পিঠে ব্যথার যত কারণ

0
95
Spread the love

পিঠের ব্যথা অনেক কারণেই হতে পারে। তবে অনেক সময় তুচ্ছ অনেক দৈনন্দিন অভ্যাসের জন্যও এই ব্যথা হয়। সেসব বিষয়ে সাবধান থাকলে এই ব্যথা থেকে দূরে থাকা সম্ভব।

পিঠ ব্যথার কারণ

দীর্ঘসময় কুঁজো হয়ে বসে থাকা
চেয়ারের ওপর বাঁকা হয়ে বসলে বুকের মাংসপেশিতে চাপ পড়ে। ফলে কাঁধ সামনের দিকে ঝুঁকে যায়। আর বাঁকা হয়ে বসলে শক্তির অপচয় হয় বলে পিঠে ও ঘাড়ে ব্যথা হয়।

যা করবেন
এ ক্ষেত্রে ৯০ ডিগ্রি কোণ করে ও চেয়ারের চাকার কাছাকাছি বসার চেষ্টা করুন। তাহলে আর বাঁকা হয়ে বসতে হবে না। তা ছাড়া অনেক মানুষই জানেন না যে, পা ছড়িয়ে বসার কারণে পিঠ সঠিক অবস্থানে থাকে না।

কাজের ফাঁকে বিরতি না নেওয়া
কাজের ফাঁকে নিয়মিত বিরতি নেওয়ার অভ্যাস না করলে পিঠে ব্যথা হতে পারে এবং পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

যা করবেন
ক্ষেত্রে ১৩৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বসে কাজ করলে মেরুদণ্ডের মধ্যবর্তী জায়গা কম সংকুচিত হবে। তা ছাড়া আধা ঘণ্টা পরপর কিছুক্ষণের জন্য উঠে দাঁড়ালে ও হাঁটাহাঁটি করলে উপকার পাওয়া যাবে। পাশাপাশি অফিসের চেয়ার মেরুদণ্ডের বাঁকা স্থানের ভার ঠিকভাবে নিচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। কারণ বসার সময় মাথা সোজা ও মেরুদণ্ড চেয়ারের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। তা ছাড়া কম্পিউটার স্ক্রিনে তাকানোর সময় সামনে ঝুঁকা যাবে না।

মানসিক চাপ
দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র মানসিক যন্ত্রণা পিঠ ব্যথার কারণ হতে পারে। মানসিক চাপে ভুগলে পেশি, ঘাড় ও পিঠে চাপ পড়ে।

যা করবেন
প্রতিদিন শান্ত বা চাপ মুক্ত থাকার অভ্যাস করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভালো বই পড়া যেতে পারে অথবা বন্ধু বা সঙ্গীর সঙ্গে আনন্দদায়ক মুহূর্ত কাটানো যেতে পারে। গবেষণায় জানা যায়, ব্যথা কমাতে গান শোনা বেশ কাজ করে। সংগীত হরমোনের চাপ ও পেশির উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করে।

পুরোনো তোশক
পুরোনো শক্ত তোশকে ঘুমালে মেরুদণ্ডে বেশি চাপ পড়ে ব্যথা হতে পারে।

যা করবেন
একটি ভালো তোশক সাধারণত ৯ থেকে ১০ বছর টেকে। তবে ঠিকভাবে ঘুমাতে না পারলে বা পিঠে অস্বস্তি হলে পাঁচ থেকে সাত বছর অন্তর তোশক পরিবর্তন করা উচিত। যারা পাঁচ বছর অন্তর তোশক পরিবর্তন করেন তাঁদের পিঠে তুলনামূলক কম ব্যথা হয়। ক্ষেত্রে বেশি শক্ত কিংবা বেশি নরম নয় এমন তোশক কিনতে বা ব্যবহার করতে হবে।

খাদ্যাভ্যাস
যে সব খাবার হৃদ্‌যন্ত্র ভালো রাখে এবং শরীরের ওজন ও রক্তে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে সে সব খাবার পিঠের জন্যও উপকারী। যাদের পিঠ ব্যথা করে তাদের বেশির ভাগেরই ধমনি ও মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত।

যা করবেন
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। সয়া, বাদাম, শাকসবজি, বিভিন্ন প্রোটিনজাতীয় খাদ্য, যেমন মুরগি, মাছ, চর্বি ছাড়া মাংস ও ফল খেতে হবে নিয়মিত।

ভারী ব্যাগ
কাঁধে প্রতিদিন ভারী ব্যাগ বহন করলে পিঠে ব্যথা হতে পারে।

যা করবেন
হালকা ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহৃত ব্যাগের ওজন শরীরের ওজনের তুলনায় কোনোভাবেই ১০ শতাংশের বেশি হওয়া যাবে না।

বেশি উঁচু বা নিচু জুতা
হাই হিল পরলে পিঠ বাঁকা হয়ে থাকে। ফলে মেরুদণ্ডে চাপ সৃষ্টি করে ও ব্যথা হয়। ফ্ল্যাট স্যান্ডেল পায়ের পাতার প্রান্তে চাপ তৈরি করে। এতে ওজনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পিঠে ব্যথা হয়।

যা করবেন
পায়ের জন্য আরাম দায়ক ফ্ল্যাট জুতা বা স্নিকারস পরা যেতে পারে। অনেক দূর হাঁটতে হবে এ রকম কোনো জায়গায় যাওয়ার সময় হিল পরা বাদ দিন।

বাইক চালানো
নিয়মিত মোটরবাইক বা বাইসাইকেল চালালেও পিঠে ব্যথা হতে পারে। ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ বাইকার পিঠে ব্যথা অনুভব করেন।

যা করতে হবে
মোটরসাইকেল বা সাইকেল চালানো শুরু করার পর পিঠে ব্যথা শুরু হলে এই বহন নতুন করে সমন্বয় করতে হতে পারে। সাধারণ সাইকেলের ক্ষেত্রে উরুসন্ধি থেকে হ্যান্ডেল বার এক থেকে দুই ইঞ্চি সামনে থাকবে। আর মাউন্টেন বাইকের ক্ষেত্রে তিন থেকে ছয় ইঞ্চি সামনে থাকবে। প্যাডেল নিচে থাকলে সিটে বসা অবস্থায় পায়ের অবস্থান হতে হবে ঘড়ির ছয়টা বাজার কাঁটার মতো। বাইকের হাতল ধরার ক্ষেত্রে কনুই অল্প বেঁকে থাকবে।

পরামর্শ দিয়েছেন: 

ডা. এম ইয়াছিন আলী

চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে