপাতে শিশুর খাবারে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ও ডাল রাখতে হবে। শিশুর বয়স এক বছর হলে এক হাজার ক্যালরি, দুই বছর হলে এক হাজার ১০০ ক্যালরি এবং তিন বছর হলে এক হাজার ২০০ ক্যালরিযুক্ত খাবারই তার জন্য যথেষ্ট।

তরলের জুড়ি নেই

গরমে শুষ্ক আবহাওয়া শরীর থেকে আর্দ্রতা টেনে নেয়। শিশুদের ত্বক বেশি পাতলা বলে তাদের কষ্ট আরো বেশি। এ জন্য গরমে শিশুদের বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়াতে হবে।

বিশুদ্ধ পানির পাশাপাশি পানিজাতীয় ফল, ফলের রস খাওয়ানো যেতে পারে। তবে ফলের রস সরাসরি পান না করিয়ে পানি মিশিয়ে নেওয়া ভালো। অর্ধেক ফলের রসে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। এ ছাড়া লেবুর রস মিশ্রিত পানিও খাওয়ানো যেতে পারে। তবে বাইরের দোকানের বা প্যাকেটজাত জুস বা ফলের রস খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। শিশু গরমের সময় যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করছে কি না সেদিকে নজর রাখতে হবে।

খাবারের পুষ্টিমান

বেশি খাবার খাওয়ানোর চেয়ে পুষ্টিমানসমৃদ্ধ অল্প খাবারও শিশুর জন্য অধিক উপকারী। গরমে শিশুর জন্য টাটকা খাবারকে প্রাধান্য দিতে হবে। টাটকা খাবার শিশুদের নানা রোগে পড়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করবে। খাবারটি যেন হালকা হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। যেমন—নরম খিচুড়ি বা সবজির স্যুপ গরমের জন্য খুবই উপযোগী খাবার।

এ সময় শিশুদের খাবারে মাছ-মাংসও থাকতে পারে। তবে তা পরিমিত পরিমাণে। শিশুকে খাবার যখন খাওয়াচ্ছেন, তা তার খাওয়ার সময়েই বানিয়ে দেওয়া সবচেয়ে ভালো। এটি সম্ভব না হলে খাবারটি যাতে দীর্ঘ সময় ভালো থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাইরে যাওয়ার আগে শিশুর খাবার তৈরি করে নিয়ে যাওয়া ভালো। এ সময় খাবার ও পানি বহন করার জন্য ভালো মানের পাত্র ব্যবহার করতে হবে। শিশুকে যখন যে খাবারই খাওয়ান না কেন, আগে সেটি পরখ করে নিন।

এ সময় বাজারে পাওয়া মৌসুমি বিভিন্ন ফলমূল, যেমন—আম, জাম, তরমুজ, লিচু, পেঁপে, কলা, জামরুল, স্ট্রবেরি শিশুকে খাওয়াতে পারেন। তাদের বাইরের মুখরোচক খাবার না দেওয়াই ভালো।

ঘুমানোর আগে গরম দুধ

কম বয়সে শিশুদের বৃদ্ধি বেশি হয়। এ সময় দরকার তাই প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। সারা দিন দুরন্তপনার পর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস গরম দুধ শিশুর জন্য অনেক উপকারী।

বাজারের কৌটার ও গুঁড়া দুধের পরিবর্তে খাঁটি গরুর দুধ খাওয়ানো বেশি ভালো। শিশুর বয়স এক বছর হলে আধাগ্লাস এবং এর বেশি হলে পূর্ণ এক গ্লাস দুধ খাওয়াতে পারেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে