বৃটেনে হাসপাতালের বাইরে মৃত্যু পথযাত্রী ও স্বজনদের আর্তনাদ

0
772

বৃটেনের হাসপাতালসমূহে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। কোথাও কোন আসন খালি নেই। মানুষের আহাজারীতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠেছে।  হাসপাতালসমুহের বাইরে মৃত্যু পথযাত্রী ও তাদের স্বজনদের আর্তনাদ চলছে। এই করুণ চিত্র না দেখে আন্দাজ করা কঠিন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সারা দেশের হাসপাতাল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান এনএইচএস ট্রাস্টের গলদঘর্ম দশা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গতরাতে ‘তিক্ত অনুশোচনা’ প্রকাশ করে মিউট্যান্ট কোভিডের নতুন ‘বাস্তবতা’ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। এপ্রিলের পর থেকে বৃটেনে সবচেয়ে ভয়াবহ মৃত্যুর সংখ্যা ছিল গতকাল। ২৪ ঘন্টায় ৯৮১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন আরো ৫০,০৩৩জন।

ফলে মধ্যরাত থেকে সারা দেশে আরো কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। আজ থেকে দেশের তিন চতুর্থাংশ এলাকার ৪৪ মিলিয়নেরও বেশি লোককে টিয়ার-৪ এর আওতায় নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে লন্ডন ও পার্শ্ববর্তী এলাকার সাথে সাউথ ইস্ট, মিডল্যান্ড, নর্থ ইস্ট, নর্থ ওয়েস্ট ও সাউথ ওয়েস্টের আংশিক যুক্ত হয়েছে।  এছাড়া আইল অফ স্কিলিতে মাত্র ২,০০০ লোক বাদ দিয়ে লিভারপুলসহ বাকি সমস্ত অঞ্চল টিয়ার-৩ বিধিনিষেধের আওতাভূক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

করোনা ভাইরাসের ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলের চিকিৎসকরা বলেছেন, তারা ‘অত্যন্ত ভয়ঙ্কর’ পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন। বহু মানুষ প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন। নতুন রূপের করোনা ভাইরাস মিউট্যান্ট কোভিড স্ট্রেনের কারণে হাসপাতালের কর্মী, বিছানা, অক্সিজেন সব কিছুতে তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের রাখার জন্য হাসপাতালসমূহের ‘ওয়ার্ডে কোনও জায়গা নেই’। ডাক্তার ও নার্সরা  নিজেদের জীবন বাজি রেখে হাসপাতালের বাইরে রাস্তার সারি বেঁধে রাখা অ্যাম্বুলেন্সে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। মানুষকে বাঁচানোর জন্য তাদের প্রাণপন প্রচেষ্টা  অবিস্মরণীয়।

সর্বত্র অক্সিজেন ও স্টাফ সংকট মহাবিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অস্থিতিশীল হারে বাড়ছে। এসেক্স ঘোষণায় প্রধান ছয়টি হাসপালের পক্ষ থেকে এই পরিস্থিতিকে মেজর ইনসিডেন্ট বা বড় ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। জরুরি রোগীর সংখ্যা কোভিড-১৯ প্রথম তরঙ্গের শীর্ষ সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি। হাসপাতালগুলির এই রোগীদের সেবার জন্য সাধারণ অপারেশন ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করতে হচ্ছে। হাসপাতালের কর্মী, বিছানা ও অক্সিজেনের তীব্র সংকটের ফলে কর্তৃপক্ষ আইসিইউ রোগীদের লন্ডন থেকে ইয়র্কশায়ারে স্থানান্তরিত করার জন্য অনুরোধ করেছেন।

অ্যাম্বুলেন্সগুলি গতকাল থেকে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসজুড়ে হাসপাতালের বাইরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। পূর্ব লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল এবং রমফোর্ডের কুইনস হাসপাতালের বাইরে, ক্যান্টে রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালের সামনে সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব ফুটেজ ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। এনএইচএস প্রধানরা বলেছেন, অসুস্থতা এবং স্ব-বিচ্ছিন্নতার (আইসোলেশন) কারণে কিছু হাসপাতালের নার্সদের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।  অনেক ট্রাস্ট তাদের স্টাফদের জানুয়ারি মাসে ছুটি বা অবকাশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করার চিন্তা করছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়-অ্যাস্ট্রাজেনেকা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদনের পরে ডাউনিং স্ট্রিটে প্রেস কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার জোনাথন ভ্যান-টম আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, স্বাভাবিকতায় ফিরে আসার প্রত্যাশায় ভ্যাকসিনের রোলআউটকে ব্যাপক আকারে বাড়িয়ে দেয়া হবে। প্রফেসর ভ্যান ট্যাম বলেছেন, এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে আমাদের জনগণকে ফিরিয়ে আনতে সরকার ও চিকিৎসা বিভাগ বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে