লাউয়াছড়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বানর

0
955
Spread the love

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ। চলতি বছর প্রথম ওয়েভে এই ভাইরাসে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলায় সরকার ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি গ্রহণ করেছে। তবু প্রতিদিনই সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের মানুষও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আর এই একই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বনাঞ্চলের বানরজাতীয় প্রাণীদের। সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক এক গবেষণাপত্রে এই আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। গবেষণায় বায়োমেডিকেল পরীক্ষাগারে তিন প্রজাতির বানরকে করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এনে দেখা গেছে, বানরের শরীরে করোনা আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ রয়েছে। এতে করে করোনাঝুঁকিতে রয়েছে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বানর প্রজাতিরা। এ উদ্যানে খুব কাছে থেকেই বানর দেখা যায়। এ ছাড়া মুন্নি নামে (স্থানীয়দের দেওয়া নাম) একটি বানর বাচ্চাসহ লাউয়াছড়া উদ্যানের প্রবেশপথ ও আশপাশ এলাকায় বিচরণ করে। মানুষের দেওয়া খাবার খাওয়া তার নিত্যদিনের অভ্যাস। কখনো কখনো সে মানুষের পিঠেও চড়ে বসে।

সম্প্রতি খ্যাতনামা নেচার সিরিজের অন্তর্গত কমিউনিকেশন বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে খুব স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, বানরজাতীয় প্রাণীরাও এই করোনাভাইরাসের প্রতি সংবেদনশীল। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, গরিলা কিংবা শিম্পাঞ্জির মতো বড় বানরজাতীয় প্রাণীদের পাশাপাশি আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশে যেসব বানর প্রজাতির প্রাণী পাওয়া যায়, সেগুলোর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। এদের শরীরে মানুষের মতোই এসিই-২ প্রোটিন রয়েছে, যার মাধ্যমে করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে পারে। ১ নভেম্বর থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসহ খুলে দেওয়া হয়েছে অন্য উদ্যানগুলো। উদ্যানে প্রবেশে প্রধান শর্ত দেওয়া হয়েছে মুখে মাস্ক পরা। এ ছাড়া উদ্যানের ঘোরাফেরা করতে মানতে হবে সামাজিত দূরত্ব। এখন প্রতিদিনই এ উদ্যানে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করছেন। শুক্রবার বিকালে সরেজমিন লাউয়াছড়া উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, ভিতরে বেশির ভাগ দর্শনার্থীর মুখেই মাস্ক নেই। নেই সামাজিক দূরত্ব। তারা মুখে মাস্ক না পরেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন বনাঞ্চল। জানা যায়, এই উদ্যানে রয়েছে ছয় প্রজাতির বানরজাতীয় প্রাণী। বিশ্বে বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের দেখা মেলে এই উদ্যানে। রয়েছে মুখপোড়া বানর, লজ্জাবতী বানর, লম্বালেজি বানর ও কুলু বানর। উদ্যানের টিকিট কালেকটর শাহীন বলেন, ‘আমরা টিকিট দেওয়ার সময় দর্শনার্থীদের মুখে মাস্ক থাকে। কিন্তু ভিতরে গিয়ে খুলে ফেললে আমাদের কিছু করার নেই।’ গবেষণায় মানুষ থেকে বন্য বানরজাতীয় প্রাণীতে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ছড়ানোর উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০০৬ সালে পাঁচ হাজার গরিলা মারা গেছে। ২০০৮ সালে তানজানিয়ায় শিম্পাঞ্জিতে নিউমোনিয়া রোগ দেখা দেয়। আর ২০১০ সালে আর্জেন্টিনায় দুই প্রজাতির হলার বানর ও ভারবেট বানরের মধ্যে ‘ইয়েলো ফেভার’ রোগ দেখা যায়। গবেষণাপত্রে এই করোনাকালে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা আইইউসিএনের বন্যপ্রাণীর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দল ও বানর বিশেষজ্ঞ দল মিলিত হয়ে মানুষের সঙ্গে বানরজাতীয় প্রাণীর সব ধরনের যোগাযোগ বা সংস্পর্শ বর্জন করার পাশাপাশি নিরাপদ দূরত্বে থাকার কথা বলা হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, যে প্রাণীরা মানুষের কাছাকাছি আসবে তাদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তো থাকবেই। আর যদি একবার আক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে এটাকে আর থামানো যাবে না। তাই দর্শনাথীদের একটা নিয়মের মধ্য রাখতে হবে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে। দর্শনার্থীদের জন্য ভ্রমণের জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া এক দিন খোলা এক দিন বন্ধ রাখা যেতে পারে উদ্যান। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘লাউয়াছড়ায় পর্যটক প্রবেশ আমরা সীমিত করে দিয়েছি। বানরজাতীয় প্রাণীরা যাতে মানুষের সংস্পর্শে না আসতে পারে এ বিষয়টি আমরা দেখছি।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে