বেশি বয়সে গর্ভধারনের ঝুঁকিগুলো কী?

0
785
Spread the love

মা হওয়া একজন নারীর স্বপ্ন। কিন্তু কোনো কারণে যদি সেই গর্ভাধারণ মায়ের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়, তাহলে সেটাকে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা বলা হয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের দেশে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ গর্ভধারণ ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য অনেকগুলো বিষয় কাজ করে। মায়েদের ব্যক্তিগত কিছু ফ্যাক্টর, পূর্বের সন্তান প্রসবের সময় হওয়া জটিলতা, গর্ভাবস্থায় হওয়া কোনো রোগের কারণেও হতে পারে।

এছাড়া পূর্বের সার্জিক্যাল ইতিহাস, গর্ভাবস্থায় কোনো অসুস্থতার কারণেও হতে পারে। এর বাইরে বয়সের কিছু কারণও আছে। আঠারো বছর বা এর কম বয়সে কোনো নারী গর্ভধারণ করতে গেলে কিছু জটিলতা হতে পারে। গর্ভকালীন সময় ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলেও ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের গাইনি অ্যান্ড অব্স বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. নাদিরা হক এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, থাইরয়েড জাতীয় সমস্যা, গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা, জরায়ু টিউমারের কারণে সার্জারি এবং একাধিক গর্ভপাতের ইতিহাস থাকেলে ঝুঁকির কারণ হতে পারে। মৃত বা ত্রুটিপূর্ণ শিশু জন্ম দিয়ে থাকলে। আগের সন্তান প্রসবের সময় যদি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে বা গর্ভফুল আটকে থাকে। গর্ভে শিশুর অবস্থান অস্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে। গর্ভকালীন হটাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে, গর্ভকালিন খিঁচুনি দেখা দিলে ঝুঁকি তৈরি হয়।

গর্ভধারণপূর্ব কাউন্সিলিং প্রসঙ্গে ডা. নাদিরা হক বলেন, গর্ভধারণপূর্ব কাউন্সিলিং পৃথিবীর অন্যান দেশে অনেক জনপ্রিয়। আমাদের দেশেও কাউন্সিলিং শুরু হয়েছে। এটি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। কোনো দম্পতি সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনার সময় একজন গাইনোকোলোজিস্ট বা প্রসূতি চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়াকে কাউন্সিলিং বলা হয়। এসময় দেখা হয় তিনি শারীরিক বা মানসিকভাবে গর্ভধারণের জন্য উপযুক্ত আছেন কি না।

তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ রোধে গর্ভধারণপূর্ব কউন্সিলিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারাণ  অনেকেই জানে না যে, তার কোনো রোগ আছে কি না। এই অবস্থায় গর্ভধারণ ঝুঁকির কারণ হতে পারে। ডায়েবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এনে গর্ভধারণ করলে ঝুঁকি কমে যায়। ত্রুটিযুক্ত শিশু জন্মের ঝুঁকি কমে যায়। কিছু ওষুধ গর্ভাবস্থায় নেওয়া যায় না সেই রোগগুলো আগেই নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এছাড়া হার্টের সমস্যা থাকলে কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের পর গর্ভাধারণ অনেকটাই ঝুঁকি কমায়।

গর্ভাবস্থায় চেকআপ

ডা. নাদিরা হক বলেন, গর্ভাবস্থায় প্রত্যেক মায়ের চেকআপ করাতে হবে। এক্ষেত্রে সাধারণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ মায়েদের চেকআপ আলাদা হয়ে থাকে। সাধারণ মায়েদের ক্ষেত্রে ২৮ সপ্তাহ পর্য়ন্ত প্রতিমাসে একবার, ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত মাসে দুই বার এবং ৩৬ সপ্তাহের পর প্রতি সপ্তাহে একবার করে চেকআপে আসতে বলা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, গর্ভাবস্থায় কমপক্ষে চারবার চেকআপের আওতায় আসতে হবে।

একজন মা গর্ভবতী হওয়ার ১৬ সপ্তাহের মধ্যে একবার চেকআপ করাবেন। দ্বিতীয় চেকআপ ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে এবং তৃতীয় চেকআপ ৩২ সপ্তাহের মধ্যে করাবেন। এছাড়াও ৩৬ সপ্তাহের মধ্যে তৃতীয় চেকআপের আওতায় আসতে হবে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ ময়েদের ক্ষেত্রে আরও বেশি চেকআপ দরকার।

গর্ভধারনের জন্য বয়সসীমা কত?

এ প্রসঙ্গে ডা. নাদিরা হক বলেন, একজন নারীর গর্ভধারনের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় ২০-৩০ বছর। যদিও ৩৫ বছর পর্যন্ত গর্ভধারণ নিরাপদ।  তবে ১৮ বছরের আগে গর্ভধারণ কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে।

তিনি বলেন,  সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৫ শতাংশ মায়ের ক্ষেত্রে ১৮ বছরের আগে গর্ভধারনে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এসময় শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরোপুরি তৈরি থাকে না। অনেকক্ষেত্রেই মায়েদের প্রথম গর্ভধারনটি নষ্ট করতে হয়। কম বয়সে গর্ভধারনে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ বা খিঁচুনির মতো সমস্যাও হতে পারে। অপরিণত শিশু জন্ম দেওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও কম বয়সে গর্ভধারনে সন্তান প্রসব পরবর্তী বিভিন্ন জটিলতায় পড়েতে হয় মায়েদের।

বেশি বয়সে গর্ভধারনের ঝুঁকিগুলো কী?

ডা. নাদিরা হক বলেন, সাধারণত ৩০ বছর বয়সের পর গর্ভধারন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। বর্তমানে মেয়েদের বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে সবচেয়ে ভালো সময়ে গর্ভধারন করতে পারছেন না। বেশি বয়সে গর্ভধারন করতে গিয়ে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়। যেমন, গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ, প্রি-এক্লাম্পসিয়া, এক্লাম্পসিয়া, ডায়াবেটিস সমস্যা। এছাড়াও ৩৫ বছরের বেশি বয়সে গর্ভধারণ করলে ত্রুটিযুক্ত শিশু জন্মের আশংকা বেশি থাকে, সিজারিয়ানের প্রয়োজন বেশি হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে