টিকা রাখতে প্রস্তুত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গোডাউন

0
441

সপ্তাহখানেক পরই দেশে আসছে বহুল প্রত্যাশিত করোনাভাইরাসের টিকা। টিকা রাখার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গোডাউনগুলো। এর জন্য প্রতিদিন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক, সভা,           প্রশিক্ষণসহ নানা ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে। গত বুধবার শুরু হয়েছে টিকাদানকারী কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রশিক্ষক গ্রুপের প্রশিক্ষণ।

চিকিৎসকদের ২৫ জনের একটি প্রশিক্ষক দল নিজেরা করোনার টিকা দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। পরে তারা অন্যদের প্রশিক্ষণ দেবেন। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে টিকা সরবরাহ ও প্রয়োগ ব্যবস্থাপনাভিত্তিক একটি বৈঠক করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বৈঠকে চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেন সচিব ও মহাপরিচালকরা; আগের পরিকল্পনাগুলো বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী কাজ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম বলেন, ‘সবার আগে টিকা দেওয়া হবে টিকাদানকারী পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের। এ ক্ষেত্রে ঢাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলো প্রাধান্য পাবে। তার সঙ্গে একই সময়ে টিকা দেওয়া হবে মাঠপর্যায়ের একদল স্বাস্থ্যকর্মীকে। বলা যায় পাইলট আকারে তাদের টিকা দেওয়া হবে। তারাই পরে সাধারণ মানুষকে টিকা দেবেন। আমরা ৩০ জানুয়ারির মধ্যে টিকাদানকারীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ করে ফেলব।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরসূত্রে জানা যায়, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম চালান ২৫ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে পৌঁছাবে বলে আশা করছে সরকার। টিকা আসার পর দুই দিন বেক্সিমকোর ওয়্যারহাউসে থাকবে। সেখান থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তালিকা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে মাঠপর্যায়ে এ টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সে জন্য ২৬ জানুয়ারিই অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হবে। দেড় কোটি মানুষের প্রতিজনকে দুই ডোজ করে মোট ৩ কোটি টিকা দেওয়া হবে। বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকার ‘ডিস্ট্রিবিউটর’ হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা সরবরাহ করবে। অক্সফোর্ডের তৈরি এ টিকা প্রত্যেককে দুই ডোজ করে দিতে হয়। সে কারণে স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রথমে পরিকল্পনা করেছিল প্রথম চালানের ৫০ লাখ টিকার অর্ধেক ২৫ লাখ মানুষকে দিয়ে তাদের জন্য বাকি টিকা সংরক্ষণ করা হবে। তবে সে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার নতুন তথ্যানুযায়ী প্রথম ডোজ দেওয়ার দুই মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে। সে কারণে প্রথম চালানে পাওয়া টিকা প্রথম মাসেই একসঙ্গে ৫০ লাখ মানুষকে দেওয়া হবে।

এর আগে জানানো হয়েছিল, প্রথম ডোজ দেওয়ার ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। সে হিসাবে প্রথমে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। নতুন নিয়ম জানার পর পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে প্রথম যে ৫০ লাখ টিকা আসবে তা দিয়ে দেওয়া হবে। দুই মাসের মধ্যে আরও টিকা চলে আসবে। এভাবে ডোজ সম্পন্নের পরিকল্পনা করেছে সরকার।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে গত বৃহস্পতিবার বিকালে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগ ও বিতরণসংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দেশে একসঙ্গে ১৪-১৫ কোটি ডোজ টিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রথমে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতেই করোনার টিকা দেওয়া হবে। জেলা পর্যায়ের প্রতিটি হাসপাতালে সংরক্ষিত কোল্ড রুমে প্রায় ৪ লাখ ২৫ হাজার ডোজ টিকা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি হাসপাতালে পাঁচ থেকে দশটি আইস ফ্রিজার আছে, যেখানে অন্তত ৭১ হাজার ডোজ টিকা রাখা যাবে। প্রাথমিকভাবে সারা দেশে ৭ হাজার ৩৪৪টি টিম টিকা দেওয়ার কাজ করবে। প্রতিটি টিমে ছয়জন স্বাস্থ্যকর্মী থাকবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে