মাংকিপক্স : আতঙ্ক নয় দরকার সচেতনতা

0
360
Spread the love

সাম্প্রতিক সময়ের আলোচনায় আবারও একটি ভাইরাল ইনফেকশনের কথা শোনা যাচ্ছে, যার নাম ‘মাংকিপক্স’। আফ্রিকার বনাঞ্চলে এটির উৎপত্তি হলেও ইউরোপ-আমেরিকায়ও রোগটি ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এটি পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার একটি পুরনো রোগ হলেও সম্প্রতি খুবই অল্প সময়ের ব্যবধানে বিশ্বের ২১টি দেশে ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সামনে এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।

তবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মাংকিপক্সের কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি।

মাংকিপক্স কী?

মাংকিপক্স হলো অর্থোপক্স গণের অন্তর্ভুক্ত একটি ভাইরাস। এটি মূলত একটি দ্বি-সূত্রক ডিএনএ ভাইরাস। এর বাইরের আবরণ লিপিডে মোড়ানো। এটি একটি ‘জুনোটিক’ ভাইরাস। রোগটি সাধারণত মৃদু অসুস্থতা সৃষ্টি করে। বেশির ভাগ আক্রান্ত ব্যক্তিই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। এটি বিশেষ ধরনের একটি বসন্ত রোগ, যা ‘মাংকিপক্স’ নামের ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়ায়। সর্বপ্রথম বানরের শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছিল বলে ভাইরাসটির নামকরণ করা হয় মাংকিপক্স। পরবর্তী সময়ে বানর ছাড়াও অন্যান্য বন্য প্রাণীর দেহেও ভাইরাসটি পাওয়া যায়। আগে এটি শুধু আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে দেখা দিলেও, এখন বিশ্বব্যাপী রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে এবং এটিই উদ্বেগের কারণ।

কিভাবে ছড়ায়?

এটি খুব সহজে একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে না এবং এখনো মনে করা হচ্ছে, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই মাংকিপক্স ছড়ানোর সম্ভাবনা কম। বিভিন্ন প্রাণী, বিশেষত বন্য প্রাণী থেকে এই রোগ ছড়ায়, এরপর অন্য কোনো প্রাণী থেকে মানুষ সংক্রমিত হলে মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াতে পারে রোগটি।

এর সংক্রমণ কভিডের মতো মারাত্মক নয়। এ ভাইরাস একজন থেকে আরেকজনের দেহে ছড়াতে অনেকটা সময়ের জন্য ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসার প্রয়োজন পড়ে। সংক্রমিত প্রাণীর কামড়, আঁচড় বা তার রক্ত, শরীর নিঃসৃত অন্যান্য তরল, যেমন—লালারস বা পশমের সংস্পর্শেও যে কেউ মাংকিপক্সে আক্রান্ত হতে পারে। কাঠবিড়ালি, ইঁদুরসহ তীক্ষ দাঁতের পশুর থেকেই বেশি ছড়ায় মাংকিপক্স।

সংক্রমিত প্রাণীর মাংস সঠিক উপায়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে রান্না ছাড়া খেলেও এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাংকিপক্স সংক্রমিত কারো ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে তা অন্যের দেহে ছড়াতে পারে। ফাটা বা কাটা চামড়া, চোখ, নাক বা মুখ দিয়ে মানুষের দেহে ঢুকতে পারে মাংকিপক্স ভাইরাসটি। ফুসকুড়ি রয়েছে এমন কারো ব্যবহৃত পোশাক, বিছানা অথবা তোয়ালে স্পর্শ করলেও একজন ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

লক্ষণ

প্রাথমিক পর্যায়ে জ্বর, মাথা ব্যথা, গা ব্যথা ও ক্লান্তি দিয়ে অসুখটি শুরু হয়। এরপর দেহের বিভিন্ন লসিকাগ্রন্থি ফুলে ওঠে। সঙ্গে ছোট ছোট ফোসকা বা গোটার মতো ক্ষতচিহ্ন দেখা দিতে থাকে। প্রথমে মুখে, এরপর ধীরে ধীরে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে সেই ক্ষত। ফোসকার মতো ক্ষতটি শুকিয়ে গেলেও এর দাগ থেকে যায়।

হাম, বসন্ত ও সিফিলিসের কিছু কিছু লক্ষণের সঙ্গে এই রোগের উপসর্গগুলোর কিছুটা মিল পাওয়া যায়। বিশেষত বসন্তের গোটার মতোই এতে গুটি গুটি ফোস্কা হতে দেখা যায়। এতে রোগের প্রাথমিক উপসর্গগুলো চিনতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই রোগীর দেহে যেকোনো ধরনের ক্ষত দেখলেই সতর্ক হতে হবে। সাধারণত বেশির ভাগ মানুষ ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে এ রোগ থেকে সেরে ওঠে।

করণীয়

বেশির ভাগ ভাইরাল ডিজিজের মতোই মাংকিপক্সেরও নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসার পাশাপাশি শরীরের মৌলিক পরিচর্যা নেওয়া জরুরি। তবে সংক্রমণ প্রতিহত করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে মাংকিপক্স নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো বার্তা না থাকলেও যেকোনো সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই।

লেখক : ডা. শাফেয়ী আলম

মেডিক্যাল অফিসার

কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে