কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়া দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ কিডনি ব্যর্থতা হিসেবে পরিচিত। কিডনি দেহে থাকা বর্জ্য এবং অতিরিক্ত তরল প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ থাকলে দেহে বিপজ্জনক পরিমাণে তরল, ইলেকট্রোলাইট এবং বর্জ্য জমে যেতে পারে।
যদি কিডনি কাজ না করে তাহলে খাদ্য বর্জ্য রক্তে জমা হয়। তাই যাদের কিডনির অসুখ আছে তাদের অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট খ্যাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে। খাদ্যাভ্যাসে নিচের ছয়টি খাবার রাখলে তা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে :
১. রসুন
রসুন কোলেস্টরেল কমায়, প্রদাহকে প্রশমিত করে এবং এতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ দাঁতে কিছু জমা হওয়া রোধ করতে সাহায্য করে। গোটা রসুন কিংবা গুঁড়ো রসুন, যেভাবেই কিনুন না কেন, বিভিন্ন সুস্বাদু রেসিপিতে সহজেই তা যোগ করা যায়। ভাজা রসুনের মাথাও তরকারিতে যোগ করা যেতে পারে। কিডনি রোগীর খাদ্যাভ্যাসে রসুনের গুঁড়া বেশ ভালো কাজ করে এবং খাবারেও বেশ ভালো গন্ধ যোগ করে।
২. স্ট্রবেরি
স্ট্রবেরিতে প্রচুর পরিমাণে ফেনলের দুটি ভিন্ন রূপ অ্যান্থোসায়ানিন এবং এলাগিটানিন রয়েছে। স্ট্রবেরির লাল রং অ্যান্থোসায়ানিন দিয়ে তৈরি হয়। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীরের কোষের গঠন রক্ষা করতে এবং অক্সিডেটিভ ক্ষতি বন্ধ করতে সহায়তা করে। স্ট্রবেরি ফাইবার, ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ এবং অন্যান্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের একটি চমৎকার উৎস। স্ট্রবেরিতে ক্যান্সাররোধী এবং প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট্য থাকার পাশাপাশি এটি কার্ডিয়াক সুরক্ষাও দিতে পারে।
৩. আপেল
আপেল কোলেস্টরেল এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে ভূমিকা রাখা ছাড়াও হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে পারে। এ ছাড়া ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কমাতেও আপেল বেশ কার্যকর। এ ফলটি আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যই বেশ উপকারী। আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা কিডনি রোগে আক্রান্তদের জন্য চমৎকার কাজে দেয়।
৪. বাঁধাকপি
বাঁধাকপি ক্রুসিফেরাস উদ্ভিজ্জ পরিবারের একটি সবুজ শাক। এটি ফাইবার, ভিটামিন কে, সি এবং বি৬-এর পাশাপাশি বি ভিটামিন এবং ফলিক এসিডের একটি চমৎকার উৎস। এতে পটাসিয়ামের মাত্রা কম এবং দামে সস্তা হওয়ায় এটি কিডনি রোগীদের খাদ্যাভ্যাসে একটি ভালো সংযোজন হতে পারে।
৫. পেঁয়াজ
খাবারে সুঘ্রাণের জন্য অনেকেই রান্নাতে প্রধান উপাদান হিসেবে পেঁয়াজ ব্যবহার করেন। পেঁয়াজে কোয়ারসেটিনসহ প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে। তাই পেঁয়াজ খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমা ছাড়াও এটি বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এ ছাড়া পেঁয়াজ ক্রোমিয়ামের একটি বড় উৎস। এতে থাকা খনিজ কার্বোহাইড্রেট, চর্বি এবং প্রোটিনের বিপাক প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। এ ছাড়া এতে পটাসিয়াম কম থাকায় দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীদের জন্য এটি বেশ উপকারী।
৬. লাল ক্যাপসিকাম
লাল ক্যাপসিকাম বিভিন্ন কারণেই কিডনি রোগীর জন্য উপকারী। প্রথমত এতে পটাসিয়ামের পরিমাণ কম এবং এর স্বাদ দুর্দান্ত। সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি এই সবজিটি ফাইবার এবং ভিটামিন বি৬, সি, এ-এর একটি বড় উৎস। এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে পরিচিত লাইকোপেন রয়েছে, যা কিছু ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
আপনার কিডনির সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা পেতে এই খাবারগুলো খাদ্যাভ্যাসে যোগ করলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
সূত্র : এনডিটিভি