চুল পড়া স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রতিদিন একজন মানুষের গড়ে ১০০টি চুল পড়ে। তবে অনেক বেশি হারে চুল পড়তে শুরু করলে তা দুশ্চিন্তার ব্যাপার। এর চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
অস্বাভাবিক হারে চুল হারানোর কারণ মূলত দুটি—বংশগত ও বয়সজনিত। বংশগত বা জেনেটিক কারণে চুল পড়ার ক্ষেত্রে হরমোন দায়ী। এ ছাড়া বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চুলের ফলিকলগুলো সংকুচিত হয়ে যায় বা চুলের বৃদ্ধিচক্র সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। ফলে চুল গজানোর হারের চেয়ে পড়ার হার বেড়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে মিনোক্সিডিল টপিক্যাল সলিউশন চুলের ফলিকলগুলো বৃদ্ধি করার মাধ্যমে চুলের বৃদ্ধি পর্যায় সংক্ষিপ্ত করে। এতে চুল লম্বা ও ঘন হয়। এ ছাড়া এই পদ্ধতি রক্ত চলাচল বাড়িয়ে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। মিনোক্সিডিল একটি ড্রপার বা মিক্স, যা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ব্যবহার করতে হয়।
মিনোক্সিডিল টাকের সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। কিন্তু এটি ব্যবহারের আগে কিছু বিষয় লক্ষ করতে হবে। যেমন আপনার পরিবারের অথবা বংশের কোনো পুরুষ-নারীর চুল পড়া বা টাকের সমস্যা আছে কি না। গোসলের সময়, বালিশে অথবা চিরুনিতে আগের চেয়ে বেশি চুল পড়ছে কি না। মাথায় আক্রান্ত স্থানে ড্রপার দিয়ে এক মিলিলিটার করে অথবা ৮ থেকে ১০টি স্প্রে দিয়ে দিনে দুবার সলিউশনটি প্রয়োগ করতে পারেন। এটি ব্যবহারে তেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে কেউ কেউ মাথার তালুতে আলতো চুলকানিজনিত অস্বস্তিবোধ করতে পারেন। সাধারণত, সলিউশনটি ১৮ বছরের কম বয়সী এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের ব্যবহার করা উচিত নয়।
প্রতিদিন সকালে ও রাতে দুবার মাথায় ত্বকের উপরিভাগে চুলের হারানো অংশে সলিউশনটি প্রয়োগ করুন। রাতে ঘুমানোর দুই থেকে চার ঘণ্টা আগে ব্যবহার করতে হবে। অবশ্যই এটা ব্যবহারের আগে ভালো করে চুল শুকিয়ে নিতে হবে। এই প্রক্রিয়ার ফল পেতে চার মাস সময় লাগে।
মিনোক্সিডিল ব্যবহারের একটি লক্ষণীয় দিক হলো রোগী নিজেই অনুধাবন করতে পারবেন যে এটা কাজ করছে কি না। সলিউশনটি ব্যবহারের দুই সপ্তাহের মধ্যে চুল পড়া কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। এর অর্থ এই নয় যে চুলের নতুন বৃদ্ধি পর্যায় শুরু হয়ে গেছে এবং পুরোনো চুলগুলো নতুন চুলকে জায়গা করে দিচ্ছে। এর কিছুদিনের মধ্যে, অর্থাৎ চার মাস ব্যবহারের পরই নতুন চুল গজাতে থাকবে। যাদের বংশগত টাক রয়েছে, তাদের নতুন চুল গজানোর প্রক্রিয়া হিসেবে নিয়মিত ও রুটিনমাফিক ব্যবহার চালিয়ে যেতে হবে। মিনোক্সিডিল টপিক্যাল সলিউশন ব্যবহার করার পর কোমল ও সাধারণ শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে। এমনকি আপনি চুল রংও করাতে পারবেন।
চুল পড়া রোধে সর্বোত্তম চিকিৎসা হচ্ছে, মিনোক্সিডিল টপিক্যাল সলিউশনের সঙ্গে পিআরপি (প্লাটিলেট-রিচ প্লাজমা) থেরাপি নেওয়া। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ীই সবকিছু করতে হবে। নিজে থেকে কিছু করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। আবার সব চিকিৎসা সবার জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে।
লেখকঃ
ডা. এস এম বখতিয়ার কামাল: সহকারী অধ্যাপক (চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল