ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা: যত দেরি তত মৃত্যু

0
758
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে অন্তত ৫৭৭৬ জন অর্থাৎ মাসে ৪৮১ জন মানুষ কেবল ট্রান্সফ্যাটের কারণে মারা যাচ্ছেন। অথচ খাবারের অযাচিত উপাদান ট্রান্সফ্যাট পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব। এর জন্য দরকার শুধু একটি আইন ও তার প্রয়োগ। নীতিমালা হতে দেরি হচ্ছে বলেই বাড়ছে ট্রান্সফ্যাটজনিত মৃত্যু।

সাধারণত প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার ও বেকারি পণ্যে বিদ্যমান ট্রান্স ফ্যাটি এসিড (টিএফএ) তথা ট্রান্সফ্যাট হলো এক ধরনের স্নেহজাতীয় খাদ্য উপাদান। এটি রক্তের এলডিএল তথা ‘খারাপ কোলেস্টেরল’ বাড়িয়ে দেয়। একইসঙ্গে কমিয়ে দেয় এইচডিএল ওরফে ‘ভালো কোলেস্টেরল’-এর মাত্রা। অতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণে খারাপ কোলেস্টেরল রক্তবাহী ধমনিতে জমা হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা দেয়। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। যা অকালমৃত্যুর অন্যতম কারণ। অথচ ট্রান্সফ্যাটের ক্ষতি সম্পর্কে দেশের বেশিরভাগ মানুষের কোনও ধারণা নেই।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) ইতোমধ্যেই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনায় ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে নীতি প্রণয়নে কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিক খসড়া নীতিমালাও প্রায় প্রস্তুত। কিন্তু চূড়ান্ত নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে একেবারেই ঢিমেতালে।

নীতিমালা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিক খসড়ার কাজ শেষে সেটি ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে ৪০ দিনের জন্য। যেখানে খসড়া নীতিমালা সম্পর্কে সকলের মতামত নেওয়া হবে। তারপর তা চূড়ান্ত আকারে প্রণয়নের জন্য পাঠানো হবে মন্ত্রণালয়ে।

‘নীতিমালার জিরো ড্রাফট নিয়ে মিটিং হয়েছে। ২৫ জানুয়ারিতে প্রথম ড্রাফট নিয়েও বৈঠক হয়েছে।’ এমনটা জানিয়েছেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ নিয়মিত চলছে। এখানে অনেক টেকনিক্যাল বিষয় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা দেখছেন। প্রতিটি বিষয় দেখেশুনে যখন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার পর্যায়ে যাবে, তখন সবার মতামত নেওয়া হবে।’

তবে খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত হতে কমপক্ষে ছয় মাস লাগবে বলেও জানান মো. আব্দুল কাইউম সরকার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন মতে, বিশ্বে ট্রান্সফ্যাট ঘটিত হৃদরোগে মৃত্যুর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ঘটে ১৫টি দেশে, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে অন্তত ৫৭৭৬ জন অর্থাৎ মাসে ৪৮১ জন মানুষ কেবল ট্রান্সফ্যাটের কারণে মারা যাচ্ছেন। অথচ খাবারের অযাচিত উপাদান ট্রান্সফ্যাট পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব। এর জন্য দরকার শুধু একটি আইন ও তার প্রয়োগ। নীতিমালা হতে দেরি হচ্ছে বলেই বাড়ছে ট্রান্সফ্যাটজনিত মৃত্যু।

সাধারণত প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার ও বেকারি পণ্যে বিদ্যমান ট্রান্স ফ্যাটি এসিড (টিএফএ) তথা ট্রান্সফ্যাট হলো এক ধরনের স্নেহজাতীয় খাদ্য উপাদান। এটি রক্তের এলডিএল তথা ‘খারাপ কোলেস্টেরল’ বাড়িয়ে দেয়। একইসঙ্গে কমিয়ে দেয় এইচডিএল ওরফে ‘ভালো কোলেস্টেরল’-এর মাত্রা। অতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণে খারাপ কোলেস্টেরল রক্তবাহী ধমনিতে জমা হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা দেয়। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। যা অকালমৃত্যুর অন্যতম কারণ। অথচ ট্রান্সফ্যাটের ক্ষতি সম্পর্কে দেশের বেশিরভাগ মানুষের কোনও ধারণা নেই।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) ইতোমধ্যেই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনায় ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে নীতি প্রণয়নে কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিক খসড়া নীতিমালাও প্রায় প্রস্তুত। কিন্তু চূড়ান্ত নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে একেবারেই ঢিমেতালে।

নীতিমালা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিক খসড়ার কাজ শেষে সেটি ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে ৪০ দিনের জন্য। যেখানে খসড়া নীতিমালা সম্পর্কে সকলের মতামত নেওয়া হবে। তারপর তা চূড়ান্ত আকারে প্রণয়নের জন্য পাঠানো হবে মন্ত্রণালয়ে।

‘নীতিমালার জিরো ড্রাফট নিয়ে মিটিং হয়েছে। ২৫ জানুয়ারিতে প্রথম ড্রাফট নিয়েও বৈঠক হয়েছে।’ এমনটা জানিয়েছেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ নিয়মিত চলছে। এখানে অনেক টেকনিক্যাল বিষয় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা দেখছেন। প্রতিটি বিষয় দেখেশুনে যখন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার পর্যায়ে যাবে, তখন সবার মতামত নেওয়া হবে।’

তবে খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত হতে কমপক্ষে ছয় মাস লাগবে বলেও জানান মো. আব্দুল কাইউম সরকার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন মতে, বিশ্বে ট্রান্সফ্যাট ঘটিত হৃদরোগে মৃত্যুর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ঘটে ১৫টি দেশে, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ ৩১ হাজার মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। যার মধ্যে চার দশমিক ৪১ শতাংশ অর্থ্যাৎ ৫৭৭৬ জনের মৃত্যুর জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী করা হয় ট্রান্সফ্যাটকে।

শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট নির্মূলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ হলো, সকল তেল এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রতি ১০০ গ্রামে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ পরিমাণ দুই গ্রামে সীমিত করা। এ ছাড়া পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল তথা পিএইচও’র উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সুপারিশও করেছে সংস্থাটি।

শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল বা পিএইচও- যা বাংলাদেশে ডালডা ও বনস্পতি নামে পরিচিত।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট-এর গবেষণায় ২৪টি নমুনা বিশ্লেষণ করে ৯২ শতাংশ নমুনাতেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ করা শতকরা দুই ভাগের চেয়ে বেশি ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গেছে। প্রতি ১০০ গ্রাম পিএইচও নমুনায় সর্বোচ্চ ২০.৯ গ্রাম পর্যন্ত ট্রান্সফ্যাট-এর উপস্থিতিও দেখা গেছে। যা ডব্লিউএইচও’র সুপারিশকৃত মাত্রার তুলনায় ১০ গুণ বেশি!

আমাদের দেশে পিএইচও বা ডালডা সাধারণত ভাজাপোড়া, স্ন্যাক্স ও বেকারি পণ্য, রেস্তোরাঁ এবং সড়কসংলগ্ন দোকানে খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

ট্রান্সফ্যাট বিষয়ক টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ও বিএফএসএ-এর সদস্য মঞ্জুর মোরশেদ আহমেদ জানিয়েছেন, ‘নীতিমালা নিয়ে একাধিক মিটিং হয়েছে। সংশোধন-সংযোজন-ব্যাখ্যা-পর্যালোচনা চলছে, শিগগিরই হয়তো এটা প্রকাশ করার পর্যায়ে নেওয়া সম্ভব হবে।’

মঞ্জুর মোরশেদ বলেন, ‘এরপর আইন মন্ত্রাণালয় তাদের কাজ করবে। আশা করছি, নীতিমালা পাঠানোর পর সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে।’

২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)-এর সহযোগিতায় ‘ট্রান্সফ্যাট নির্মূল করি, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাই’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাট নির্মূল করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

খাবারে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা দুই শতাংশ নির্ধারণ করতে নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করাও জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি। অথচ গত এক বছরেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, ইতোমধ্যে ট্রান্সফ্যাট-এর পরিমাণ (প্যারামিটার) সংশ্লিষ্ট পণ্যের জাতীয় মানে অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি ভোজ্যতেল ও বনস্পতি/ডালডা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এক আলোচনাসভায় ট্রান্সফ্যাট-এর হার ২ শতাংশ করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। সেই উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ও স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি দশ সদস্য বিশিষ্ট ট্রান্সফ্যাট বিষয়ক টেকনিক্যাল কমিটিও গঠন করে।

সে বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর টেকনিক্যাল কমিটির সভায় ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে নীতি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং খসড়া প্রণয়নের কাজ শুরু করে।

মোড়কজাত খাদ্যপণ্যের লেবেলে ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা জারি করার জন্যও কাজ করছে বিএফএসএ।

ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক নীতি চূড়ান্ত করার দাবি জানিয়ে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান)-এর নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, ‘কোনও অজুহাতেই ট্রান্সফ্যাটমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রক্রিয়ায় দেরি করা যাবে না। ট্রান্সফ্যাট নির্মূল হলে হৃদরোগের মারাত্মক ছোবল থেকে রক্ষা পাবে দেশের হাজারো মানুষ।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে