করোনাভাইরাস মহামারীতে দীর্ঘ হচ্ছে চিকিৎসকদের মৃত্যুর মিছিল। গতকাল ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ কুমিল্লার গাইনি অ্যান্ড অবস কনসালট্যান্ট ডা. আইরীন পারভীন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১১৩ জন চিকিৎসক। তবে এ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ডা. আইরীন পারভীনের মৃত্যুর বিষয়টি আমরা জেনেছি। তার পরিবার ও হাসপাতালে কথা বলে মৃত্যুর কারণ করোনা কিনা তা আমরা জানব। এরপর তালিকাবদ্ধ করব। এ পর্যন্ত করোনায় ১১৩ জন চিকিৎসক মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত শুধু ক্ষতিপূরণের ৫০ লাখ টাকা পেয়েছেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া প্রথম চিকিৎসক ডা. মঈন উদ্দিনের পরিবার।
বিএমএ সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. একেএম শামসুল হক। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন। তিনি ঢাকার ইমপালস হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। এর আগে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক শেখ শাহজাহান আলী ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান।
বিএমএর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী (গত ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত) দেশে স্বাস্থ্যসেবা খাতের ৮ হাজার ১২৫ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসক ২ হাজার ৮৭৬ জন, নার্স ১ হাজার ৯৭৩ জন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ৩ হাজার ২৭৬ জন। গত ২৩ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কোনো সরকারি কর্মকর্তা মারা গেলে ২৫-৫০ লাখ টাকা পাবেন। আর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে পাবেন ৫-১০ লাখ টাকা। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ যে কেউ সরকারি নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হলে বা মারা গেলে গ্রেড ভেদে এ টাকা পাবেন।
গ্রেড ভেদে ক্ষতিপূরণ উল্লেখ করে এতে বলা হয়েছে, ১ম-৯ম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন ১০ লাখ টাকা। মারা গেলে পাবেন ৫০ লাখ টাকা। ১০-১৪তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন সাড়ে ৭ লাখ টাকা। মারা গেলে পাবেন সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। ১৫-২০তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাঁচ লাখ আর মারা গেলে ক্ষতিপূরণ পাবেন ২৫ লাখ টাকা। ২০১৫-এর বেতনস্কেল অনুযায়ী এ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এই অর্থ দেওয়া হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ করা করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় ক্ষতিপূরণ খাত থেকে। এ জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে। আর এ জন্য ৮০০ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে।
ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা চিকিৎসকেরা কোনো প্রণোদনা চাইনি। আমরা শুধু প্রটেকশন ও থাকার জায়গা চেয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী নিজেই ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছেন। তাই আমরা মনে করি ক্ষতিপূরণের টাকা দ্রুত পেলে চিকিৎসকদের কাজে মনোবল বাড়ত। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু নির্দেশনা দিয়েছেন তাই আমরা আশা করছি মৃত চিকিৎসকদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে।’