ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ

0
831

করোনাভাইরাস রুখতে ভ্যাকসিনের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব। এর মধ্যেই তিনটি কোম্পানি ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনে সফলতা পেয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে দেশে ভ্যাকসিনের প্রথম ৫০ লাখ ডোজ আসবে, যা ২৫ লাখ মানুষকে দেওয়া যাবে। তবে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থাপনা ও অগ্রাধিকার তালিকা তৈরিই এখন চ্যালেঞ্জ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) সূত্র জানিয়েছে, কভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় পর্যায়ে তিনটি কমিটি গঠিত হয়েছে। প্রথমটি কভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটি, এই কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পরের কমিটি টিকা ব্যবস্থাপনা ওয়ার্কিং গ্রুপ। এর নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব। জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় কমিটির নাম কভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি কমিটি। এর নেতৃত্বে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন)। টিকাবিষয়ক জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক। সদস্য সচিবের দায়িত্বে থাকবেন জেলা সিভিল সার্জন। কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন জেলা সদর আসনের সংসদ সদস্য। উপজেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। আর সদস্য সচিব থাকবেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা। উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকবেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। করোনার টিকাবিষয়ক খসড়া জাতীয় পরিকল্পনাতেও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করার কথা বলা আছে। সেসব কমিটির প্রধান জেলা সিভিল সার্জন বা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তাতে রাখা হয়নি। উপজেলা কমিটির চার দফা কাজের কথা বলা হয়েছে। প্রথম কাজ মহামারী মোকাবিলায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখসারির কর্মী, রোগ প্রতিরোধক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী, বয়োজ্যেষ্ঠ জনগোষ্ঠী, দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশের সব মানুষের জন্য একসঙ্গে টিকার ব্যবস্থা করা সম্ভব না। যে টিকা দেশে আসবে, তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়ার চিন্তা চলছে। অগ্রাধিকারের এই তালিকা তৈরির কাজ জটিলতা তৈরি করতে পারে। প্রতি ব্যক্তির টিকার দুটি ডোজের প্রয়োজন পড়বে। তাই সারা দেশে এই অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় ভ্যাকসিন কার্যক্রম সম্পন্ন করাই বড় চ্যালেঞ্জ।’

১৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় কমিটির বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এসব কমিটিতে ১৬ জন করে সদস্যের উল্লেখ আছে। জেলা কমিটির পাঁচটি ও উপজেলা কমিটির চারটি সুনির্দিষ্ট কাজের কথা চিঠিতে উল্লেখ আছে। মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে ভ্যাকসিন বিষয়ক জাতীয় পরিকল্পনা। সেটা চলে গেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে।

কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে একটা ট্রায়াল হওয়া দরকার ছিল। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী কীভাবে ভ্যাকসিনে রিঅ্যাক্ট করবে, সেটা দেখতে হতো। এমনকি অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রোজেনকার ভ্যাকসিনেরও ট্রায়াল হয়ে আসা উচিত। এখন লাখ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে, কিন্তু তাদের মধ্যে যদি কারও সমস্যা হয়, সেটা হবে দুঃখজনক। তাই পরামর্শক কমিটি দেখেশুনে বাছাই করে পরীক্ষা করে নিতে বলেছিল। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনে বাংলাদেশে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে করণীয় কী হবে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গণমাধ্যমকে বলেন, এ ভ্যাকসিনে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। ভারতের জনগণ আর আমরা একই রকমের। একই আবহাওয়া, একই খাদ্যাভ্যাস। কাজেই আমরা আশা করি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে