হেপাটাইটিস সি–কে বলা হয় নীরব ঘাতক। বিশ্বে যকৃতের সিরোসিস ও যকৃতের ক্যানসারের অন্যতম কারণ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সংক্রমণ। বিশ্বজুড়ে সাত কোটির বেশি মানুষ এ ভাইরাসের সংক্রমণজনিত জটিলতার শিকার বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত। দেশে দিনে দিনে এ ভাইরাসে আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে।
হেপাটাইটিস সি-তে আক্রান্ত হলে যা হয়
শরীরে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে তা ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে যকৃতে স্থায়ী প্রদাহ তৈরি করে। একে বলে ক্রনিক হেপাটাইটিস সি। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে রোগের কোনো লক্ষণ থাকে না বললেই চলে। কিন্তু পরবর্তী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে এই রোগীদের প্রায় অর্ধেকই লিভার সিরোসিসের মতো মারাত্মক জটিলতায় আক্রান্ত হয়। অনেকেরই পরবর্তীকালে লিভার ক্যানসার দেখা দেয়, যার পরিণতি মৃত্যু। হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী অ্যালকোহল কিংবা মাদক সেবন করলে সিরোসিস কিংবা লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি বহুলাংশে বেড়ে যায়।
হেপাটাইটিস সি ছড়ায় যেভাবে
হেপাটাইটিস সি ভাইরাস মূলত ছড়ায় দূষিত রক্তের মাধ্যমে। এ ছাড়া আরও কিছু উপায়ে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এর মধ্যে শিরাপথে মাদক সেবন, অনিরাপদ অস্ত্রোপচার, কান-নাক ফোঁড়ানো, খতনা ও উলকি বা ট্যাটু আঁকার কাজে অনিরাপদ যন্ত্রপাতির ব্যবহার, কিডনি বিকল হওয়া রোগীর ডায়ালাইসিস করানোর সময়, দাঁতের চিকিৎসায় অনিরাপদ যন্ত্রপাতির ব্যবহার, অনিরাপদ ও অরক্ষিত যৌন মিলন, হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত গর্ভবতী থেকে গর্ভজাত শিশুতে, একই টুথব্রাশ, শেভিং রেজার, ব্লেড একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার অন্যতম।
সংক্রমণ শনাক্ত করা যায় যেভাবে
বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হেপাটাইটিস সি শনাক্তকরণ পরীক্ষার আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। এসব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে স্বল্প খরচে এবং বিশেষ ক্ষেত্রে বিনা মূল্যে হেপাটাইটিস সি-এর শনাক্তকরণ পরীক্ষা করানো যায়। অ্যান্টি এইচসিভি ও হেপাটাইটিস সি ভাইরাস আরএনএ (পিসিআর টেস্ট) পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সংক্রমণ রয়েছে কি না, তা শনাক্ত করা যায়।
চিকিৎসা
হেপাটাইটিস সি-এর কার্যকর কোনো ভ্যাকসিন বা টিকা নেই। এত দিন এই রোগের প্রধান ওষুধ ছিল একধরনের বিশেষ ইনজেকশন, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এতে হেপাটাইটিস সি নিরাময়ের হারও কম। তবে বর্তমানে মুখে খাওয়ার ওষুধ (ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল) পাওয়া যায়, যা সহজলভ্য ও তুলনামূলক সাশ্রয়ী। এই নতুন ওষুধের কল্যাণে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস নিরাময়ের সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশের বেশি।
হেপাটাইটিস সি প্রতিরোধে সচেতনতা
- নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন নিশ্চিত করা।
- রক্ত দেওয়ার আগে রক্তদাতার হেপাটাইটিস সি পরীক্ষা করানো।
- এক সিরিঞ্জের একাধিক ব্যবহার পরিহার করা।
- অস্ত্রোপচারে জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতি ও সুচ-সুতার ব্যবহার।
- অন্যের ব্যবহার করা টুথব্রাশ, ব্লেড, শেভিং রেজার ইত্যাদি ব্যবহার না করা।
- নাক-কান ফোঁড়ানো, খতনা, ট্যাটু বা উলকি আঁকার কাজে জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতির ব্যবহার।
- হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত মায়ের গর্ভজাত সন্তানের জন্য যথাযথ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা।
- অনিরাপদ ও অরক্ষিত যৌন মিলনে বিরত থাকা।