পোলিওমাইলাইটিস কি, কেন হয় ও চিকিৎসা

0
32
Spread the love
পোলিওমাইলাইটিস (Poliomyelitis) কী?
পোলিওমাইলাইটিস, সংক্ষেপে পোলিও, একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা পোলিওভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। এটি সাধারণত মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের স্নায়ু কোষগুলিকে আক্রমণ করে এবং পক্ষাঘাত (প্যারালাইসিস) ঘটাতে পারে।
পোলিও কেন হয়?
পোলিও ভাইরাস সাধারণত মুখের মাধ্যমে (ফেকাল-ওরাল রুট) মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এবং গলা ও অন্ত্রে বৃদ্ধি পায়। আক্রান্ত ব্যক্তির মল বা মুখের তরল পদার্থের মাধ্যমে অন্যদের মাঝে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ:
•অপরিচ্ছন্ন পানি ও খাদ্য গ্রহণ
•ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির অভাব
•টিকা না নেওয়া শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের ঝুঁকি বেশি
পোলিওর লক্ষণ ও প্রভাব
পোলিওর সংক্রমণ প্রাথমিক অবস্থায় তেমন লক্ষণ দেখায় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো গুরুতর হতে পারে।
১. প্রাথমিক লক্ষণ:
•জ্বর
•মাথাব্যথা
•গলাব্যথা
•বমি
•পেশিতে ব্যথা বা দুর্বলতা
২. গুরুতর লক্ষণ:
•পেশি দুর্বল হয়ে পড়া (বিশেষ করে হাত ও পা)
•পক্ষাঘাত (Paralysis)
•শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা (যদি শ্বাসপ্রশ্বাসের স্নায়ু আক্রান্ত হয়)
•পোলিওজনিত মেনিনজাইটিস (মস্তিষ্কের আবরণে প্রদাহ)
অনেক সময় পক্ষাঘাত চিরস্থায়ী হয়ে যেতে পারে এবং এক্ষেত্রে রোগী আজীবন প্রতিবন্ধী হয়ে থাকতে পারে।
পোলিওর চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
১. চিকিৎসা
পোলিওর কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। তাই, চিকিৎসা সাধারণত লক্ষণ অনুযায়ী করা হয়:
•শ্বাসযন্ত্রে সমস্যা থাকলে ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা
•পক্ষাঘাতজনিত শারীরিক থেরাপি (Physiotherapy)
•ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ
•পেশির দুর্বলতা রোধে সহায়ক যন্ত্রপাতি (যেমন, ব্রেস)
২. প্রতিরোধ
পোলিওর বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা হল টিকাদান।
•ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন (OPV): মুখে দেওয়া হয়। এটি সংক্রমণের ঝুঁকি কমায় এবং ভাইরাসের বিস্তার রোধ করে।
•ইনঅ্যাকটিভেটেড পোলিও ভ্যাকসিন (IPV): ইনজেকশন হিসেবে দেওয়া হয়। এটি ব্যক্তিগত সুরক্ষা দেয়।
পোলিওর ভয়াবহতা
পোলিও অত্যন্ত বিপজ্জনক রোগ, বিশেষত শিশুরা এর ঝুঁকিতে থাকে। যদি সময়মতো সঠিক চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, এটি আজীবন পঙ্গুত্ব বা মৃত্যু ঘটাতে পারে। পোলিও আক্রান্ত অঞ্চলে মহামারি আকারে ছড়াতে পারে, তাই টিকাদান কর্মসূচি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সৌভাগ্যবশত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) প্রচেষ্টায় অনেক দেশ পোলিওমুক্ত হয়েছে, বাংলাদেশ ও তার মধ্যে অন্যতম, তবে, কিছু দেশ বা অঞ্চল এখনও পোলিও মুক্ত হয়নি। তাই নিয়মিত টিকাদান এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অপরিহার্য।
উপসংহার
পোলিও একটি মারাত্মক কিন্তু প্রতিরোধযোগ্য রোগ। যথাযথ টিকাদান ও পরিচ্ছন্নতা মেনে চললে এর সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব। সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার মাধ্যমে বিশ্বকে পুরোপুরি পোলিওমুক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে।
লেখকঃ
ডা. এম ইয়াছিন আলী
জনস্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক 
চেয়ারম্যান ও চীফ কনসালটেন্ট 
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল 
ধানমন্ডি, ঢাকা ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে