ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের কর্তাব্যক্তিরা বিভিন্ন কর্মসূচির কথা বললেও মশাবাহিত জ্বরটিতে স্মরণকালের ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজধানীতে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর ৬০ শতাংশই রাজধানী ঢাকায়। এখানে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৩০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে দেশের ৬৪ জেলাতেই। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি রোগী চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মাদারীপুর, কুমিল্লা ও গাজীপুরে। বছরের শুরু থেকেই এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে কার্যকর কর্মসূচি নেওয়ার জন্য বলা হলেও তা নিশ্চিত করতে পারেনি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। যদিও দুই করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দাবি, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত লার্ভা ধ্বংস, এডিস মশানিধনে চিরুনি অভিযানসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শে এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে এ বছরই দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ ২৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সব জেলাতে এখন স্থায়ী হয়েছে ডেঙ্গু। যে কারণে আপাতত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এলেও একবারে যাবে না। সারা বছর এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করার কর্মসূচি চালাতে হবে।
কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গুর নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ডিসেম্বরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমে আসবে এর প্রকোপ। তবে এর মধ্যে যদি আবার বৃষ্টি হয় তাহলে ডেঙ্গু ফের বাড়বে। সারা বছরই সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনা চালু রাখতে হবে। এ জন্য যেমন লোকবল বাড়াতে হবে, তেমনি অভিজ্ঞ লোকদের সমন্বয়ে কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, একই কীটনাশক বেশিদিন ব্যবহার করলে মশার কাছে তা সহনীয় হয়ে যায়। এ জন্য কীটনাশক ব্যবহারে নিয়মিত পরীক্ষা করা দরকার।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান বলেন, বছরে দু-একদিন বাদে সারা বছর এডিস মশা নির্মূলে কর্মসূচি চলমান থাকে ডিএনসিসিতে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় সু-ব্যবস্থাও রেখেছে সিটি করপোরেশন।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর ডেঙ্গুতে এ নিয়ে ২৪৭ জনের মৃত্যু হলো। মাসের হিসাবে গত অক্টোবরে সর্বোচ্চ ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তবে নভেম্বরের ২৭ দিনেই ১০৬ জনের মৃত্যু সেই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
বিভাগভিত্তিক হিসাবে বরাবরের মতো এ বছরও সবচেয়ে বেশি ১৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। তাদের মধ্যে ১৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন হাসপাতালে। ঢাকার পর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এ বিভাগে এখন পর্যন্ত ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে শুধু কক্সবাজারেই মারা গেছে ২৫ জন। এ বছর ডেঙ্গুতে মৃতদের বড় অংশই শিশু। গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
এতে বলা হয়, চলতি বছর দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ১৩০ জনে। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩৫ হাজার ৮০৫ আর ঢাকার বাইরে ২০ হাজার ৩২৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫২৩ রোগী। বর্তমানে দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ১ হাজার ৯২৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন।
২০০০ সালে দেশে প্রথম ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ওই বছর ডেঙ্গুতে মারা যান ৯৩ জন। এরপর ডেঙ্গুর সবচেয়ে প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ২০১৯ সালে। সরকারি হিসাবে ওই বছর মৃত্যু হয় ১৬৪ জনের। করোনা মহামারি শুরুর বছর ২০২০ সালে মারা যান ৭ জন এবং গত বছর মৃত্যু হয় ১০৫ জনের।