ক্যান্সার রোগী না হওয়া সত্ত্বেও এক বাংলাদেশি তরুণীর প্রাণ বাঁচাতে নিয়ম ভেঙেছে কলকাতার ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতাল। তবে কেবলমাত্র প্রাণ দানই নয়, নামমাত্র চিকিৎসায় জটিল অস্ত্রোপচারও করেছেন চিকিৎসকরা। অন্য হাসপাতালে যে চিকিৎসার জন্য প্রায় ৫ লাখ রুপির প্রয়োজন, সেখানে এই হাসপাতালে ফি বাবদ নেওয়া হয় মাত্র ২ হাজার ২৭০ রুপি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েক মাস আগে মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে অ্যাসিড পান করেছিল বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা ১৯ বয়সী রাবেয়া। এতে গলা থেকে খাদ্যনালি হয়ে পাকস্থলী-সবটাই পুড়ে যায়। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে যায় রাবেয়ার। মুখ পর্যন্ত খুলতে পারছিল না সে।
খাদ্যনালি সরু হতে থাকে। এরপর মেয়েটিকে নিয়ে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে ছোটাছুটি করেন মা নার্গিস। কিন্তু খরচ ব্যয়বহুল হওয়ায় মেয়ের কোনো চিকিৎসাই করাতে পারেননি তিনি। এতে করে প্রতিকার তো দূরের কথা, সমস্যা আরও গভীরতর হতে থাকে। এই অবস্থায় মেয়েকে নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার (সরোজ গুপ্ত ক্যান্সার সেন্টার অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট)-এ আসেন নার্গিস। এটি ক্যান্সার হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও মেয়ের প্রাণ বাঁচাতে হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছে কাকুতি মিনতি করেন মা। সৌজন্যবোধ দেখিয়ে মায়ের সেই আকুতি ফেরাতে পারেননি চিকিৎসক ডা. অর্ণব গুপ্তা।
কলকাতায় এসে হাসপাতালের পাশেই বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন মা ও মেয়ে। সেখান থেকেই চলত যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ক্যান্সারের চিকিৎসক ডা. গুপ্তা বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে সাধারণ ক্যান্সারের চিকিৎসা হয়। কিন্তু ক্যান্সার রোগী নয়- এমন এক মৃত্যুপথযাত্রীর অস্ত্রোপচারের জন্য মাত্র ২ হাজার ২৭০ রুপি খরচ করতে হয়। অন্য জায়গায় এই চিকিৎসার জন্য ৫ লাখ রুপি খরচ হতো।’ তিনি বলেন, ‘মেয়ের প্রাণ বাঁচাতে মা হাতজোড় করে মিনতি করেন, আমরা তাকে ফেরাতে পারিনি। আর সেই কারণেই রোগীকে বাঁচাতে হাসপাতালের নিয়ম ভঙ্গ করতে হয়। অস্ত্রোপাচারের পর ওই রোগী এখন অনেকটাই সুস্থ আছেন।’