স্তন ক্যান্সার নতুন কিছু কারণ

0
51

এখন স্তন ক্যান্সারের নতুন কিছু কারণে সচেতন ও সতর্কতা থাকাটা এখন জরুরি বেশি হয়ে পড়ছে। বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও এর প্রকোপ বেশি বেড়ে গেছে। ইদানীং এর কারণের ধরনও কিছুটা পাল্টেছে।  আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ভেজাল খাবার দাবার ও সঠিক জীবনযাত্রার বিঘেœর কারণেই এর মাত্রাটা বেড়ে যাচ্ছে বলে এক গবেষণায় দেখা যায়। তাই সচেতনতা তৈরি করতে  হবে।
অক্টোবর মাসেও স্তন ক্যান্সার সচেতনতা করা হয়েছে। বছরে কোন না কোনো এমন কিছু সচেতনতার পর্ব  থাকছেই। তাই সবাইকে এখন বেশি বেশি সচেতন করে তোলতে হবে। নতুবা এর প্রকোপ বেড়েই যাবে। এবং  মহিলাদের মধ্যে এই ক্যান্সার প্রথম স্থানে বিদ্যমান। মুশকিল হচ্ছে  বেশিরভাগ রোগীই  ডাক্তারের কাছে যান দেরিতে।

শুরুর দিকে স্তনে বা বগলে ব্যথাহীন চাকা ছাড়া আর কোনো উপসর্গ না থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য লক্ষ্মণগুলো ভিন্ন চরিত্রে  প্রকাশ পেয়ে থাকে। স্তনের এসব পরিবর্তন একজন নারী নিজে নিজেই বা তার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী অনুভব করতে পারেন লজ্জা না রেখে। তখন  চিকিৎসক  অধিকাংশ পরিবর্তন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ দ্বারা শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং ম্যামোগ্রাম বা আল্ট্রাসাউন্ডের মতো ইমেজিং পদ্ধতির মাধ্যমেই শনাক্ত করতে পারেন।

উপসর্গ সমূহ :
* স্তনে/ বগলে এক বা একাধিক চাকা অনুভূত হওয়া।
* আগে অনুভূত হওয়া কোন চাকা ছোট বড় হওয়া
* স্তনের যেকোনো জায়গায় চামড়া, লাল দেখা।
* স্তনবৃন্তের আকৃতি ভিতরে দেবে যাওয়া।
* স্তনবৃন্ত  কোন তরল নিঃসরণ হওয়া (রক্ত বা রক্ত মিশ্রিত পানি)  উপরের যেকোন এক বা একাধিক উপসর্গ অথবা স্তনের অন্য কোনো পরিবর্তনে নারী নিজে অথবা তার  চিকিৎসক যেই-ই বুঝতে পারুক না কেন পরিবর্তনটি সঠিকভাবে নির্ণয় করার জন্য  চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা একান্ত জরুরি।
চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে পরিবর্তনটি স্তন ক্যান্সার কি না তা নির্ণয় করবেন। মনে রাখবেন,
শুরুতেই পড়লে ধরা; ক্যান্সার রোগ যায় যে সাড়া। তখন  রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করে দেখতে হবে অস্বাভাবিক কোনো পরিবর্তন চোখে পড়ে কি না।
কারণ ও ঝুঁকি :
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা জানা সম্ভব হয় না যে, ঠিক কি কারণে তাদের ক্যান্সার হয়েছে। ইজঈঅ১ এবং ইজঈঅ২ জিন মিউটেশনকে স্তন ক্যান্সারের কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই জিন মিউটেশন মা বাবা থেকে তাদের বাঁচ্চাদের শরীরে স্থানান্তরিত হতে পারে।  যা হোক, স্তন ক্যান্সারের সাথে যুক্ত কিছু নির্দিষ্ট রিস্ক ফ্যাক্টর বা ঝুঁকির কারণ রয়েছে।
ঝুঁকি সমূহকে অপরিহারযোগ্য ও পরিহারযোগ্য এই দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়।
অপরিহারযোগ্য ঝুঁকি সমূহ :
লিঙ্গ: সাধারণভাবে স্তন ক্যান্সার কেবল মাত্র মহিলাদের হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হলেও এটা পুররুষদেরও হয়ে থাকে। তবে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের প্রায় ১০০ গুণ বেশি ঘটে।
কোন্ বয়সে ঝুঁকি :
বয়স বৃদ্ধির সাথে একজন মহিলার স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। ৪০ বছরের কম বয়সী মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের হার কম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলাদের কেবলমাত্র ৪ শতাংশের বয়স ৪০-এর নিচে। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হার ৪০ বছর বয়সের পরে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং ৭০ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের মধ্যে সর্বোচ্চ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রমণাত্মক স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে দুইজন ৫৫ বছর বয়সের অধিক।

জাতি: জাতিভেদে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমবেশি হয়। অন্যান্য জাতির তুলনায় ককেশীয় মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার আক্রান্তের হার বেশি।
পারিবারিক ইতিহাস এবং জেনেটিক ফ্যাক্টর: যদি কোনো মহিলার মা, বোন,  দাদি, নানি, ফুপু, খালার স্তন বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে তার স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ৪০ বছরের কম বয়সী একজন নিকটাত্মীয়ের স্তন ক্যান্সার থাকলে এই রোগের সম্ভাবনা বাড়ে।
ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের ইতিহাস: যদি কারও একটি স্তনে ক্যান্সার ধরা পড়ে, তাহলে ভবিষ্যতে অন্য স্তনে ক্যান্সার ধরা পড়ার ঝুঁকি থাকে।
ঋতুস্রাব এবং সন্তান জন্মদান :
অল্প বয়সে (১২ বছরের কম) ঋতুস্রাব শুরু“হওয়া, অধিক বয়সে মেনোপজ (৫৫ বছর এর পরে) শুরু হওয়া, অধিক বয়সে প্রথম সন্তান জন্ম দেওয়া, অথবা সন্তান একেবারেই না হওয়া ইত্যাদিতে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
জেনেটিক পলিমরফিজম:
কিছু জিনের জেনেটিক পলিমরফিজমের কারণে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমবেশি হয়। এই জেনেটিক পলিমরফিজমের কারণে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে এমনকি একই জনগোষ্ঠীর বিভিন্নজনের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা কমবেশি হয়।
পরিহারযোগ্য ঝুঁকি সমূহ :
অপর্যাপ্ত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ:
তুলনামূলকভাবে কম শারীরিক শ্রমের সাথে অলস জীবনযাপন স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
অতিরিক্ত ওজন বা স্থ’ূলতা :
শারীরিক  বা অতিরিক্ত ওজন স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। মেনোপজের পরবর্তী সময়ে এই ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ইস্ট্রোজেন হরমোন উৎপাদন করে, যা ক্যান্সারের সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
খাদ্যাভ্যাস: খাদ্যতালিকায় শাকসবজি বা ফলমূলের চাইতে চর্বি ও প্রাণিজ আমিষ বেশি থাকলে এবং প্রসেসড ফুড বেশি খেলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
অ্যালকোহল পান :
ঘন ঘন অ্যালকোহল সেবন স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
সন্তান গ্রহণ ও ব্রেস্টফিডিং :
যারা দেরিতে সন্তান গ্রহণ করে, একেবারেই সন্তান জন্ম দেয় না, বা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ায় না তাঁদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।
বুকে রেডিয়েশন থেরাপি :
তিরিশ বছর বয়সের পূর্বে বুকে রেডিয়েশন থেরাপি নিলে,
জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পিল খেলে বা হরমোন ইনজেকশন নিলে।
কম্বাইন্ড হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এইচআরটি) :
মেনোপজের জন্য নির্ধারিত যৌথ হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি গ্রহণ করলে, স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। তবে
প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণ করা গেলে এবং  চিকিৎসা দ্রুত চালিয়ে গেলে প্রায় পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য হয়।

 

লেখক: অধ্যাপক, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ
বিভাগীয় প্রধান, রেডিওথেরাপি বিভাগ
 ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। 
 চেম্বার-ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার।
২৬, গ্রীন রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে