করোনায় প্রায় সাড়ে চার লাখ মৃত্যু বাংলাদেশে

0
260

করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে যত লোকের মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারি হিসাবে বলা হয়েছে; প্রকৃত সংখ্যা এর প্রায় ১৫ গুণ। মহামারির দুই বছরে দেশে এ ভাইরাসের কারণে অতিরিক্ত ৪ লাখ ১৩ হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ল্যানসেট। এ হিসাবে কভিডে দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৪২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সরকারি তথ্য অনুযায়ী কভিড মহামারি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৫৯ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে গবেষকরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে এ মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, করোনায় সারাবিশ্বে মৃত্যু হয়েছে হিসাবের চেয়ে তিন গুণ। অর্থাৎ গত দুই বছরে ১ কোটি ৮২ লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে।

বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের শুরু থেকে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি হিসাবে করোনায় মারা গেছে ২৮ হাজার ১০০ জন। তবে এ সময় অতিরিক্ত ৪ লাখ ১৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ মহামারিতে। এই সংখ্যা ৩ লাখ ৪৭ হাজার থেকে ৫ লাখ ৪ হাজারের মধ্যে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতি লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে কভিডে ৯ দশমিক ২ জন মারা গেছে বলে বলা হলেও এ সময় অতিরিক্ত ১৩৪ দশমিক ৭ জন মারা গেছে। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত দেশে করোনা সংক্রমিত হয়ে ২৯ হাজার ১০৫ জনের মৃত্যু হলো। গবেষণায় দেখা যায়, করোনায় সাতটি দেশে বিশ্বের মোট মৃত্যুর অর্ধেক ঘটেছে। এগুলো হলো ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, মেক্সিকো, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান। ভারতে সরকারি পরিসংখ্যানের চেয়ে ৪১ লাখ বেশি মারা গেছে। করোনায় বিশ্বে যত মানুষ মারা গেছে, তার ২২ শতাংশই ঘটেছে ভারতে। তবে সরকারি হিসাবে দেশটিতে মৃত্যু ৫ লাখ ১৬ হাজারের কাছাকাছি।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ১৯১টি দেশ ও অঞ্চলের তথ্য বিশ্নেষণ করে করোনার সংক্রমণে মৃত্যু বেশি হওয়ার এ তথ্য দিয়েছেন। তারা বলেছেন, কিছু মৃত্যু ঘটেছে ভাইরাসের কারণে; আর কিছু মৃত্যু হয়েছে এর সঙ্গে সম্পর্কিত জটিলতায়। যেমন কারও শারীরিক সমস্যা থাকলে করোনা সংক্রমণের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে দেখা যায়।

মৃত্যুর সংখ্যা বের করতে গবেষকরা বিভিন্ন সরকারি ওয়েবসাইট, ওয়ার্ল্ড মরটালিটি ডেটাবেজ, হিউম্যান মরটালিটি ডাটাবেজ ও ইউরোপীয় পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য বিশ্নেষণ করেছেন। মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে তারা আগের ১১ বছরের পরিসংখ্যানের আশ্রয় নিয়েছেন। অতিরিক্ত মৃত্যুর সংখ্যায় দেশ ও অঞ্চলভেদে তারতম্য দেখেছেন তারা। তবে তাদের হিসাব অনুযায়ী, কভিডে বিশ্বে প্রতি ১ লাখে ১২০ জন মারা গেছে।

এ মহামারিতে মৃত্যুর হার বেশি ছিল লাতিন আমেরিকার স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে; পাশাপাশি ইউরোপ ও আফ্রিকার কিছু অঞ্চলেও। তবে ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো অধিক আয়ের দেশেও মৃত্যুহার অনেক বেশি ছিল। কভিডে মৃত্যুহারের দিক থেকে শীর্ষে থাকা পাঁচটি দেশ হচ্ছে বলিভিয়া, বুলগেরিয়া, এসওয়াতিনি, উত্তর মেসিডোনিয়া ও লেসোগো। সবচেয়ে কম মৃত্যুহার ছিল আইসল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড ও তাইওয়ানে।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে গত দুই বছরে করোনায় মৃত্যুসংখ্যা সরকারি হিসাবের কাছাকাছি ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি হিসাবে ৯ লাখ ৬০ হাজার মৃত্যুর কথা বলা হলেও প্রকৃত মৃত্যু ১১ লাখ ৩০ হাজারের কাছাকাছি। যুক্তরাজ্যে এ সময়ে ১ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ করোনা সংক্রমণে মারা গেছে। দেশটিতে প্রতি ১ লাখে ১৩০ জন এ রোগে মারা গেছে।

গবেষণা নিবন্ধের প্রধান লেখক ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের গবেষক হেইডং ওয়াং বলেন, মহামারিতে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা জানতে পারাটা জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুইডেন, নেদারল্যান্ডসসহ কয়েকটি দেশে চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ মৃত্যুর সরাসরি কারণ ছিল কভিড। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ জায়গার ক্ষেত্রে এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। সরাসরি কভিডে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তা বুঝতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

গবেষকরা আশা করছেন, টিকা ও নতুন চিকিৎসাব্যবস্থার কারণে করোনা মহামারি সম্পর্কিত মৃত্যু কমে যাবে। তবে মহামারি এখনও শেষ হয়নি বলে সতর্ক করেছেন তারা। গবেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের বিপজ্জনক নতুন ধরন আবার ছড়াতে পারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে