আজ বিশ্ব অস্টিওপরোসিস দিবস, হাড় সুস্থ রাখতে সচেতন থাকুন!

0
1045
osteoporosis day
Spread the love

শরীরের ওজন নিয়ে এখন যতটা মাথাব্যথা আমাদের, ততটা কিন্তু হাড় নিয়ে নয়। অথচ এই হাড়ই কিন্তু বয়সকালে ধরে রাখবে আপনাকে। বয়স, জিনগত কারণ, মেনোপজ, অনিমিয়ত জীবন যাপনে দেখা দেয় অষ্টিওপোরোসিস মতো হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়ার রোগ। ওজন কমানোর ঝোঁকে অল্পবয়সীদের মধ্যে বাড়ছে অস্বাস্থ্যকর ডায়েটের প্রবণতা। যার ফলে ওজন কমলেও ভেঙে যাচ্ছে শরীর। দুর্বল হচ্ছে হাড়। স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ছে অস্টিওপরেসিসের প্রকোপ। এই অবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ২০ অক্টোবর বিশ্ব অষ্টিওপোরোসিস দিবস ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

একটু সচেতন থেকে যদি মেনে চলা যায় সঠিক ডায়েট ও শরীরচর্চার রুটিন, তবে অষ্টিওপোরোসিস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমানো যেতে পারে।

অষ্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগ কি?
হাড়ের ভেতরের ঘনত্ব বাড়া-কমা একটি চলমান প্রক্রিয়া। ১৬-১৮ বছর বয়সের দিকে হাড়ের দৈঘ্য বৃদ্ধি হওয়া বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু ২০ বছর বয়স পর্যন্ত হাড়ের ভিতরের ঘনত্ত ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে । ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত হাড়ের গঠন ও ক্ষয় একসঙ্গে একই গতিতে চলতে থাকে। ৪০ বছর বয়সের পর থেকে প্রাকৃতিক নিয়মে বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড় ক্ষয়ের মাত্রা একটু একটু করে বাড়তে থাকে। তাই নির্দিষ্ট বয়সে হাড়ের ক্ষয় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া । হাড়ের এই ক্ষয় বাড়তে বাড়তে হাড় যখন নরম ও ভঙ্গুর হয়ে যায় সেই অবস্থাকে অষ্টিওপোরোসিস বলা হয় ।

অষ্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগের প্রাদুর্ভাব:
এই রোগে মহিলা ও পুরুষ উভয়ই আক্রান্ত হয়, তবে মহিলাদের বিশেষ করে মেনোপজ বা ঋতুস্রাব বন্ধের পর শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায়, যার ফলে হাড়ের ক্ষয়ের মাত্রা বেড়ে যায় এবং পুরুষের টেস্টোস্টেরেন হরমোন ৭০ বছর বয়সে কমতে শুরু করে তখন হাড়ের ক্ষয় শুরু হয় ।
তবে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে সারাবিশ্বে ৫০ বছরের অধিক বয়সের প্রতি ৩ জন মহিলার মধ্যে ১ জন এবং প্রতি ৫ জন পুরুষের ১ জন অষ্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগে আক্রান্ত । যারা অষ্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হন তাদের মধ্যে ৮০ ভাগই মহিলা এবং ২০ ভাগ পুরুষ ।

কাদের অষ্টিওপোরোসিসের ঝুকি বেশী?
বর্তমানে অষ্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগ সারা বিশ্বব্যাপী বয়স্ক জনগোস্টীকে হুমকির সম্মুখীন করে দিয়েছে
অষ্টিওপোরোসিসের ঝুঁকিপূর্ণরা হলেনঃ
১। মেনোপজ বা ঋতু স্রাব বন্ধ পরবর্তী মহিলারা
২। এশীয় বা ককেশীয়ানরা
৩। যাদের পরিবারের কারো অষ্টিওপোরোসিস আছে
৪। যারা পর্যাপ্ত পরিমান ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহন করেন না
৫। যারা ব্যায়াম করেন না
৬। যাদের ওজন কম
৭। ধূমপায়ীরা ও এলকোহল পানকারীরা
৮। কিছু অসুখ অষ্টিওপোরোসিসের ঝুকি বাড়িয়ে দেয় ।
যেমন – রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস , যাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কম, যাদের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কম, যাদের শরীরে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেশী, যাদের শরীরে প্যারাথাইরয়েড হরমোনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেশী , যেসব রোগে খাবারের শোষণ ব্যাহত হয়। যেমন – celiac disease, যে সব রোগে অনেকদিন শুয়ে থাকতে হয় । যেমন – ব্রেইন স্ট্রোক, এইচ আই ভি ইত্যাদি।

৯। কিছু ঔষধ ও অষ্টিওপোরোসিসের ঝুকি বাড়িয়ে দেয়।
যেমন – –
– তিন মাসের অধিক সময় ধরে কর্টিকস্টেরয়েড ট্যাবলেট খেলে
– খিচুনী – বিরোধী ঔষধ খেলে
– স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ
– প্রোস্টেড ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ ইত্যাদি।

অস্টিওপোরোসিস নির্ণয়ের পরীক্ষা:
অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় ও দুর্বল রোগ সহজেই নির্ণয় করা যায়
১। ক্লিনিক্যাল উপসর্গ এবং স্বাভাবিক পর্যবেক্ষণ এর মাধ্যমে ঃ
চিকিৎসক আপনার শারীরিক বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল উপসর্গ পর্যবেক্ষণ এবং পূর্ববর্তী রোগ ও ঔষধ গ্রহনের ইতিহাস এবং বিভিন্ন ঝুকি পর্যবেক্ষণ করে আপনার অস্টিওপোরোসিস আছে কিনা নির্ণয় করতে পারেন।
২। হাড়ের এক্স-রে ঃ
চিকিৎসক আপনার শরীরের হাড়ের এক্স-রে করে তাদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তারা আপনার হাড়ের ঘনত্ব বুঝতে পারেন ।
৩। বি এম ডি(বোন মিনারেল ডেনসিটি) বা হাড়ের ঘনত্ব নিরনয় পরীক্ষা ঃ
আপনার অস্টিওপোরোসিস হয়েছে কিনা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে জানতে বি এম ডি (বোন মিনারেল ডেনসিটি) বা হাড়ের ঘনত্ব নির্ণয় পরীক্ষা করা হয়। এটি সাধারণ এক্সরে স্ক্যানিং এর মত একটি স্ক্যান বা পরীক্ষা যা সম্পূর্ণ ব্যাথামুক্ত, সহজ এবং যেটা খুব সামান্য রেডিয়েশন ব্যবহার করে করা যায় ।

অষ্টিওপোরোসিস এর পরিণতি কি?
অষ্টিওপোরোসিস একটি নীরব ক্ষয় রোগ। প্রাথমিক অবস্থায় অষ্টিওপোরোসিস এর তেমন কোন উপসর্গ দেখা দেয় না। অষ্টিওপোরোসিস তখনই যন্ত্রণাদায়ক হয় যখন হাড়ে ফাটল ধরে বা হাড় ভেঙ্গে যায় । অষ্টিওপোরোসিসে হাড়ের ঘনত্ব কমে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়, ফলে দেখা যায় যে খুবই সামান্য পরিমাণ আঘাত লাগলে বা দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে গিয়েই শরীরের বিভিন্ন জায়গার হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে। সাধারণত প্রথমবার হাড় ভাঙ্গার আগে কোন উপসর্গই দেখা যায় না । অষ্টিওপোরোসিসের কারনে শরীরের যেকোনো জায়গার হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে তার মধ্যে মেরুদন্ডের হাড়, নিতম্ব বা হিপ জয়েন্ট, কবজি বা রিস্ট জয়েন্ট এর হাড় ভাঙ্গার পরিমাণ বেশি লক্ষ্য করা যায়।

অস্টিওপোরোসিস এর চিকিৎসা কি?
অস্টিওপোরোসিস এর চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হল আপনার হাড়কে শক্তিশালী করে তোলা, হাড়ের ক্ষয়ের হার কমানো ও সর্বাপুরী হাড় ভাঙ্গার ঝুকি কমানো।
অস্টিওপোরোসিস এর চিকিৎসায় যে সব ঔষধ ব্যাবহার হয়, তার মধ্য উল্ল্যেখযোগ্য –
এল্যেন্ড্রনেট সোডিয়াম, রিসড্রনেট সোডিয়াম, ইবান্ড্রনিক এসিড , সিলেক্টিভ ইস্ট্রজেন রিসেপ্টর মডুলেটর, প্যারাথাইরয়েড হরমোন চিকিৎসা, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি ইত্যাদি।

তবে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করুন অস্টিওপোরোসিস মুক্ত থাকুন ।

লেখকঃ
ডাঃ এম ইয়াছিন আলী
বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান – ফিজিওথেরাপি বিভাগ
প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
চীফ কনসালটেন্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল,
ধানমন্ডি, ঢাকা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে