চুল পড়ে টাক হওয়ার কারণ
সাধারণত দৈনিক ১০০টা চুল পড়া স্বাভাবিক ধরা হয়ে থাকে। কিন্তু এর বেশি পড়া শুরু করলে সেটি চিন্তার বিষয়।
- বংশগত
- অতিরিক্ত স্ট্রেস
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
- অতিরিক্ত হেয়ার স্টাইল
- ভেজা চুল আঁচড়ানো
- অতিরিক্ত শ্যাম্পু করা
- শক্ত করে চুল বাঁধা
- গরম পানির ব্যবহার
প্রাকৃতিক কিছু উপায়ে টাক পড়া রোধ করা যেতে পারে। আজকে এই জাদুকরী উপায়গুলোর সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব।
যেভাবে টাক হওয়া রোধ করতে পারেন
১) ভিটামিন ই ক্যাপসুল
যা যা লাগবে
- ভিটামিন ই ক্যাপসুল ৭-৮টি
- নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- একটি ছোট পাত্রে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল নিন। এর সঙ্গে ই-ক্যাপসুল মিশিয়ে নিন।
- এই মিশ্রণটি চুলে ম্যাসাজ করে লাগান।
- এটি নিয়ে সারা রাত থাকুন।
- পরের দিন চুলে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
- সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করুন।
ভিটামিন-ই তে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ফ্রি রেডিক্যালের সঙ্গে লড়াই করে। এটি মাথার তালুর রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। নিয়মিত ব্যবহারের চুল পড়া রোধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
২) রোজমেরি অয়েল
যা যা লাগবে
- রোজমেরি অয়েল ২ ফোঁটা
- অলিভ অয়েল অথবা নারকেল তেল ২ টেবিল চামচ
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- নারকেল তেল, অলিভ অয়েল বা আমন্ড অয়েলের সঙ্গে রোজমেরি এশেনসিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন।
- এটি মাথার তালু ও চুলে ম্যাসাজ করে ব্যবহার করুন।
- চুলে ৩০ মিনিট রাখুন। তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
- সপ্তাহে দুইবার এটি ব্যবহার করুন।
কার্যকারিতা
রোজমেরি অয়েল রোজমেরি হার্ব থেকে তৈরি হয়। এই অয়েল মাথার কোষের বিভাজন করে, রক্তনালি প্রসারিত করে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। যা চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৩) ডিম
যা যা লাগবে
- ডিমের কুসুম ২টি
- অলিভ অয়েল পরিমাণমতো
- টকদই ১/৪ কাপ
- মেয়নেজ পরিমাণমতো
যেভাবে তৈরি করবেন
- দুটি ডিমের কুসুম ভালো করে বিট করে এর সঙ্গে পরিমাণমতো অলিভ অয়েল দিয়ে ভালো করে মেশান।
- এটি মাথাসহ সম্পূর্ণ চুলে ব্যবহার করুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিন।
- তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল শ্যাম্পু করে ফেলুন।
- এ ছাড়া একটি ডিম ও কোয়াটার কাপ টক দই এবং ১ টেবিল চামচ মেয়নেজ একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- এই মিশ্রণটি মাথার তালুসহ সম্পূর্ণ চুলে ব্যবহার করুন।
- এক ঘণ্টার পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
কার্যকারিতা
এটি কেরাটিন প্রোটিন দিয়ে চুল গজাতে সক্ষম। ডিম হলো প্রোটিনের অন্যতম একটি উৎস। যা চুলে পুষ্টি যুগিয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
৫) আমলকী
যা যা লাগবে
- নারকেল তেল
- আমলকী
যেভাবে তৈরি করবেন
- একটি পাত্রে কিছু পরিমাণ তেল গরম করুন। তেলের সঙ্গে কিছু পরিমাণ ড্রাই আমলকী দিয়ে দিন।
- আমলকীসহ তেল জ্বাল দিতে থাকুন।
- কিছুটা জ্বাল হয়ে এলে ঠাণ্ডা করে ছেঁকে নিয়ে তেল মাথার তালুতে ম্যাসাজ করে ব্যবহার করুন।
- ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
কার্যকারিতা
চুল পড়া রোধে আমলকী বেশ কার্যকর। এমনকি অল্প বয়সে চুল পাকাও রোধ করবে আমলকী তেল।
৫) মেথি
যা যা লাগবে
- মেথি ১ কাপ
- নারকেল তেল পরিমাণমতো
যেভাবে তৈরি করবেন
- এক কাপ মেথি কমপক্ষে চার ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন।
- মেথি পানি থেকে তুলে তারপর পেস্ট করে নিন।
- প্যাকটি চুলে দেওয়ার আগে চুলে তেল দিয়ে নিন। তারপর মেথির প্যাকটি ব্যবহার করুন।
- এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
- এই প্যাকটি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারবেন।
কার্যকারিতা
নতুন চুল গজাতে মেথি বেশ কার্যকর। এতে রয়েছে প্রোটিন এবং লেসিথিন উপাদান, যা চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখে এবং চুলকে মজবুত করে তোলে।
৬) লেবুর রস
যা যা লাগবে
- লেবু ১টি
- নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল ২ টেবিল চামচ
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- একটি পাত্রে দুই টেবিল চামচ নারকেল বা অলিভ অয়েলের সঙ্গে এক টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন।
- এই মিশ্রণটি মাথার তালু ও চুলে ব্যবহার করুন।
- চুলে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট রেখে দিন।
- এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
কার্যকারিতা
লেবুর রসে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, বি১৩, ফলিক এসিড ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। লেবুর রস খুশকি কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এটি মাথার তালুতে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে!
এ ছাড়া চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করতে পারে পুদিনার তেল। এই তেল মাথার ত্বকে রক্ত প্রবাহকে উদ্দীপিত করে। সঙ্গে রয়েছে অ্যালোভেরা। এটি প্রশান্তিদায়ক বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এটি খুশকি কমাতে ও চুলের ফলিকলকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করতে পারে। সপ্তাহে কয়েকবার অ্যালোভেরা জেল ৩০ মিনিটের জন্য চুলে লাগিয়ে রাখুন। তা ছাড়া একটি পেঁয়াজ ব্লেন্ড করে এর রস ২০ মিনিটের জন্য প্রয়োগ করুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
শুধু হেয়ার প্যাক ব্যবহার করলেই হবে না। সুষম খাদ্যাভ্যাসও নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যকর চুল বজায় রাখতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চুল প্রধানত প্রোটিন দিয়ে তৈরি। তাই চর্বিহীন মাংস, ডিম, মটরশুঁটি ও বাদাম রাখুন খাদ্য তালিকায়। আয়রনের অভাবে চুল পড়তে পারে। পালং শাক, মসুর ডাল ও লাল মাংসের মতো আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান। খাদ্য তালিকায় ফল, সবজি ও গোটা শস্য অন্তর্ভুক্ত করুন।
চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য হাইড্রেটেড থাকা অপরিহার্য। সারাদিন পানি ও পানিজাতীয় খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া জরুরি। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ চুল পড়ার ঝুঁকি বাড়ায়। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কৌশল যেমন ব্যায়াম, মেডিটেশন এবং যোগব্যায়াম অনুশীলন করুন।