ভ্যাকসিনে উৎসাহ মাস্ক ব্যবহারে উদাসীন

0
952

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়লেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে এখনো চরম উদাসীন নগরবাসী। রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে রোগতত্ত্ববিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বারবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু তা আমলেই নিচ্ছে না অধিকাংশ মানুষ।

রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, মার্কেট, গণপরিবহনে মাস্ক পরিধান না করেই অধিকাংশ মানুষ চলাচল করছে। আবার অনেকে মাস্ক পরছে কিন্তু সঠিকভাবে না। তারা মাস্ক থুতনির নিচে নামিয়ে রাখছে। মাস্ক না পরায় ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা ও সতর্ক করলেও টনক নড়ছে না।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে (৯ নভেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর) রাজধানীসহ সারাদেশে ৬২ হাজারের বেশি নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৮৩৮ জনের। গত ৯ নভেম্বর পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল চার লাখ ২১ হাজার ৯২১ জন। এদিন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ছয় হাজার ৯২ জন। এক মাসের ব্যবধানে ৯ ডিসেম্বর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চার লাখ ৮৪ হাজার ১০৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে ছয় হাজার ৯৩০ জনে দাঁড়িয়েছে। শনাক্ত রোগী ও মৃত্যুবরণকারীদের ৫০ শতাংশেরও বেশি রাজধানীর বাসিন্দা।

বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক ও রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, করোনাভাইরাস ঠেকাতে ভ্যাকসিনের চেয়ে মুখে মাস্ক পরিধান করা বেশি কার্যকর। সরকার ভ্যাকসিন আনার চেষ্টা করবে। যতদিন ভ্যাকসিন না আসে ততদিন মুখে মাস্ক পরিধান, তথা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া উপায় নেই।

কিন্তু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মানছে না বেশিরভাগ মানুষ। পরামর্শ না মানলেও করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। কোন কোন দেশ ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা করছে, কোন দেশ উৎপাদনে এগিয়ে আছে, ভ্যাকসিন কেনার ব্যাপারে সরকার কী করছে ইত্যাদি নিয়ে খোঁজ-খবর রাখছে। কিন্তু ভ্যাকসিন আসার আগে পর্যন্ত এবং ভ্যাকসিন আসার পরও যে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই, সে সম্পর্কে তারা উদাসীন।

মাস্ক পরেননি কেন— প্রশ্ন করতেই লজ্জিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে এক তরুণ ফুল বিক্রেতা ‘আছে তো’ বলেই প্যান্টের পকেট হাতড়ে দুমড়ে-মুচড়ে থাকা মাস্ক বের করে তাড়াতাড়ি মুখে লাগালেন।

মাস্ক খুলে রাখার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘ফুল বেচাকেনার সময় কাস্টমারের সাথে অনেক কথা বলতে হয়। মুখে মাস্ক লাগিয়ে কথাবার্তা বলা যায় না, কাস্টমারও বোঝে না। তাছাড়া অস্বস্তিও লাগে। এ কারণে খুলে পকেটে রেখেছি।’

আশপাশে তাকিয়ে দেখা যায়, হাতেগোনা কিছুসংখ্যক মানুষ ছাড়া সিংহভাগের মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্বও মানছে না কেউ। বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর শাহবাগের ফুলের বাজারে এ দৃশ্য দেখা যায়।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় বেশকিছু দিন ভয়াবহ মন্দা থাকলেও, বর্তমানে তা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। আগের মতো না হলেও বেচাকেনা চলছে। প্রতিদিন ভোরে শাহবাগের শিশু পার্ক সংলগ্ন মার্কেট ও ফুটপাতে গোলাপ, রজনীগন্ধা, অর্কিড, জারবারা, গ্লাডিওলাস ও গাঁদা ফুলসহ আরও হরেক রকম ফুলের বাজার বসে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক নেই। কাছাকাছি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কেনাবেচা চলছে।

গুলিস্তান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীতের প্রকোপ দেখা দেয়ায় ফুটপাতসহ বিভিন্ন মার্কেটে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। কিন্তু ক্রেতা ও বিক্রেতাদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। কেউ কেউ থুতনির নিচে মাস্ক নামিয়ে রাখছে।

সুলতান নামের ফুটপাতের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা এমনিতেই খারাপ। দুদিন ধরে ক্রেতার ভিড় বাড়ছে। এ সময় মাস্ক পরে ঠিকমতো কথাবার্তা বোঝাতে না পারায় কাস্টমার দ্রুত চলে যায়। তাছাড়া বেশিক্ষণ মাস্ক পরে থাকলে শ্বাস-প্রশ্বাস আটকে আসে।’

নিউমার্কেট পোস্ট অফিস সংলগ্ন ক্রোকারিজ মার্কেটের ব্যবসায়ী হাজি মনসুর আলম এক ক্রেতার সঙ্গে একটি গ্লাস সেটের দাম নিয়ে কথা বলছিলেন। দোকানে বসে থাকার সময় তার মুখে মাস্ক ছিল না। ক্রেতার সঙ্গে কথা বলার সময় মাস্কটি থুতনির নিচে নামিয়ে নেন তিনি।

মাস্ক খুলে কেন কথা বলছেন— জিজ্ঞাসা করলে হাজি মনসুর বলেন, ‘টানা কতক্ষণ মাস্ক পরে থাকা যায় বলুন? সারাদিনই কাস্টমারের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে হয়। এ কারণে ঝুঁকি জেনেও মাস্ক নামিয়ে কথা বলি।’

তিনি জানতে চান, ‘করোনার ভ্যাকসিন কবে আসবে? এটা কি বাজারে বিক্রি হবে? আর এভাবে মাস্ক মুখে লাগিয়ে থাকতে ভালো লাগে না। করোনা ভ্যাকসিন বাজারে এলে দাম বেশি হলেও কিনব।’

উত্তরা আশকোনা এলাকার বাসিন্দা একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাজিদুল হক বলেন, তার এক আত্মীয় কানাডায় থাকেন। তিনি নিয়মিত সেখানকার ভ্যাকসিন সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখেন। সারাদিন বিভিন্ন ক্লায়েন্ট ও অফিসের মিটিং থাকে। মাস্ক পরলে দম বন্ধ হয়ে আসে।

তিনি আরও বলেন, মাস্ক পরার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে কবে যে ভ্যাকসিন আসবে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে