টিউমার ও ক্যান্সারের মধ্যে পার্থক্য কী?

0
346
7 year old female patient speaking with her paediatrician in a doctors office, both are wearing masks due to the new COVID-19 regulations and to avoid the transfer of germs.
Spread the love

টিউমার শব্দটি শুনলে লোকে ভাবে ক্যান্সার, আবার ক্যান্সার শুনলে লোকে ভাবে টিউমার।  যেমন লোকে বলে- ব্রেইন টিউমার হয়েছে, কিংবা ব্রেইন ক্যান্সার হয়েছে! কিন্তু দুটোই কি একই! মোটেও নয়।  যেমনটা ব্রেস্ট টিউমার কিংবা ব্রেস্ট ক্যান্সার, দুটো একই নয়।

টিউমার হলো কিছু অস্বাভাবিক টিস্যুর সমাবেশ, যেখানে কোষগুলো অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সংখ্যা বৃদ্ধি করে। টিস্যু মানে একই ধরনের কিছু কোষ, যখন কোথাও এক হয়ে একই ধরনের কাজ করে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ডা. অপূর্ব চৌধুরী।

আমাদের শরীরে বিলিয়ন নয়, ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কোষ আছে। ধরা হয় একজন প্রাপ্তবয়স্কের দেহে গড়ে ত্রিশ ট্রিলিয়নের মতো কোষ থাকে। জন্মের সময় এ সংখ্যা চার শতাংশের এক শতাংশ থাকে। কোষের ভেতর কিছু নিয়মে পুরনো কোষ মরে যায়, নতুন কোষ জন্ম নেয়, আবার কিছু কোষ সাইজে বাড়ে, কিছু কোষ সংখ্যায় বাড়ে। কিন্তু কোন কোষ মরে যাবে এবং কোন কোষ কতগুলো নতুন কোষ জন্ম দিতে পারবে, কোন কোষের সাইজ কেমন হবে, কোষের এমন সব বৈশিষ্ট্যকে নিয়ন্ত্রণের জন্য কোষের ভেতর কিছু নির্দেশ বা নিয়ম থাকে। আর সে নিয়মগুলো থাকে ডিএনএতে। কোনো কারণে ডিএনএ-এর মধ্যে থাকা এ নির্দেশ প্রক্রিয়া পরিবর্তন হয়ে গেলে কোষগুলো তখন অস্বাভাবিকভাবে নতুন কোষের জন্ম দিতে থাকে, পুরনো কোষ মরে না গিয়ে হযবরল ঘুরতে থাকে, অথবা নতুন জন্ম নেওয়া কোষগুলো কাজবিহীন ঘুরে বেড়ায়।

কারণ কোষগুলোতে কোথায় গিয়ে থামতে হবে তার নির্দেশ থাকে না, কী কাজ করবে তার নির্দেশটি পরিবর্তন হয়ে যায়। তখন পরিবর্তিত ডিএনএ-এর নির্দেশে রোবটের মতো একের পর এক নতুন কোষের জন্ম দিতে থাকে, নতুন অস্বাভাবিক কোষের সংখ্যা বেড়ে বেড়ে স্বাভাবিক কোষের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়, বুড়ো কোষগুলোর পটোল তোলার প্রক্রিয়া থেমে গিয়ে আবর্জনার মতো জমা হতে থাকে শরীরে।

তখন শরীরের অতিরিক্ত এবং অস্বাভাবিক এ কোষগুলো কোথাও জমা হয়ে একটি লাম্প বা প্লি বা চাকতির মতো হয়ে প্রকাশ পেলে তাকে তখন টিউমার বলে।

এ টিউমার দু’ধরনের হয়। এক ধরনের টিউমার শুধু এক জায়গাতে বৃদ্ধি পেয়ে এক জায়গাতেই বসে থাকে। এদের বলে বিনাইন টিউমার। এরা তেমন ক্ষতিকারক নয়। আরেক প্রকার টিউমারের ভেতর থাকা অস্বাভাবিক কোষগুলো রক্ত কিংবা লিম্ফ্ নামক কিছু রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে শরীরের অন্য কোনো অংশে গিয়ে জমা হয়ে সেই অংশের স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটায়, নতুন কোনো টিউমার তৈরি করে সেখানে, তখন তাদের বলে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। এ ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকে অন্যভাবে বলে ক্যান্সারাস টিউমার। কাজের সুবিধায় সংক্ষেপে ক্যান্সার বলে।

আমাদের শরীরে প্রায় ২০০ ধরনের ক্যান্সার জাতীয় সমস্যা আছে। ক্যান্সার হলো মূলত শরীরের অনেক জায়গায় বিভিন্ন সমস্যার একটি সমষ্টি। এর শুরুটা শরীরের কোনো একটি অংশে হয়। তারপর যখন সেটি শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে, কেবল তখন তাকে ক্যান্সার বলে।

টিউমারের মধ্যে থাকা অস্বাভাবিক কোষগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে গিয়ে কখনো নতুন টিউমার হতে পারে, কখনো কেবল সেখানকার অন্য কোষগুলোর কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এমন করে না ছড়িয়ে পড়া বিনাইন টিউমারগুলো যখন শরীরের অন্য কোথাও ছড়িয়ে গিয়ে সমস্যা তৈরি করে, সেই ম্যালিগন্যান্ট টিউমারগুলোই মূলত বেশিরভাগ ক্যান্সারের জন্য দায়ী বলে, তখন তার তৈরি করা সমস্যাগুলোকে সহজ করে কেবল ক্যান্সার বলে। এ ক্ষেত্রে যে অঙ্গ বা অংশ থেকে কোষের পরিবর্তনের শুরু, তখন তাকে ওই পার্টের ক্যান্সার বলে।

আবার কিছু ব্যতিক্রম আছে। যেমন- ব্লাড ক্যান্সার, লিউকেমিয়া। এক্ষেত্রে রক্তের স্বাভাবিক কোষগুলোর চেয়ে অস্বাভাবিক কোষগুলো রক্তে বেশি থেকে রক্তকে তার স্বাভাবিক কাজ করতে দেয় না, রক্তে কোনো আলাদা টিউমার দেখা দেয় না।

তারমানে সব টিউমার ক্যান্সার নয়, কিছু কিছু টিউমার কেবল ক্যান্সার, যখন সেই টিউমারগুলোর মধ্যে থাকা কোষগুলো শরীরের অন্য অংশে গিয়ে আরও নতুন টিউমার বা কাজে সমস্যা তৈরি করে। আবার সব ক্যান্সার টিউমার নয়, যেখানে অস্বাভাবিক কোষগুলো টিস্যু আকারে কোথাও জমাট বেঁধে প্রকাশ পায়। যেমন ব্লাড ক্যান্সারে এমন টিউমার হয় না।

অনেক মহিলার ব্রেস্টে জীবনের যে কোনো সময়ে লাম্প বা চাকতির মতো বা পিণ্ডের মতো কিছু দেখা দিতে পারে। এ বাড়তি প্লিটি কেবল একটি টিউমার হতে পারে। এটিকে ভুল করে ব্রেস্ট ক্যান্সার বলা যাবে না। কারণ চিকিৎসকরা এমন বাড়তি কোষের সমাবেশ কোথাও হলে প্রথমে তার সিটি স্ক্যান কিংবা এমআরআই করে নিশ্চিত হন এটি কেবল টিউমার কিনা। তারপর সেখান থেকে কিছু কোষ বায়োপসির নামক পরীক্ষার মাধ্যমে মাইক্রোস্কোপের নিচে রেখে কোষগুলো পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন কোষগুলো ক্যান্সার জাতীয় কোষ কিনা, তখন তেমন পরিবর্তন দেখলে তাকে ব্রেস্ট ক্যান্সার বলা যায়। শুধু এমন টিউমার হলে প্রথমে কেবল ওষুধ দিয়ে, তারপর অপারেশন করে সেই বাড়তি অংশটি কেটে ফেলে টিউমারের চিকিৎসা করা হয়। সেই টিউমার যদি শরীরের অন্য কোথাও ছড়িয়ে যায়, শরীরে আরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি করে, তখন যে অংশে টিউমারটি হয়েছে সেটি প্রথমে অপারেশন করে কেটে ফেলার দরকার বা অবস্থায় থাকলে কেটে ফেলে দিতে হয়, সঙ্গে শরীরের অন্য অংশগুলোতে ছড়িয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক ক্যান্সার কোষগুলোকে মেরে ফেলা অথবা তারা যাতে আর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে না পারে, সেটা থামিয়ে দেওয়ার জন্য কিছু কেমিক্যালের মাধ্যমে কেমোথেরাপি এবং কিছু রে বা রশ্মির মাধ্যমে রেডিওথেরাপি দিয়ে ক্যান্সারটির চিকিৎসা করার চেষ্টা করা হয়। এখন নিশ্চয়ই কারও টিউমার হলেই ক্যান্সার হয়েছে, এমনটি বলবেন না এবং ভাববেনও না। বর্তমানে দুটোরই চিকিৎসা আছে। টিউমার বা ক্যান্সার হওয়া মানেই সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু নয়। ক্যান্সার বা টিউমার শরীরের অন্য হাজার রোগের মতোই একটি রোগ বা সমস্যা। বরং শরীরের কোথাও এমন বাড়তি কোন মাংস প্লি, কোনো কারণ ছাড়াই অনেকদিন ধরে অস্বাভাবিকভাবে শরীরের ওজন কমে যাওয়া, দীর্ঘদিন কোনো কারণ ছাড়াই দীর্ঘ সময় দুর্বল অনুভব করা, এমন সব কমন কিছু সমস্যার মুখোমুখি হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে