ইমেরিটাস অধ্যাপক হলেন দেশের বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ। সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সিন্ডিকেট সভায় তাকে ইমেরিটাস অধ্যাপক মনোনীত করা হয়। পরে তা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।
অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য। এবার তার নামের সঙ্গে নতুন যোগ হল ইমিরেটাস অধ্যাপক।
উচ্চশিক্ষায় অধ্যাপনা পেশায় এটি একটি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন পদ বা পদবি ইমিরেটাস অধ্যাপক। অবসরপ্রাপ্ত স্বনামধন্য অধ্যাপকের জীবদ্দশায় শিক্ষা ও গবেষণায় অসামান্য অবদান এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ এ সম্মানজনক পদ বা পদবি দেওয়া হয়।
জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার হালিয়াবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ, এরপর শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান।
অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পর মধ্যপ্রাচ্যে ভালো বেতনে চাকরির সুযোগ পেলেও ফিরে আসেন জন্মভূমিতে। দেশে এসে ১৯৯২ সালে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মেডিসিন কনসালট্যান্ট হওয়ার সুযোগ পান। সেখানে দুই বছর কাটান। এরপর ১৯৯৫ সালে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে তৎকালীন পিজি (বর্তমানে শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) হাসপাতালে যোগদান করেন। পরবর্তীতে এর নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) দেওয়া হয়। এখানেই তিনি অধ্যাপক হলেন। তিনি পরপর তিনবার বিএসএমএমইউতে নির্বাচিত ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে তার জ্ঞান বিতরণের এ পর্যন্ত অর্ধডজন বই লিখেছেন। তার বই এখন দেশের প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। বইগুলো ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তানেও যথেষ্ট জনপ্রিয়। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাতেও তার বইগুলো চলে।
অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ চিকিৎসাখাতে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৬ সালে একুশে পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। করোনাকালে জনসচেতনতার স্বীকৃতি ‘কভিড হিরো’ পুরস্কার পান। তিনি ‘শর্ট কেইস অব ক্লিনিক্যাল মেডিসিন’ বইয়ের জন্য ২০১৩ সালে ইউজিসি পুরস্কার পান। বাংলা একাডেমি থেকেও তাকে অনারি ফেলোশিপ দেওয়া হয়েছে।
জীবনের এতসব অর্জনে অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ মনে করেন, তার মা-বাবা, শিক্ষক, স্ত্রী ও সন্তানদের ত্যাগ, উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা কাজ করেছে। কিংবদন্তি এ চিকিৎসক ১৯৮১ সালে বিয়ে করেন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে করোনাভাইরাস পরবর্তী শারীরিক জটিলতা ও নিউমোনিয়ায় তার স্ত্রী অধ্যাপক মাহমুদা বেগম মারা যান।