গ্লোবের করোনা ভ্যাকসিন কত দূর!

0
884
Spread the love

বৈশ্বিক মহামারী করোনার লাগাম টানতে নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে গেলো বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক। প্রতিষ্ঠনটির উদ্ভাবিত ‘ব্যানকোভিড করোনা প্রতিরোধে সক্ষম’ মার্কিন মেডিকেল জার্নাল বায়োআর্কাইভে এমন প্রতিবেদন প্রকাশের পর আশার আলো দেখছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, গবেষণাটি সফল হলে এটি হবে দেশ ও বিশ্বের জন্য এক বিস্ময়কর অর্জন। ভ্যাকসিনটির অগ্রগতি নিয়ে কাল সোমবার রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন করবে গ্লোব বায়োটেক।

গ্লোব বায়োটেকের দাবি, প্রাণিদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শেষে নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার মানদণ্ডে শতভাগ উৎরে গেছে ভ্যাকসিনটি। এখন কন্ট্রাক্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিআরও) তাদের কাছ থেকে প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রতিবেদন নিয়ে ভ্যাকসিনটি মানুষের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর কিনা, তা পরীক্ষা করতে মানবদেহে ট্রায়ালের প্রথম পর্যায় পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদে (বিএমআরসি) অনুমতি চাইবে। অনুমতি মিললে শিগগিরই মানবদেহে পরীক্ষা শুরু করবে বলে জানান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা ড. আসিফ মাহমুদ।

শনিবার বিকেলে মানবকণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, প্রাণিদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কাজ যেহেতু সফলভাবে শেষ করতে পেরেছি, সেহেতু আমাদের কাজ কিন্তু অনেকটা শেষ। বাকি কাজটা করবে কন্ট্রাক্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিআরও)। তিনি বলেন, সবকিছু শেষ হলে বাজারজাত করার জন্য ওষুধ প্রশাসন অনুমোদন দিবে। এখন সবকিছু নির্ভর করছে সিআরওর উপর। তারা যতদ্রুত মানবদেহে ট্রায়াল করে রিপোর্ট দিবে তত দ্রুত বাংলাদেশ করোনা ভ্যাকসিন পাবে।

তবে গ্লোব বায়োটেকের এক কর্মকর্তা বলেন, যদি সবকিছু ঠিকঠাক হয়, তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী, আমরা আশা করি, জানুয়ারির মধ্যেই মানবদেহে ট্রায়ালের সব পরীক্ষা (তিনটি পর্যায়ই) শেষ হবে।

গ্লোব বায়োটেকের ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সৈয়দ আতিকুল হক বলেন, ভ্যাকসিনটির এ পর্যন্ত সফলতা বৈজ্ঞানিকভাবে বেশ বলিষ্ঠ অবস্থানই প্রমাণ করে। আমাদের রক্তে যেসব উপাদান তৈরি হলে জীবাণু বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের শরীর লড়াই করতে পারে সেই জিনিসগুলো যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ইমিউনোজেনেসিটি বলে, এই ভ্যাকসিনটি ইঁদুরের শরীরে তা ভালোমতো তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

আইইডিসিআর’র অন্যতম উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, হিউম্যান ট্রায়াল ছাড়া আসলে কোনো ভ্যাকসিন বা ওষুধকেই সফল মন্তব্য করা বিজ্ঞানসম্মত নয়। তারা হয়তো প্রথম পর্যায়ের অ্যানিমেল ট্রায়ালের ফল জানিয়েছে কোথাও। হয়তো তারা আসলে বলতে চাইছে তাদের গবেষণার ফলাফল কোথাও তালিকাভুক্ত করেছে। আন্তর্জাতিক জার্নালে হয়তো এরপর প্রকাশিত হবে। অ্যানিমেল ট্রায়াল সফল হলে তারা বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদে (বিএমআরসি) আবেদন জানাবে হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য। আমি তাদের সফলতা কামনা করি। তবে গ্লোব বায়োটেক সফল হোক বা না হোক, তাদের বিজ্ঞানসম্মতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

ভ্যাকসিনের অগ্রগতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন কাল সোমবার: গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড কর্তৃক আবিষ্কৃত কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন ‘ব্যানকোভিড’-এর অগ্রগতি নিয়ে আগামীকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে প্রতিষ্ঠানটি। সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে দুপুর ১২টায় রাজধানীর গুলশান-২ এর লেকশোর হোটেলে। এতে প্রাণিদেহে ট্রায়ালের প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ও ভ্যাকসিন প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

গত ১ জুলাই গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গ্লোব বায়োটেক জানায়, তারা দেশেই করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের জন্য কাজ করছে। ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পরই তারা এর ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের কাজ শুরু করে।

পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে গ্লোব ঘোষণা দেয়, প্রাণীদেহের ওপর এই ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপের ট্রায়াল তারা সফলভাবে শেষ করেছে। পরবর্তী ধাপগুলো ঠিকঠাকমতো সম্পন্ন করতে পারলে ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে টিকা বাজারজাত করতে পারবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সূত্রঃ মানবকন্ঠ

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে