অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা ছাড়াও আরো ছয়টি টিকা দেশে আমদানি ও ব্যবহারে নাইট্যাগের (ন্যাশনাল ইমুনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ) সুপারিশের পর সরকারের পক্ষ থেকে তোড়জোড় চলছে দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকাগুলো চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার। বৃহস্পতিবার নাইট্যাগের এক বৈঠকে বিশ্বে এ পর্যন্ত জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত ১২টি টিকার সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে এবং দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আবেদন বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়। এর মধ্যে দুটি টিকা আমদানির পাশাপাশি সরকার চাইলে উৎপাদনের অনুমতি দিতে পারবে। সরকারের পাশাপাশি আমদানিকারক বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও তোড়জোড় শুরু হয়েছে প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার জন্য। এমনকি গতকাল শুক্রবারও কোনো কোনো কম্পানি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, যাতে দু-এক দিনের মধ্যেই তারা অনুমতিপত্র হাতে পেয়ে যায়। একাধিক কোম্পানি সরাসরি টিকার উদ্ভাবক ও প্রস্তুতকারী কোম্পানির কাছে সরকারের তরফ থেকে আলাদা করে চিঠি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।
এমন একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে বলা হয়, যে দেশের টিকা তারা আনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে ওই দেশের সংশ্লিষ্ট টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চায় বাংলাদেশ সরকারও তাদের চিঠি দিক। কারণ ওই কোম্পানি জানুয়ারি মাস থেকে বাংলাদেশে টিকা দেওয়ার জন্য তাদের পক্ষ থেকেই আগ্রহ দেখিয়ে আসছিল এ দেশীয় এজেন্টের মাধ্যমে, কিন্তু তখন বাংলাদেশ সরকার বিষয়টিতে আগ্রহ দেখায়নি।
আরেকটি দেশীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকার আমাদের অনুমোদন দেওয়ার পাশাপাশি একই সঙ্গে যেখান থেকে আমরা টিকা আনব, সেই কোম্পানি বরাবর আলাদা একটি চিঠি দিলে গুরুত্ব অনেক বেশি হবে। কারণ আমরা শুধু তাদের এজেন্ট এবং একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। তারা আমাদের সঙ্গে বিষয়টি সেভাবেই বিবেচনা করবে। তাতে টিকা দেশে আনতে দেরি হয়ে যেতে পারে। আর ওই কোম্পানি সরকারের চিঠি পেলে সেটিকে বিশেষ বিবেচনায় নেবে বলে আমাদের এরই মধ্যে জানিয়ে রেখেছে।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কিভাবে টিকা আনব, দেশে আনার পর সেগুলো কিভাবে সংরক্ষণ করা হবে এবং কিভাবে তা মানুষকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে, সবই আমাদের পরিকল্পনা করা আছে। আশা করি, সরকারি অনুমোদন ও চিঠি পেলে পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মাসখানেকের মধ্যেই টিকা দেশে পৌঁছানো সম্ভব।’
এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের টিকাসংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘টিকার বিষয়টি আমরা এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। বন্ধের দিনেও আমরা এসব নিয়ে বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ রক্ষা করছি এবং বিভিন্ন কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘দু-তিন দিনের মধ্যে ওই টিকাগুলো অনুমোদন পেয়ে যাবে। তবে দুটি দেশের সঙ্গে উৎপাদনবিষয়ক চুক্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। যদিও আমাদের এরই মধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়ে আছে।’
উল্লেখ্য, ছয়টি টিকার মধ্যে রয়েছে মডার্না, ফাইজার, জনসন অ্যান্ড জনসন, রাশিয়ার স্পুনিক ভি এবং চীনের দুটি কম্পানির টিকা। এর মধ্যে স্পুনিক ভি ও চীনের একটি কোম্পানির টিকা দেশে আমদানির পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের বিষয়ে চুক্তিপ্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে দেশের বড় চারটি ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি ওই দুটি টিকা দেশে উৎপাদনের ব্যাপারে তৎপরতা চালাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর সমঝোতায় পৌঁছানোর ব্যাপারে সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা যায়। এ ক্ষেত্রে দু-তিনটি কোম্পানি যৌথভাবে কোনো একটি টিকা উৎপাদনের পথে যেতে পারে বলে গতকাল পর্যন্ত আলোচনা চলছিল।
এদিকে একাধিক কোম্পানির সূত্র জানিয়েছে, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে কোনো কোনো কোম্পানি নিজেদের উদ্যোগেই বাংলাদেশে টিকা রপ্তানির জন্য এগিয়ে এসেছিল, তখন তারা টিকার দাম কম চেয়েছিল। এখন সরকার আগ্রহ দেখানোয় ওই কোম্পানিগুলো আগের তুলনায় দাম কিছুটা বাড়াবে বলে তারা ধারণা করছে। আমেরিকায় তৈরি টিকাগুলো তখন কম্পানিভেদে ১৫ থেকে ৪০ ডলারের মধ্যে আনা গেলেও এখন ২০ থেকে ৫০ ডলার বা তারও ওপরে উঠে যেতে পারে।