ব্রিটেনে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের এক করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর অনেক দেশ এখন ব্রিটেনের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে; কোনো কোনো দেশ নিষেধাজ্ঞা জারির কথা বিবেচনা করছে।
নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়াম এরই মধ্যে ব্রিটেনের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। লন্ডন থেকে বেলজিয়াম পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিসও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। খবর বিবিসির।
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তার সরকার ফ্লাইট নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে। ফ্রান্স ও জার্মানিও একই ব্যবস্থা নেয়ার কথা বিবেচনা করছে।
এই নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস লন্ডন ও দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
এ নিয়ে মারাত্মক উদ্বেগের পটভূমিতে গতকাল হঠাৎ করেই লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের বিরাট অংশজুড়ে কঠোর লকডাউন জারি করা হয়।
ব্রিটিশ গবেষকরা লন্ডন এবং আশপাশের অঞ্চলে যে ভাইরাসের বিস্তার দেখছেন, সেটিকে তারা নিউ ভ্যারিয়েন্ট, অর্থাৎ নতুন বৈশিষ্ট্যের ভাইরাস বলে বর্ণনা করছেন।
এটি যে আগেরটির চেয়ে অনেক বেশি প্রাণঘাতী বা মারাত্মক, সে রকম প্রমাণ তারা এখনও পাননি। আর এটিকে মোকাবেলার ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের নতুন টিকা যে ভিন্ন ফল দিচ্ছে, সেটিও তারা বলছেন না।
করোনাভাইরাসের মহামারী শুরুর পর থেকেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, অন্য যে কোনো ভাইরাসের মতো করোনাভাইরাসের এই নতুন ভাইরাসটিও মিউটেশনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে পারে।
তার বৈশিষ্ট্য এবং আচরণে পরিবর্তন ঘটতে পারে। লন্ডন এবং আশপাশের অঞ্চলের ভাইরাসটি নতুন করোনাভাইরাসের এ রকম এক পরিবর্তিত রূপ বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
যে বিষয়টি গবেষকদের অবাক করেছে, তা হলো- এই ভাইরাসটি অনেক সহজে এবং দ্রুত ছড়াচ্ছে। আগেরটির তুলনায় এই নতুন করোনাভাইরাস ৭০ শতাংশ বেশি হারে ছড়াচ্ছে।
ব্রিটিশ সরকারকে যে শুক্রবার আচমকা আবারও কঠোর লকডাউন জারি করতে হলো, তার পেছনে এটিই কারণ। এটি সরকারের মধ্যে যথেষ্ট উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা বলছে– এই নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস এখন নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক ও অস্ট্রেলিয়াতেও নাকি পাওয়া গেছে। এটা নিয়ে তারা তাই ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক স্বীকার করেছেন করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল বলে এই কঠোর বিধিনিষেধ জারি করতে হয়েছে। তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এবারের কঠোর লকডাউন দুই মাস ধরে চলতে পারে।
ক্রিসমাসের আগের সপ্তাহে সরকারের এই পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায়, সরকার পরিস্থিতিকে খুবই উদ্বেগজনক বলে মনে করছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন মাত্র কয়েক দিন আগে বলেছিলেন, ক্রিসমাসের সময় যদি বিধিনিষেধ শিথিল করা না হয়, সেটি হবে অমানবিক এবং তখন তিনি বিধিনিষেধ শিথিল করার কথাই বলেছিলেন।
কিন্তু তিন দিনের মাথায় তাকে সেই পরিকল্পনা শুধু বাদই দিতে হলো না, উল্টো আর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হলো।