গর্ভাবস্থা এবং স্ট্রোক: মায়েরা কী ঝুঁকিতে আছেন?

যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ডাকোটার বাসিন্দা ব্রুক বার্গফেল্ড। ২০১৬ সালের এপ্রিলে তিনি নতুন মা হন। বেশ আনন্দেই ছিলেন। নতুন মা হওয়ার স্বাদ নিচ্ছিলেন।

কিন্তু প্রসবের এক সাপ্তাহ পরেই তিনি তীব্র মাথা ব্যথা অনুভব করেন। তিনি ধরে নিয়েছিলেন এটা মাইগ্রেনের ব্যথা। ফলে তেমন গুরুত্ব দেননি। এরপর লক্ষ্য করলেন তার হাতেও ব্যথা হচ্ছে। সেটাও মনে করেছিলেন বাচ্চা কোলে নিয়ে থাকেন বলে ব্যথা হচ্ছে। কিন্তু তার মা খেয়াল করেন, তার কথা জড়িয়ে আসছে  এবং মুখটা একটু ঝুলে গেছে। যেটি স্ট্রোকের লক্ষণ এর মধ্যে পড়ে। তাই দেরি না করে মেয়েকে নিয়ে হসপাতালে ছোঁটেন। ব্রুক বার্গফেল্ডের আসলে স্ট্রোক করেছিলে। তিনি বুঝতে পারেননি। এই যাত্রা বেঁচে গেলেও এখনো তাকে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এখানে মৃত্যুর ঝুঁকিও ছিল।

সম্প্রতি এমন একটি ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। যেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পাঁচ দিন পরেই স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনি। বাচ্চা জন্মের পর তিনি হাসি মুখেই বাড়ি ফিরে ছিলেন।  এটিকে বলা হয় পোস্টপার্টাম স্ট্রোক। তাই সন্তান জন্ম দেওয়ার পরেও মায়েদের যত্ন প্রয়োজন।

আমেরিকান একাডেমি অফ নিউরোলজির একটি  আর্টিকেলে বলা আছে, গর্ভাবস্থায় স্ট্রোকের ঝুঁকি স্বাভাবিক নারীর চেয়ে ৩ গুণ বেশি। আর প্রসব পরবর্তী  পোস্টপার্টাম সময়ে এই স্ট্রোকের রিস্ক সবচেয়ে বেশি। যে মায়েদের সিজার হয় সেই মায়েদের তুলনায় নরমালে প্রসব করে এমন মায়ের স্ট্রোকের ঝুঁকি কম।

যদিও বেশিরভাগ গর্ভবতী বা প্রসব পরবর্তী নারীদের ক্ষেত্রেই স্ট্রোকের ঝুঁকি নেই। খুব কম দেখা যায়। তবে বর্তমানে মায়েদের ঝুঁকি বেড়েছে। তাই সচেনতার প্রয়োজন।

গর্ভাবস্থায় স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে কোন অবস্থায়?

গর্ভকালীন সময়টাই চাপের মদ্যে দিয়ে যেতে হয়। আপনি তখন একা নন। আপনার শরীরের ভিতর আর একটি শরীর। সাধারণভাবেই আপনার হার্ট দুই জনের জন্য তখন কাজ করে। ফলে রক্তনালী ওপ চাপ পড়ে সাথে হার্টেও। হরমোনেরও পরিবর্তন হয়। আপনার শরীরকেও বহন করতে হয় ওজন। সবকিছু মিলিয়ে মাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। বয় না পেয়ে তাই সচেতেন থাকতে হবে। এতই ঝুঁকি কমিয়ে আনা যায়।

স্ট্রোকের কারণ :

** উচ্চ রক্তচাপ। উচ্চ রক্ত চাপই গর্ভাবস্থায় স্ট্রোকের প্রধান কারণ। আবার সম্প্রতি যারা প্রসব করেছে তাদের জন্য কিন্তু এটি সমান দায়ী।

** প্রিক্ল্যাম্পসিয়া খুবই মারাত্বক গর্ভাবস্থায়। এটিও এক ধরনের উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা। এটির কারণে চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা ব্যাথা, হাতে, পায়ে এবং মুখে পানি আসা, সময়ের আগে প্রসব করা, শিশুর ওজন কম থাকা প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার লক্ষণ। সবচেয়ে মারাত্বক হলো খিঁচুনি এবং যেটা স্ট্রোক পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। যারা প্রিক্ল্যাম্পসিয়া ভোগের পরবর্তী জীবনে নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগতে পারেন।

**গর্ভকালীন অবস্থায় যদি ডায়াবেটিস হয় তারাও স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকে।

** গর্ভাবস্থায় রক্ত ​​জমাট বাঁধার সম্ভাবনা বেশি থাকে ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে।

স্ট্রোকের লক্ষণ:

** হঠাৎ পায়ে অনুভূতি শক্তি কমে যাওয়া বা মুখ, হাত বা পা অবশ হয়ে যাওয়া। বিশেষ করে এক পাশে।

** কথা বলতে অসুবিধা, কিছু বোধে না আসা বা হঠাৎ চোখে কম দেখা।

** হঠাৎ হাঁটতে অসুবিধা, দর্বলতা, ভারসাম্য ঠিক না রাখতে পারা।

** প্রচন্ড মাথা ব্যথা হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়া।

সর্তকতা:

** গর্ভবস্থায় ধূমপান না করা।

** ওজন ঠিক রাখা।

** গর্ভকালীন অবস্থায় ডায়াবেটিস হলে ডাক্তারের পরামর্শে নিয়ন্ত্রণে রাখা।

** উচ্চ রক্ত চাপ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবন। প্রসবের পরেও উচ্চ রক্তচাপ থাকতে পারে তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা।

** স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া।

**  হঠাৎ দেখা দেয়া মাথা ব্যথা বা ঘাঁড় ব্যাথা কে অবশ্যই গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে। প্রসবের আগে এবং পরে।

** গর্ভকালীন এবং প্রসব পরবর্তী মা কে বাসায় একা না রাখা।

গর্ভাবস্থায় এবং বাচ্চা প্রসবের পরেও মায়েরা ঝুঁকিতে থাকে। বিশেষ করে গর্ভকালীন শেষ ৩ মাস এবং প্রসব পরবর্তী ১২ সপ্তাহ। তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করুন।

 

সূত্র : সেন্ট্রারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনসন ( সি ডি সি)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *